গাড়িচাপায় বুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন আসামিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজির করা হয়, ছবি : সংগৃহীত
জাতীয়
বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিমের মৃত্যু

প্রাইভেট কারের চালকসহ দুজনের শরীরে অ্যালকোহল পাওয়া গেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে সংকেত পাওয়ার পর পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে দাঁড়িয়েছিলেন মোটরসাইকেল আরোহী তিন বন্ধু। তারা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন তারা। ঠিক এমন সময় পেছন থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি প্রাইভেট কার ধাক্কা দেয় তাদের। ঝড়ের গতিতে ছিটকে পড়েন তিনজন। ঘটনাস্থলেই মারা যান মুহতাসিম মাসুদ। গুরুতর আহত হন মেহেদী হাসান ও অমিত সাহা।

বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে পূর্বাচল ৩০০ ফিট নীলা মার্কেট (কুড়িল-কাঞ্চন সড়ক) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় প্রাইভেট কারের চালক মুবিন আল মামুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মুবিন (২০) রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার বাসিন্দা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে।

গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন ওই গাড়িতে থাকা মিরপুর এলাকার রিজওয়ানুল করিমের ছেলে মিরাজুল করিম (২২) ও উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের বাহাউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আসিফ চৌধুরী।
পুলিশ জানায়, ওই প্রাইভেট কার থেকে একটি মদের খালি বোতল ও এক ক্যান বিয়ার পাওয়া গেছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন মশিউর রহমান বলেন, প্রাইভেট কারের চালক মুবিন আল মামুনের শরীরে গাঁজা ও অ্যালকোহল পাওয়া গেছে। আর আরোহীদের মধ্যে মিরাজুল করিমের শরীরে অ্যালকোহল পাওয়া গেছে। অপরজন আসিফ চৌধুরীর শরীরে অ্যালকোহল–জাতীয় কোনো কিছু পাওয়া যায়নি।

এদিকে রূপগঞ্জ থানা-পুলিশ গাড়িচালকসহ গ্রেপ্তার এই তিনজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায়। বিচারক আগামী রবিবার (২২ ডিসেম্বর) রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

এ ঘটনায় নিহত মুহতাসিমের বাবা বাদী হয়ে সড়ক পরিবহন আইনে নারায়ষগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন।

জানা যায়, নিহত মুহতাসিম মাসুদ রাজধানীর কলাবাগান থানার গ্রিন রোড এলাকার বাসিন্দা মাসুদ মিয়ার ছেলে। আর আহত মেহেদী কুমিল্লা সদর উপজেলার মফিজুর রহমান খানের ছেলে এবং অমিত ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা পৌরসভার তপন কুমার সাহার ছেলে। মেহেদী রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে এবং অমিত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মামলার এজাহার জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মুহতাসিম তার মোটরসাইকেলে করে দুই বন্ধুকে নিয়ে ৩০০ ফিট নীলা মার্কেট এলাকায় খাওয়াদাওয়া করার জন্য যান। তারা খাওয়াদাওয়া শেষ করে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছিলেন। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে নীলা মার্কেট মোড়ে পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে তাদের মোটরসাইকেল থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। এ সময় বেপরোয়া গতিতে আসা একটি প্রাইভেট কার তল্লাশিচৌকিতে দাঁড়ানো মোটরসাইকেলে থাকা তিনজনকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মুহতাসিম মাসুদ মারা যান। আহত হন তার দুই সহপাঠী।

এদিকে ওই ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ভোরে রূপগঞ্জ থানায় আসেন বুয়েটের শতাধিক শিক্ষার্থী। থানার বাইরে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে মামলা গ্রহণ ও আটক ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। সেখানে থেকেই দুপুরে বিক্ষোভের ডাক দেন শিক্ষার্থীরা।

পরে বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পলাশীর মোড়ে অবস্থান নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। সেখানে সহপাঠী নিহতের ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ, নিহতের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও সড়ক আইন জারিসহ ছয় দফা দাবি জানান বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুক্রবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মুহতাসিমের লাশ নেওয়া হয় গ্রিনরোডের বাসায়। সেখানে আগ থেকেই উপস্থিত ছিলেন আত্মীয়স্বজন ও মুহতাসিমের সহপাঠীরা। মুহতাসিম মাসুদকে শেষবারের মতো দেখতে এসেছিলেন তারা।

এক পর্যায়ে আত্মীয়স্বজনের কাঁধে ভর করে একমাত্র ছেলেকে শেষবারের মতো দেখতে অ্যাম্বুলেন্সের সামনে আসেন রাইসা সুলতানা। মুহতাসিমের মুখের উপর থেকে কাপড় সরাতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি। আত্মীয়স্বজনদের কোনো সান্ত্বনাই তাকে শান্ত করতে পারছিল না। পরে অ্যাম্বুলেন্স করে লাশ দাফনের জন্য মিরপুরের দিকে রওনা দেওয়া হয়। তখন কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছেলেকে শেষবিদায় দিয়ে মা রাইসা সুলতানা বলেন, ‘বাবা তুমি শান্তিতে ঘুমাও। আবার আমাদের দেখা হবে।’

তিনি বলেন, কামরুল নামে মুহতাসিমের এক বন্ধু ভোরে ফোন করে জানায়, মুহতাসিম দুর্ঘটনায় মারা গেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে যায় মুহতাসিম। কথা ছিল ১১টার মধ্যে বাসায় ফিরবে। বাসায় না ফেরায় সাড়ে ১১টার দিকে ছেলেকে ফোন দিই। ছেলে বলে পুরান ঢাকায় বন্ধুদের সঙ্গে খাচ্ছে। রাতে হলে থাকবে, বাসায় ফিরবে না।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সুশীলা কারকির উত্থান যেভাবে

নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্...

১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্য...

রাস্তা অবরোধ করার অধিকার কারো নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ফরিদপুরের সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাস্তা অবরোধের ঘট...

আয়ের দিক দিয়ে ফের মেসিকে ছাড়িয়ে শীর্ষে রোনালদো

রেকর্ডের দৌড়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলে। কিন্...

সাবালেঙ্কার সাফল্যের রহস্য

সদ্য ইউএস ওপেন নারী এককের শিরোপাজয়ী বেলারুশের টেনিসকন্যা আরিনা সাবালেঙ্কা নিজ...

লন্ডনে বাংলাদেশি মাকে ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য, ছেলের ওপর হামলা

লন্ডনে হামলার শিকার হয়েছেন এক বাংলাদেশি তরুণ। তরুণের ভাষ্য, তাঁর হিজাব পরা মা...

জমির বিরোধে খুন, দুর্ঘটনায় মৃত্যু, তবু তাঁরা জুলাই শহীদ 

রাজধানীর ওয়ারীতে গত বছরের ১৪ আগস্ট কুপিয়ে হত্যা করা হয় বিএনপি নেতা মো. আল-আমি...

হাত না মেলানো : ভারতের ব্যাখ্যা, পাকিস্তানের প্রতিবাদ

আগা সালমান-শাহিন আফ্রিদিরা হয়তো সেটা ভেবেই মাঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন...

নুরাল পাগলা দরবারে হামলা, গোয়ালন্দে ওসির পর ইউএনওর বদলি

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুর‌াল পাগ‌লার দরবার ও বাড়িতে হামলা ও মরদেহে আগু...

বিশ্বের নতুন দ্রুততম মানবী জেফারসন–উডেন

নতুন দ্রুততম মানবী পেল বিশ্ব। টোকিওতে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা