অ্যাকশনধর্মী সিনেমায় অভিনয় করে বক্স অফিসে ঝড় তোলাই যেন তাঁর কাজ। কিন্তু এবার সেই ছক ভাঙলেন ডোয়াইন ‘দ্য রক’ জনসন। ৫৩ বছর বয়সী এই তারকাকে এবার দেখা যাবে ভিন্নধর্মী সিনেমায়। ‘দ্য স্ম্যাশিং মেশিন’ সিনেমায় তাঁকে দেখা যাবে মিশ্র মার্শাল আর্টস তারকার চরিত্রে। ধারণা করা হচ্ছে, এ সিনেমার জন্য অস্কারে মনোনয়ন পেতে পারেন তিনি।
গত রবিবার ভেনিস উৎসবে হয়ে গেল বেনি সাফদির সিনেমাটির প্রিমিয়ার। এদিন প্রদর্শনীর পর ১৫ মিনিট ধরে স্ট্যাডিং ওবেশন পায় সিনেমাটি।
সিনেমাটি মূলত সাবেক মার্কিন মিক্স মার্শাল আর্ট তারকা ও রেসলার মার্ক কেরের জীবন অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে; মার্কের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন জনসন। ‘অনেক বছর ধরেই ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয়ের ক্ষুধা বয়ে বেড়াচ্ছি। কিন্তু ভয়ও ছিল; আমি কি চরিত্রের গভীরে যেতে পারব! সুযোগ পাওয়ার পর নিজেকে নিংড়ে দিয়েছি,’ বলেন অভিনেতা।
কের চরিত্রে রূপান্তর
ছবিতে জনসনের সহশিল্পী এমিলি ব্লান্ট, কেরের প্রেমিকা ডন স্ট্যাপলসের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। ব্লান্ট বলেছেন, ‘চরিত্রে পুরোপুরি হারিয়ে যেত জনসন; পাশে থেকে এটা দেখা ছিল শিহরণজাগানিয়া অভিজ্ঞতা।’
সিনেমাটি কেবল লড়াই নয়, বরং কেরের মাদকাসক্তি আর জটিল প্রেমজীবনকেও তুলে ধরেছে। ব্লান্টের ভাষ্যে ‘ভালোবাসা, দ্বন্দ্ব, অস্থিরতা আর নিবেদনের গল্প এটি, যা দর্শকদের চরিত্রের গভীরে নিয়ে যাবে।’
ভ্যারাইটি সিনেমাটি নিয়ে লিখেছে, ‘জনসনের অভিনয় ছিল অবিশ্বাস্য; যেন নতুন এক অভিনেতাকে পাওয়া গেল।’ দ্য টেলিগ্রাফ ছবিটিকে পাঁচে চার দিয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘বাস্তবধর্মী অভিনয়ের ওপরেই পুরো সিনেমাটি দাঁড়িয়ে আছে।’
হলিউডের চাপ আর ব্যক্তিগত যাত্রা
ডোয়াইন জনসন মানেই বক্স অফিসে নিশ্চিত সাফল্য। অভিনেতা নিজেও সেটা জানেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হলিউডে যখন বক্স অফিসই প্রধান হয়ে ওঠে, তখন আপনাকে এক কোণে ঠেলে দেওয়া হয়। বলা হয়, তুমি এর বাইরে যেতে পারবে না। তখন নিজের মধ্যেও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়। এই সময় প্রিয়জনের প্রেরণা জরুরি। তারা যখন বলে “তুমি পারবে”, তখন কাজটা সহজ হয়।’
অভিনেতা জানান, তিনি এই সিনেমাটি করে কাউকে কিছু দেখিয়ে দিতে চাননি বরং নিজের ভেতরের ক্ষুধা মেটাতে চেয়েছেন। তাঁর ভাষ্যে, ‘অনেক দিন ধরেই মনে হতো, আমি কি নিজের স্বপ্নে বাঁচি, নাকি অন্যের? এ সিনেমা নিজের কাছে করা নিজেরই প্রশ্নের উত্তর।’
অস্কার দৌড়ে ‘দ্য রক’
জনসনের এই অভিনয় তাঁকে ঠেলে দিচ্ছে সেরা অভিনেতার দৌড়ে। তবে প্রতিযোগিতাও ভয়ংকর—ড্যানিয়েল ডে-লুইস, লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, ম্যাথিউ ম্যাককনাহে, টিমোথি শ্যালামেসহ বহু তারকা থাকতে পারেন।
মনে করা হচ্ছে, আগামী বছর গোল্ডেন গ্লোব থেকে শুরু করে অস্কার—সব বড় পুরস্কারের মনোনয়নেই জায়গা করে নেবেন জনসন।
রেসলার থেকে হলিউড তারকা
১৯৯০-এর দশকে রেসলার হিসেবে জনসনের পরিচয় ছিল দ্য রক। ২০০৪ সালে রেসলিং থেকে সরে এসে মন দেন সিনেমায়।
‘জুমানজি, ‘সান আন্দ্রেয়াস’, ‘ব্ল্যাক অ্যাডাম’, ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ ফ্র্যাঞ্চাইজিতে কাজ করে হলিউডের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বাণিজ্যিক তারকাদের একজন হয়ে ওঠেন তিনি। এবার সেই পরিচয়ের গণ্ডি ভেঙে, অন্য রকম এক জনসনকে দেখবে দর্শক, যার সাক্ষী হলো এবারের ভেনিস উৎসব।
আমারবাঙলা/জিজি