ইলন মাস্কের গ্রোক এআইয়ের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, গ্রোক এআই ইচ্ছাকৃতভাবে ও বিনা অনুমতিতে মার্কিন পপ তারকা টেলর সুইফটের যৌন উত্তেজক ভিডিও তৈরি করেছে। সাইবার বিশেষজ্ঞদের দাবি, এটি ভুলক্রমে নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
‘এটা আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত নারীবিদ্বেষ,’ মন্তব্য করেছেন ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ক্লেয়ার ম্যাকগ্লিন। পর্নোগ্রাফির ডিপফেক নিষিদ্ধ করতে যে আইন প্রণয়নের খসড়া হয়েছে, তাতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রোক ইমাজিনের নতুন ‘স্পাইসি’ মোড টেলর সুইফটের অনসেন্সরড টপলেস ভিডিও বানিয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যুক্তরাজ্যে জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া বয়স যাচাইয়ের বাধ্যতামূলক আইনও এ সেবায় মানা হয়নি।
গ্রোকের মালিকপ্রতিষ্ঠান এক্সএআইয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করেনি। অথচ প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব নীতিমালায় বলা আছে, ‘কারও সঙ্গে মিলিয়ে তাঁর অবয়ব পর্নোগ্রাফিকভাবে উপস্থাপন করা নিষিদ্ধ।’
অধ্যাপক ম্যাকগ্লিনের মতে, ‘এমন কনটেন্ট তৈরি হওয়া প্রমাণ করে যে এআই প্রযুক্তির ভেতরে এখনো নারীবিদ্বেষী পক্ষপাত গেঁথে আছে। প্ল্যাটফর্ম চাইলে এটা ঠেকাতে পারত, কিন্তু তারা সচেতনভাবেই তা করেনি।’
এটি প্রথম নয় যে টেলর সুইফটের মুখমণ্ডল এমনভাবে ব্যবহার করা হলো। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তাঁর মুখ ব্যবহার করে যৌন উত্তেজক ডিপফেক ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল এক্স ও টেলিগ্রামে, যা দেখা হয়েছিল কয়েক কোটি বার।
‘পুরোপুরি উন্মুক্ত’
প্রথমে গ্রোক একটি স্থিরচিত্র বানায়, যেখানে টেলর সুইফট একটি পোশাক পরে আছেন। এরপর সেটি চারটি সেটিং-‘নরমাল’, ‘ফান’, ‘কাস্টম’ ও ‘স্পাইসি’র যেকোনোটি বেছে নিয়ে ভিডিওতে রূপান্তর করা যায়।
‘আমি স্পাইসি মোড নির্বাচন করতেই ভিডিওতে দেখা গেল, সে সঙ্গে সঙ্গেই পোশাক খুলে ফেলল এবং নাচ শুরু করল, পুরোপুরি অনসেন্সরড, পুরোপুরি উন্মুক্ত,’ বিবিসিকে বলেন দ্য ভার্জের সাংবাদিক ওয়েদারবেড। ‘আমি কোনোভাবেই তাঁকে পোশাক খুলতে বলিনি, শুধু স্পাইসি অপশন বেছে নিয়েছিলাম,’ তিনি যোগ করেন।
ওয়েদারবেড জানান, তিনি ৩০ পাউন্ড দিয়ে গ্রোক ইমাজিনের পেইড সংস্করণ নিয়েছেন নতুন অ্যাপল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে। জন্মতারিখ চাওয়া হলেও অন্য কোনো বয়স যাচাই ছিল না। অথচ যুক্তরাজ্যের নতুন আইনে বলা আছে, পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট প্রদর্শনকারী প্ল্যাটফর্মগুলোকে প্রযুক্তিগতভাবে সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও ন্যায্য বয়স যাচাই পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে পর্নোগ্রাফিক ডিপফেক তৈরি বেআইনি শুধু তখনই, যখন তা বিদ্বেষমূলক কাজে বা শিশুদের নিয়ে তৈরি করা হয়।
অধ্যাপক ম্যাকগ্লিন যে সংশোধনী তৈরিতে সহায়তা করেছেন, তা কার্যকর হলে সব ধরনের অননুমোদিত পর্নোগ্রাফিক ডিপফেক তৈরি আইনগতভাবে অপরাধ হবে।
২০২৪ সালের ঘটনায় টেলর সুইফটের ডিপফেক ভাইরাল হলে এক্স সাময়িকভাবে তাঁর নাম সার্চে বন্ধ করে দেয় এবং সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট ও অ্যাকাউন্টগুলো অপসারণের কথা জানায়। নতুন ঘটনা নিয়ে বিবিসি টেলর সুইফটের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেও প্রতিক্রিয়া জানতে পারেনি।
আমারবাঙলা/জিজি