সংগৃহিত
শিক্ষা

ভোলায় ৮৭% শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই মাসিকবান্ধব ব্যবস্থা

ভোলা প্রতিনিধি: ভোলায় ‘স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে এমন তথ্য উঠে এসেছে- ভোলায় ৮৭% শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাসিকবান্ধব ব্যবস্থা নেই।

বুধবার (৬ মার্চ) সকালে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র স্টপ দ্য স্টিগমা প্রজেক্ট এ কর্মশালার আয়োজন করে। প্রকল্পটি ভোলা সদর উপজেলায় বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সাজেদা ফাউন্ডেশন।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভোলা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রিপন কুমার সাহা। এতে সভাপতিত্ব করেন ভোলার জেলার প্রেসক্লাবের সভাপতি এম হাবিবুর রহমান।

স্বাগত বক্তব্যে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র স্টপ দ্য স্টিগমা প্রজেক্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার নাসরিন নাহার বলেন, ভোলা একটি দ্বীপ জেলা। এ জেলায় মেয়েরা নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে বড় হয়। বিশেষ করে এ জেলায় মাসিককালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার ও প্রতিকূলতা আছে। সেগুলো গণমাধ্যমকর্মীরা তুলে ধরবে। এ কারণে তাদের নিয়ে সচেতনতা তৈরি করাতে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভোলায় যখন কাজ শুরু করি, তখন বেইজ লাইন সার্ভের মাধ্যমে জানতে পারি ২৯ শতাংশ কিশোরী মাসিককালীন স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে জানতোই না এবং ৫৩ শতাংশ কিশোরী মাসিক সম্পর্কে সামান্য পরিমান ধারণা ছিল। আমরা যখন স্কুলে গিয়েছে তখন দেখতে পেলাম ৮৭ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাসিকবান্ধব টয়লেট ব্যবস্থা নেই। ৩৪ শতাংশ স্কুলে কোনো হ্যান্ডওয়াশ জোন নেই। ৬৫ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ন্যাপকিন ব্যবহার করে ফেলার মতো ব্যবস্থা নেই। ৭৮ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সাবান নেই। ৫৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে সাবান আছে। কিন্তু পানি নেই, বেসিনও নেই।

অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বেহাল দশা বিরাজ করছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অপ্রতুলতার কারণে মাসিক চলাকালে প্রতি বছর স্কুলগুলোতে ছাত্রীরা মাসিককালীন সময়ে গড়ে ৩৬-৪০ দিনের মতো বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন।

ফলে বিপুল সংখ্যক ছাত্রী একদিকে যেমন ক্লাসে পিছিয়ে পড়ছে, অন্যদিকে পরীক্ষার ফলাফলেও খারাপ করছে। অনেক সময় বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়ছে। তাই মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সর্ম্পকে সচেতনতা বৃদ্ধিতে খোলামেলা আলোচনা করা দরকার বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। পাশাপাশি এমন পরিবেশ তৈরির জন্য পরিবার, সমাজ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে শুরু করে গণমাধ্যমেরকর্মীদের দায়িত্ব নিতে হবে এবং সবাইকে সচেতন করতে।

আলোচনায় উঠি আসে- বিদ্যালয়ে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন সুযোগ-সুবিধা রাখার কথা থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তা করা হয় না। ফলে স্কুলগুলোতে মাসিককালীন সঠিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সুযোগ থাকে না। তাই শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের অসুস্থতায় ভোগে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মাসিককালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যার ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য গণমাধ্যমকে কাজ করতে হবে।

এ কর্মশালার উদ্দেশ্য ছিল- স্টপ দ্য স্টিগমা প্রজেক্ট কর্তৃক বাস্তবায়িত কার্যক্রমের মাধ্যমে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বান্ধব পরিবেশ তৈরির বিষয়গুলো উপস্থাপনা করা এবং মাসিক সম্পর্কে আমাদের সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাগুলো তুলে ধরা, যাতে গণমাধ্যমকর্মীগণ তাদের রিপোর্টিং/প্রতিবেদনের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারণা দূরীকরণে উদ্যোগ গ্রহণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাজেদা ফাউন্ডেশন’র প্রজেক্ট ম্যানেজার বিপ্লব হোসেন। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র কমিউনিকেশনস স্পেশালিষ্ট বিপ্লবী রানী দে রায় এবং ক্যাপাসিটি বিল্ডিং স্পেশালিষ্ট মাহফুজার রহমান।

এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেয় দৈনিক আজকের ভোলার সম্পাদক আলহাজ্ব শওকাত হোসেন, ভোলা প্রেসক্লাবের সম্পাদক অমিতাভ রায় অপু, এটিএন বাংলার জেলা প্রতিনিধি আহাদ চৌধুরী তুহিন, সময় টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার নাসির লিটন, চ্যানেল আই-এর স্টাফ রিপোর্টার হারুনুর রশিদ, মাছরাঙ্গা টিভির জেলা প্রতিনিধি হামিদুর রহমান হাসিব, একাত্তর টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি কামরুল ইসলাম, চ্যানেল ২৪-এর জেলা প্রতিনিধি আদিল হোসেন তপু, মাই টিভির জেলা প্রতিনিধি আরিফ হোসেন লিটন, মোহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি জসিম রানা, দীপ্ত টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি আবিদুল আলমসহ বিটিভির জেলা প্রতিনিধি তৈয়বুর রহমান প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, প্রজেক্টটি স্থানীয় সহযোগী সংস্থা সাজেদা ফাউন্ডেশন’র মাধ্যমে ভোলা সদর উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে ১০-২৪ বছর বয়সি কিশোরী ও যুব নারীদের ক্ষমতায়ন এবং এলাকায় সকল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জড়িত করে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য মাসিক স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।

৩ বছর মেয়াদী এ প্রজেক্টটি ২০২২ সালের মে মাসে কাজ শুরু করে। বর্তমানে ভোলা উপজেলার ৩৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১৬ টি মাদ্রাসায় কাজ করছে।

এর আওতায় মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ২ জন করে মোট ১০০ রিসোর্স শিক্ষক নির্বাচন করে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে, যারা প্রতি মাসে সেশন পরিচালনার মাধ্যমে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছেন।

প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো-

(১) ২৩৪ জন পিয়ার লিডারের মাধ্যমে সেশন পরিচালনা, পথ নাটক, দিবস উদযাপনের মাধ্যমে মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি।

(২) নারী, পুরুষ ও ছেলেদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা ও মাসিক স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করা।

(৩) মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসাগুলিতে মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান এবং ইনক্‌লুশিভ মাসিকবান্ধব ওয়াশ ব্লক স্থাপন করা।

(৪) মাসিক সম্পর্কে কুসংস্কার এবং নেতিবাচক মনোভাব দূরিকরনে সরকারি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগ, যুব নেতৃত্বদানকারী সংস্থা, প্রতিবন্ধিতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য সংগঠন, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, ধর্মীয় নেতা, ট্রাডিশনাল নেতাদের সম্পৃক্তকরণ।

এছাড়াও মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ডিজিটাল প্লাটফর্ম অনন্যা এ্যাপসের মাধ্যমে কীভাবে সেবা পাওয়া যায়, সে বিষয়েও সচেতন করা হচ্ছে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এবি/এইচএন

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ ১৭ মে আওয়ামী...

ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী...

ভূয়া পরিপত্রে সোয়া কোটির গাছ ২৩ লাখে বিক্রি

ইউনুস রিয়াজ, গবি প্রতিনিধি: গণস্ব...

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল বর্ষণে ৪ জনের মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে...

সৌদিতে চলতি মৌসুমে ১ম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি হজ মৌসুমে...

১৭ মে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের যু...

‘এআই’ সভ্যতার জন্য বড় ঝুঁকি

তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক: আর্টিফিসিয়া...

কেএনএফ'র নারী শাখার প্রধান সমন্বয়ক আকিম বম গ্রেফতার

আমার বাঙলা ডেস্ক: পাহাড়ের সশস্ত্র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা