সুন্দরবনে বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন তৎপরতার পরও হরিণ শিকার থামছে না। এ অবস্থায় বনে শিকার বন্ধ এবং শিকারিদের ধরতে ১১টি পরিকল্পনা নিয়ে অভিযান শুরু করেছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক শরিফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, হরিণ শিকারের বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স বা শূন্য সহনশীলতা থাকবে। শিকার হওয়ার পর মৃত হরিণের মাংস উদ্ধারে প্রকৃতপক্ষে কোনো কৃতিত্ব নেই। বরং শিকার হওয়ার আগেই হরিণকে রক্ষা করতে পারাই আমাদের সফলতা। আমরা সেই লক্ষ্যে হরিণের মাংস ক্রেতা, বিক্রেতা ও শিকারিদের চিহ্নিত করছি। ১১টি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা করে এগোচ্ছি। এটি বাস্তবায়নে ১৫ জানুয়ারি থেকে সব ফরেস্ট স্টেশন ও বন অভ্যন্তরের টহল ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন।
১৫ জানুয়ারি বনরক্ষীদের উদ্দেশে পাঠানো চিঠিতে সহকারী বন সংরক্ষক শরিফুল ইসলাম ১১টি বিষয় উল্লেখ করে লিখেছেন, প্রতিটি স্টেশন ও টহল ফাঁড়িতে নতুন করে হরিণশিকারিদের নামের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। হরিণের মাংসের সম্ভাব্য ভোক্তার উৎস চিহ্নিত করতে হবে। সুন্দরবনসংলগ্ন লোকালয়ে হেঁটে টহল জোরদার করতে হবে। বনাঞ্চলের মধ্যেও নিয়মিত টহল করতে হবে এবং টহলের সময় যদি হরিণ শিকারের ফাঁদ পাওয়া যায়, তবে ওই স্থানের লোকেশন সঠিকভাবে অফলাইন ম্যাপে ছবি নিতে হবে। অপরাধ উদ্ঘাটনের পর দ্রুত সময়ে বন মামলা দিতে হবে। প্রতিটি ফরেস্ট স্টেশন ও টহল ফাঁড়ির বনাঞ্চলে প্রতিদিন হেঁটে কতটুকু টহল করা হয়েছে, সেটি প্রতিবেদন আকারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতামূলক সভা করতে হবে। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে অপরাধ উদ্ঘাটনে তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রেখে তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে। মাছ ও কাঁকড়া ধরার অনুমতিপত্রধারী জেলেদের পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। অভয়ারণ্য এলাকায় কোনো জেলে যেন প্রবেশ করে মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করতে না পারে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পসহ সবাইকে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। বন বিভাগের একটি লঞ্চ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে টহল কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
গত শনিবার সরেজমিনে সুন্দরবনের হড্ডা টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীদের সঙ্গে সুন্দরবনে গিয়ে দেখা যায়, বনভূমিজুড়ে শূলের মতো উঁচিয়ে আছে অসংখ্য শ্বাসমূল বা বাদাবনের গাছের নাক। তার ভেতর দিয়ে হরিণের হাঁটাচলার চিহ্ন পড়ে আছে। সেই চিহ্ন ধরে গহিন বনের মধ্যে হেঁটে এগোচ্ছেন অস্ত্রধারী বনরক্ষীরা।
হড্ডা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাবিত মাহমুদ বললেন, শিকারিদের পেতে রাখা ফাঁদ উদ্ধারে আমরা প্রতিদিন বনের মধ্যে হেঁটে টহল দিচ্ছি। এর আগে অনেকগুলো ফাঁদ আমরা উদ্ধার করেছি।
সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, লোকালয়ের পাশে ছোট নদী পেরোলেই গহিন জঙ্গল। চোরা শিকারিরা জেলে সেজে নৌকা নিয়ে দু-তিনজনের ছোট দলে বনের গহিনে প্রবেশ করে। তারা নাইলনের দড়ির একধরনের ফাঁদ হরিণের নিয়মিত যাতায়াতের পথে পেতে রাখে। চলাচলের সময় হরিণগুলো সেই ফাঁদে আটকে যায়। তারপর বনের ভেতর থেকে ছিলে–কেটে লোকালয়ে এনে মাংস বিক্রি করা হয়।
বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কয়রায় ৩০টির বেশি চোরা শিকারি চক্র সুন্দরবনে ফাঁদ পেতে নির্বিচার হরিণ নিধন করছে। গত এক বছরে সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলা থেকে ৩৩৪ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করা হয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে সুন্দরবনের সত্যপীরের খাল এলাকা থেকে ৮০ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করে বন বিভাগ। এর আগে ৩ জানুয়ারি ৩৪ কেজি হরিণের মাংসসহ এক যুবককে গ্রেপ্তার করে কয়রা থানা–পুলিশ।
বন্য প্রাণী নিধন ও অন্যান্য অপরাধ দমনে বনরক্ষীরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো। তিনি বলেন, সুন্দরবনে হরিণশিকারি ও লোকালয়ে হরিণের মাংস ক্রেতা ও ইন্ধনদাতাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এদের আইনের আওতায় আনা হবে। বন্য প্রাণী হত্যা ও পাচার রোধে শিকারিদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। হরিণের ক্ষেত্রে বনের ভেতরে অপরাধ উদ্ঘাটনের তথ্য দেওয়ায় ২০ হাজার টাকা এবং বনের বাইরে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। সবার সমন্বিত চেষ্টায় বন্য প্রাণী শিকার বন্ধ হবে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            