রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, চলবে ৯টি একাডেমিক ভবনে স্থাপিত ১৭টি কেন্দ্রে একযোগে টানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত। বিকাল ৫টা থেকে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে কেন্দ্রীয়ভাবে ভোট গণনা শুরু হবে। এটি রাকসুর ১৫তম নির্বাচন।
ভোটাররা সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগে অপেক্ষা করছেন।সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন (১৪তম) হয়েছিল ১৯৯০ সালের ২৯ জুলাই। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এ নির্বাচন হওয়ায় উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থী, প্রার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। ক্যাম্পাসজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
এর আগে সকাল সোয়া ৭টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ শুরু হয়। প্রিজাইডিং অফিসারদের হাতে হালনাগাদ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ওএমআরযুক্ত ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালি ও অন্যান্য সরঞ্জাম তুলে দেওয়া হয়।
রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, “সব কেন্দ্রেই যথাসময়ে ব্যালট বাক্স ও নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে গেছে। সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিশ্চিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
নিরাপত্তা রক্ষায় ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয়েছে ২ হাজার পুলিশ সদস্য, ৬ প্লাটুন বিজিবি ও ১২ প্লাটুন র্যাব। সব ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি নজরদারি রয়েছে, ব্যবহৃত হচ্ছে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স। মোট ৯টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রের ৯৯০ বুথে চলছে ভোটগ্রহণ।
ভোট পরিচালনায় রয়েছেন ২১২ জন শিক্ষক। এর মধ্যে ১৭ জন প্রিজাইডিং অফিসার ও বাকিরা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার। এছাড়া ৯১ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন।
এবারের রাকসুতে মোট ২৮ হাজার ৯০১ জন ভোটার,এর মধ্যে ৩৯ দশমিক ১০ শতাংশ নারী এবং ৬০ দশমিক ৯০ শতাংশ পুরুষ। প্রার্থী রয়েছেন ৮৬০ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় রাকসুর ২৩ পদে ৩০৫ জন, সিনেটের ৫ পদে ৫৮ জন এবং ১৭টি হল সংসদের ২৫৫ পদে ৫৫৫ জন।
এ নির্বাচনে ১১টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর মধ্যে আলোচিত ৮টি প্যানেল হলো- ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’, ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশনের নেতৃত্বে গঠিত ‘রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ’, সাবেক সমন্বয়কদের নেতৃত্বে ‘আধিপত্যবাদ বিরোধী ঐক্য’, বাম জোটের ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ঘোষিত ‘অপরাজেয় ৭১, অপ্রতিরোধ্য ২৪’, সাবেক আরেক নারী সমন্বয়কের নেত্বতে ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন মনোনীত ‘সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি একাডেমিক ভবনে স্থাপিত ১৭টি ভোটকেন্দ্রের ৯০৯টি বুথে ভোটগ্রহণ চলছে। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ছাত্রদল সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম এবং ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলত শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের মধ্যে, এমন আভাস দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পদের প্রার্থীরাও।
তারা বলছেন, অনেক পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়েরও সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন প্যানেলের আলোচিত বেশ কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন, যারা এবারের রাকসুতে চমক দেখাতে পারেন।
তাদের মধ্যে সাবেক সমন্বয়কদের ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য প্যানেল’-এর জিএস প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মারসহ আলোচনায় আছেন আরো কয়েকজন। এ ছাড়া রাকসুর বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন, যারা ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ হিসাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগে থেকেই বেশ জনপ্রিয়।
এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। উৎসবের আমেজ থাকলেও পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এখন কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভোটকেন্দ্র ও তার আশপাশে মোতায়েন করা হয়েছে ২ হাজার ৩০০ পুলিশ সদস্য।
পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদারে দায়িত্ব পালন করছে ১২ প্লাটুন র্যাব ও ৬ প্লাটুন বিজিবি। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ ১০০টি পয়েন্টে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
আমারবাঙলা/এফএইচ