জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান কাঠামো পুরোনো ও আধুনিক বিশ্বের বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। তিনি বলেন, আফ্রিকা ও এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো প্রয়োজন।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ৪৭তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন ও সংশ্লিষ্ট বৈঠকের সময় মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস জানান, ‘পরিষদে বর্তমানে স্থায়ী ইউরোপীয় সদস্য তিনজন—ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া, এবং একটি এশীয় সদস্য চীন। কিন্তু লাতিন আমেরিকা বা আফ্রিকার কোনো সদস্য নেই।’
তিনি আরও বলেন, স্থায়ী সদস্যদের ভেটো ক্ষমতার কারণে পরিষদের কার্যকারিতা প্রায়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ‘যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এমন এক প্রস্তাব দিয়েছে যাতে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ভেটো সীমাবদ্ধ করা যায়। আমার মনে হয়, সদস্যদের উচিত এটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা।’
গুতেরেসের এই বক্তব্যের সঙ্গে মিল রয়েছে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি মোহামাদ হাসানের সম্প্রতি নিউইয়র্কে দেওয়া বক্তব্যের, যেখানে তিনি ভেটো ক্ষমতা সীমিত বা বাতিল করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সাধারণ পরিষদের হাতে ফিরানো উচিত, যা বিশ্বের বিবেক ও কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করবে।’
মহাসচিব জানান, ২০২৬ সালের জন্য জাতিসংঘের কর্মী সংখ্যা ১৮.৮ শতাংশ কমিয়ে আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, এটি আর্থিক সংকটের কারণে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ প্রদানে ঘাটতির ফল। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই পদক্ষেপ উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহায়তাকে প্রভাবিত করবে না, বরং সহায়তা বাড়ানো হবে।
গুতেরেস বর্তমান বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা পুরোনো ও বৈষম্যমূলক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদা যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয় না। তিনি আহ্বান জানান, বৈশ্বিক শাসন কাঠামোকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, প্রতিনিধিত্বমূলক, ন্যায়সঙ্গত ও কার্যকর করতে হবে। বিশেষ করে আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অংশগ্রহণ জোরদার করা প্রয়োজন।
তিনি বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানের ক্ষমতা তিনগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব দেন, যাতে ঋণ গ্রহণে ঝুঁকি ও ব্যয় কমে এবং ঋণ সংকটে থাকা দেশগুলো দ্রুত সহায়তা পায়।
গুতেরেস আরও বলেন, বিশ্বের ৮০ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী জি২০ দেশগুলোকে জলবায়ু কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিতে হবে। তিনি উন্নত দেশগুলোকে আহ্বান জানান, জলবায়ু অভিযোজন তহবিল দ্বিগুণ করে অন্তত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে এবং ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’-এ বড় অঙ্কের অর্থ প্রদান করতে।
তিনি বলেন, ‘জি২০ দেশগুলোকে নেতৃত্ব দিতে হবে, তবে সব দেশকেই তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী দায়িত্ব নিতে হবে।’ মহাসচিব আশা প্রকাশ করেন, ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে নেতারা একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনায় ঐকমত্যে পৌঁছাবেন। এতে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সীমার মধ্যে থেকে নির্গমন কমানো সম্ভব হবে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রতিবছর ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত হবে।
আমারবাঙলা/এফএইচ