চট্টগ্রাম নগরীর সড়কে চলছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বিরোধী অভিযান। একদিকে ট্রাফিক বিভাগ রাস্তায় চলাচল করা এসব যানবাহন আটক করছে, অন্যদিকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় খোলা রয়েছে নতুন অটোরিকশার শোরুম। ফলে নগরবাসীর প্রশ্ন;যখন এই যান চলাচলই নিষিদ্ধ, তখন এসব শোরুম কীভাবে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালাচ্ছে?
বুধবার সকালে বাকলিয়া এক্সেস রোডে দেখা যায়, রাস্তার দু’পাশে অন্তত তিনটি শোরুমে নতুন অটোরিকশা বিক্রি হচ্ছে। অনেক ক্রেতা নতুন রিকশা কিনেই তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তায় নামাচ্ছেন। কিন্তু একই রাস্তায় কিছুদূর পরই চলছে ট্রাফিক পুলিশের অভিযান অবৈধ যান আটক, জরিমানা আদায় ও চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একদিকে সরকার এসব রিকশা বন্ধের কথা বলছে, অন্যদিকে দোকানে নতুন রিকশা বিক্রি হচ্ছে—এটা কেমন নীতি? এভাবে চললে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।”
নগরজুড়ে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বিরোধী অভিযানে অনেকে সমর্থন জানালেও, মূল সমস্যার স্থায়ী সমাধানে প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবই সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।
ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) লিয়াকত আলী বলেন, “আমরা রাস্তায় অবৈধ যান আটক করতে পারি, কিন্তু শোরুম বন্ধের ক্ষমতা আমাদের নেই। সেটা সিটি কর্পোরেশন বা জেলা প্রশাসনের আওতায় পড়ে। ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণেই পুরো বিষয়টি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।”
অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “নগরের স্বার্থে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার বিশৃঙ্খলা রোধে খুব শিগগিরই যৌথ অভিযান চালানো হবে। জেলা প্রশাসন, ট্রাফিক বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশন একসঙ্গে কাজ করলে তবেই এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরীর প্রধান সড়ক ছাড়াও প্রায় প্রতিটি গলিতে অগণিত ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচল করছে, যেগুলোর কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই এবং চালকদের অনেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক। এসব যানবাহনের কারণে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা, যানজট ও ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন।
এছাড়া ও, অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে চার্জিং পয়েন্ট ও গ্যারেজ। অধিকাংশ গলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করে একাধিক রিকশা চার্জ দেওয়া হচ্ছে, ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিও বাড়ছে।
নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, “সমস্যার মূল উৎস হচ্ছে শোরুমগুলো। যতদিন বিক্রি বন্ধ না হবে, ততদিন রাস্তায় নতুন রিকশা নামা বন্ধ হবে না। অভিযান চালিয়ে পুরনো রিকশা আটক করলেও পরদিনই নতুনগুলো যুক্ত হবে।”
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব অটোরিকশা এখন নগর অর্থনীতিরও অংশ হয়ে উঠেছে। বহু নিম্নআয়ের মানুষ জীবিকার জন্য এই যানেই নির্ভরশীল। তাই কোনো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাই যুক্তিযুক্ত।
বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরে হাজার হাজার ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলছে, যার অধিকাংশেরই কোনো অনুমোদন নেই। সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় এমনই মত নগরবাসীর।
একদিকে শোরুমের চমক, অন্যদিকে পুলিশের অভিযান-এই দ্বিমুখী বাস্তবতাই এখন চট্টগ্রাম নগরীর রাস্তায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
আমারবাঙলা/এসএ