প্রতিনিধি
সারাদেশ

আশায় আশায় ২০ বছর পার বেতন হয়নি পাংশা আইয়িাল গার্লস কলেজের ৩ শিক্ষকের

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন নতুন প্রতিষ্ঠিত হওয়া কলেজে। কলেজের অবকাঠামো নির্মাণে করেছিলেন সহযোগিতা। আশা ছিল কলেজ এমপিও হবে। বেতন পাবেন। স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করবেন। কিন্তু দীর্ঘ ২০ বছর বিনাবেতনে শিক্ষকতা করার পর অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তিন শিক্ষকের হয়নি বেতন। এমনি ঘটনা ঘটেছে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা শহরে অবস্থিত আইডিয়াল গার্লস কলেজে। তিন শিক্ষকের অভিযোগ অধ্যক্ষের কারণে তাদের পুরো জীবনটা শেষ হয়ে গেল।

পাংশা উপজেলা শহরে অবস্থিত আইডিয়াল গার্লস কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালে। কলেজটি এমপিও হয় ২০২২ সালে। বর্তমানে কলেজের ছাত্রী সংখ্যা প্রায় তিনশো জন। শিক্ষক রয়েছেন ২১ জন।

বেতন না হওয়া তিনজন শিক্ষক হলেন ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক রফিকুন্নবী চৌধুরী, অর্থনীতি ও বানিজ্যিক ভুগোল বিষয়ের প্রভাষক তপন কুমার বিশ্বাস ও আইসিটি বিষয়ের প্রভাষক সিদ্ধিরাম ঘোষ।

কলেজ এমপিও হবে। বেতন পাবেন। সংসার হবে। স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করবেন—এ আশায় রফিকুন্নবী চৌধুরী ২০ বছর বিনাবেতনে চাকরি করেছেন পাংশা আইডিয়াল গার্লস কলেজে। পরিবারের উপর নির্ভরশীল থেকেছেন। আয়-রোজগারের বিকল্প পথ না থাকায় বিয়েটাও করতে পারেননি। তার বয়স এখন ৪৭ বছর। কলেজ এমপিও হয়েছে। কিন্তু কলেজের অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতায় তিনি এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর এখন সম্পূর্ণ একা হয়ে গেছেন। বাড়ির গাছপালা বিক্রি করে এবং জমি লীজ দিয়ে কোনোমতে চলছে তার জীবন। রফিকুন্নবী চৌধুরী পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের বহলাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। পাংশা আইডিয়াল গার্লস কলেজের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন তিনি। একই কলেজের আরও দুজন শিক্ষক ২০ বছর বিনাবেতনে চাকরি করলেও

রফিকুন্নবী চৌধুরী কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে ২০০৪ সালে কলেজটিতে যোগদান করেন। কলেজটির রফিকুন্নবী চৌধুরী ঢাকা বোর্ডের ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষক ছিলেন। তার কাগজপত্রে দেখা যায় কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত কর্মরত শিক্ষকদের নামের তালিকায় ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে মোঃ রফিকুন্নবী চৌধুরীর নাম ১০ নম্বরে। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এ মোঃ রফিকুন্নবীর নাম রয়েছে। কলেজটির ২০১৮-২০১৯ শিক্ষা বর্ষের ক্লাস রুটিনেও তিন শিক্ষকের নাম রয়েছে।

রফিকুন্নবী চৌধুরী বলেন, আমি ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি তিনি পাংশা আইডিয়াল গার্লস কলেজে ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি। তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রয়াত আব্দুল ওহাব আমাকে নিয়োগ দেন। ২০০৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনা বেতনে চাকরি করি। করোনার কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। সেটাও করি। আমি ২০২২ সালের ১৬ জুলাই তিনি কলেজে গেলে অধ্যক্ষ তাকে কলেজে আসতে নিষেধ করেন। কিন্তু কলেজ থেকে কোনো অব্যাহতি পত্র বা কোনো কাগজ দেয়নি। ২০২২ সালের ২৫ জুলাই তারিখে পাংশা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করি আমার বেতন ভাতার দাবি ও চাকরি ফিরে পাবার জন্য। মামলাটি এখনও চলমান। এর মধ্যে জানতে পারি তথ্য গোপন করে স্বর্ণালী খাতুন নামে একজনকে ইংরেজি শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং তার বেতন করানো হয়েছে। একজন পদে থাকতে আরেকজনকে নিয়োগ দেওয়ার বিধান নেই। তিনি বলেন, এমপিও হবে এ আশায় ২০টি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। পরিবারের উপর নির্ভরশীল থেকেছেন। আয়-রোজগার না থাকায় বিয়েটাই করতে পারেননি। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর এখন সম্পূর্ণ একা হয়ে গেছেন। বাড়ির গাছপালা বিক্রি করে এবং জমি লীজ দিয়ে কোনোমতে চলছেন। অধ্যক্ষের কারণে তার পুরো জীবনটা শেষ হয়ে গেল।

পাংশা কলেজপাড়ার বাসিন্দা তপন কুমার বিশ্বাস জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে অনার্স মাস্টার্স পাশ করেছেন প্রথম শ্রেণিতে। ২০০৪ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে পাংশা আইডিয়াল গার্লস কলেজে চাকরি করছিলেন। ২০২২ সালে কলেজ এমপিও হলেও তার এমপিও হয়নি। সম্পূর্ণ বিনা বেতনে কলেজে চাকরি করেছেন। কলেজে শিক্ষার্থী সংগ্রহের জন্য গরিব শিক্ষার্থীদের বই কিনে দিয়েছেন। কলেজ প্রতিষ্ঠায় নানা রকম অর্থনৈতিক সহযোগিতা করেছি। কিন্তু এমপিওতে তার কাক্সিক্ষত যোগ্যতার অভাব দেখানো হয়। তিনি কমার্সের ছাত্র হিসেবে অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ভূগোলের শিক্ষক ছিলেন। অথচ বলা হয়, তিনি ওই বিষয়ের মধ্যে পড়েন না। তার যোগ্যতার অভাব। তাকে নিয়োগ দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। বলেন, তার বর্তমান বয়স ৫৮ বছর। আশায় ছিলেন একদিন এমপিও হবে। তার চাকরিও এমপিও হবে। কিন্তু অধ্যক্ষ নিজের পছন্দমতো লোক নিয়োগ করেন। তার কারসাজির কারণেই এমপিও হয়নি। ছাত্রাবস্থায় হোমিও পড়েছিলেন। এখন নিজ বাসাতেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে সংসার চালান। পরিবারে স্ত্রী আর দুই ছেলে রয়েছে। ছেলেদের অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করাতে হয়েছে। এখন নানা রকম অপমানজনক কথা বলেন অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান। তার কারণেই তিন জন শিক্ষকের জীবন দুবির্সহ।

পাংশা শহরের নারায়ণপুর গ্রামের সিদ্ধিরাম ঘোষ বলেন, ১৯৯৯ সালে ৩৪ বছর বয়সে তিনি পাংশা আইডিয়াল গার্লস কলেজে যোগ দেন। ২০২৩ সাল পর্যন্ত চাকরি করেছেন আইসিটি বিষয়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় তার শ^শুর পরিমল কুমার দে চার লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। সেই টাকায় কলেজে একটি ভবনও তার শাশুড়ির নামে নামকরণ করা হয়। তিনি কলেজে ২০ বছর চাকরি করলেও কোনোদিন বেতন পাননি। আইসিটি বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কম্পিউটারে এমএ করেন। কারিগরি ভর্তি হয়ে ডিপ্লোমা করেন। অধ্যক্ষ তার বিপক্ষে কাজ করে এমপিও করেননি। তাকে বলা হয় তার সার্টিফিকেট জাল। কিন্তু আইডিয়াল গার্লস কলেজের একমাত্র মাস্টার্স ট্রেইনার ছিলেন সিদ্ধিরাম ঘোষ। সেটা কিভাবে বোর্ড নিয়োগ দিল প্রশ্ন তার। তার স্ত্রী একটি কলেজে চাকরি করতেন। মূলত স্ত্রীর আয়েই চলেছে সংসার। এক ছেলে, এক মেয়েকে পড়াশোনা করাতে হয়েছে অনেক কষ্ট করে।

কলেজটির অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক মোঃ শহিদুল ইসলামও জানান, এই তিন শিক্ষক আমাদের সাথে শিক্ষকতা করেছে। কিন্তু তাদের বেতন না হওয়ায় খারাপ লাগে।

এবিষয়ে পাংশা আইডিয়াল গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান বলেন, রফিকুন্নবী এই কলেজের শিক্ষক না। তাই তার বেতন হয়নি। শিক্ষক না হলে সে কিভাবে এই কলেজের হয়ে ঢাকা বোর্ডে ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায় এবং বিভিন্ন সময় এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরিদর্শক ছিলেন, ক্লাস রুটিনে নাম ও ব্যানবেইসে তার নাম থাকে কিভাবে? এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, রফিকুন্নবী আদালতে মামলা করেছে। আদালতই এই বিষয়ে সমাধান দিবে। আমি এর বেশি কোনো মন্তব্য করবো না। আর সিদ্ধিরাম ঘোষের সার্টিফিকেট যাচাইতে দেখা গেছে সেটি ভুয়া। তপন বিশ্বাসকে অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ভূগোল বিষয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে তার যোগ্যতা না থাকায়।

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

এমিতে ‘অ্যাডোলেন্স’-এর জয়জয়াকার

বাংলাদেশ সময় সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ঘোষণা করা হলো ৭৭তম এমি অ্যাওয়ার্ডস।...

লন্ডনে বাংলাদেশি মাকে ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য, ছেলের ওপর হামলা

লন্ডনে হামলার শিকার হয়েছেন এক বাংলাদেশি তরুণ। তরুণের ভাষ্য, তাঁর হিজাব পরা মা...

রাকসু নির্বাচনে কার কী প্যানেল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-রাকসু নির্বাচনের এ পর্যন্ত নয়টি প্...

হাত না মেলানো : ভারতের ব্যাখ্যা, পাকিস্তানের প্রতিবাদ

আগা সালমান-শাহিন আফ্রিদিরা হয়তো সেটা ভেবেই মাঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন...

বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে তিস্তার পানি

টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি আব...

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন নির্দেশনা

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা আরও সুশৃঙ্খল করতে সরকারি হাসপাতালগুলোকে নতুন নির্দেশনা...

ক্রীড়া পরিদপ্তরে দুদকের অভিযান

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ক্রীড়া পরিদপ্তরের বার্ষিক ক্রীড়া কর্মসূচি প...

এক লাফে ট্যারিফ বাড়ল গড়ে ৪০ শতাংশ

বন্দর ব্যবহারকারীদের আপত্তি উপেক্ষা করেই নতুন ট্যারিফের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়...

বগুড়ায় মা ও ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা

বগুড়ার শিবগঞ্জে এক নারী ও তার কলেজপড়ুয়া ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা...

বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী হানিয়া আমির

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানি তারকা অভিনেত্রী হানিয়া আমির। সানসিল...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা