বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। আয়তনের তুলনায় এ দেশে বেশি মানুষের বাস। আর তার কারণে নাগরিক সেবা পেতে হিমশিম খেতে হয়। এ দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব এক হাজার ১৭১ জন। এর মাঝেই একটি গ্রামে মাত্র একটি বাড়ি আছে। আর সেই বাড়িতে দুজন মানুষ থাকেন; তাও জনসংখ্যার ভারে নুয়ে পড়া বাংলাদেশে- একটু ধাক্কা খেতে হয়।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নের গ্রাম উমানাথপুর। এ গ্রামে থাকেন স্বামী-স্ত্রী সিরাজুল সরকার (৭৫) ও মনোয়ারা খাতুন (৬০)। পুরো গ্রামে আর কোনো মানুষ নেই।
উমানাথপুরের আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, এখানকার ভূমি মানচিত্রেও এ গ্রামের অস্তিত্ব আছে। উমানাথপুর নামে রয়েছে আলাদা মৌজাও। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান এ গ্রামটির।
উমানাথপুর গ্রামের একমাত্র বাড়িটি ২৫ শতক জমির উপর। রয়েছে দুটি বসতঘর, একটি গোয়ালঘর, পুকুর ও টয়লেট। এই বাড়ি ও এর আশপাশ ঘিরেই গ্রামটি। অন্যের জমির আইল দিয়ে এ বাড়িতে যেতে হয়। এ গ্রামের জেএল নম্বর ১১৬। গ্রামের পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ। আশপাশের গ্রামগুলো হলো—রামগোবিন্দপুর, হরিপুর, উদয়রামপুর, রাধাবল্লভপুর, সাহেবনগর, চন্দ্রনগর, ব্রম্মিনগাতি, চড়াকোণা ও রামকৃষ্ণপুর।
উমানাথপুরের একটিমাত্র বাড়ির কর্তা দলিল লেখক সিরাজুল সরকার জানান, সাড়ে তিনবছর আগে তার ছেলে শরীফুল আলমের মৃত্যু হয়। শরীফুলের বিধবা স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে চলে যান। এরপর থেকে তারা স্বামী-স্ত্রীই এখানে আছেন।
জানা যায়, সিরাজুল সরকারের বাবা রমজান আলী সরকার ১৯৬৫ সালে পাশের রামগোবিন্দপুর গ্রাম থেকে এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন । বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি পরিবার নিয়ে এ বাড়িতে বাস করছেন। তার আরেক ভাই কাছাকাছি হরিপুর গ্রামে থাকেন।
সিরাজুল সরকারের বাবা স্থানীয় রাজীবপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচবারের নির্বাচিত ওয়ার্ড মেম্বার ছিলেন । সিরাজুল নিজেও এই ইউনিয়ন থেকে দুইবার ওয়ার্ড মেম্বার নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে জানান বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলী ফকির।
সিরাজুল সরকারের অভিযোগ, একটি মহল তাকে এখান থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছে । এ কারণে দেড় বছর আগে তিনি ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন। এখনো হুমকি পাচ্ছেন।
রামগোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল হক পারভেজ বলেন, বাল্যকাল থেকেই আমরা এ উমানাথপুর গ্রামের অস্তিত্ব দেখে আসছি। এই গ্রামের একমাত্র বাড়িটিতে যাতায়াতের রাস্তাটি প্রশস্ত করে দিলে বাড়িরে লোকজনের চলাচলে অনেক সুবিধা হতো।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, এই রকম গ্রাম তো কোথাও থাকার কথা নয়। এর আগে জানা ছিল না। এখন খোঁজ নিয়ে দেখা হবে কোন নীতিমালায় এই গ্রামটি হয়েছিল। গ্রামটি পরিদর্শন করে সার্বিক বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেব।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            