রাজশাহীতে খাদ্য বিভাগের দুটি গুদামে নিম্নমানের চাল পাওয়া গেছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জেলার দুর্গাপুর উপজেলার খাদ্যগুদাম থেকে ২০ টান নিম্নমানের চাল বের হয়। এ নিয়ে ওই গুদাম থেকে এ পর্যন্ত এ ধরনের ৮০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া গেছে।
এসব নিম্নমানের চাল উদ্ধারের ঘটনায় বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে দুর্গাপুর উপজেলা খাদ্যগুদামের কর্মকর্তাকে। পাশাপাশি জেলার অন্য উপজেলার খাদ্যগুদামগুলোর অবস্থা খতিয়ে দেখতে মোট ৮টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা খাদ্য বিভাগ। অবশ্য গত ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও এখনো তা জমা দেয়নি কমিটি। এসব নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে জেলার খাদ্য বিভাগে।
নিয়ম অনুযায়ী খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ ধান কিনে চালকলের মালিকদের (মিলার) দেবে। তারা ধান ভাঙিয়ে চাল করে দেবেন। এরপর সরবরাহ করা চালের বস্তার গায়ে খাদ্যগুদামের সিল দেওয়া হয়। গুদামের অনেক বস্তাতেই সেই সিল পাওয়া যাচ্ছে না।
রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাইন উদ্দিন বলেন, এগুলোও অনিয়মের মধ্যে পড়ে। তদন্ত কমিটি এগুলোও দেখবে। অনিয়ম পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা কয়েক দিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন পাবেন।
ভবানীগঞ্জ খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাচ্চু মিয়ার বরখাস্তের আদেশ ৭ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। বরখাস্তাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তিনি গুদামে সংরক্ষিত ভালো মানের চাল উদেশ্যপ্রণোদিতাবে পরিবর্তন করে অসৎ উদ্দেশ্যে নিম্নমানের চাল খামাল অভ্যন্তরে সুকৌশলে মজুত করেছেন।’
জানা যায়, চলতি মৌসুমে বাগমারার তিনটি চালকল চুক্তি করেছিল। সেগুলো হলো কনক চালকল, আরাফাত চালকল ও ভাই ভাই চালকল। এসব চালকল থেকে ভবানীগঞ্জ খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলার তানোরের আবদুস সাত্তার চালকল, হড়গ্রামের বাদশা রাইস মিল, মোহনপুরের নুরজাহান চালকল, মাহফুজ চালকল ও মোল্লা চালকল থেকে ধান ছাঁটাই করে চাল এই গুদামে আনা হয়েছে। আটটি চালকল থেকে ১ হাজার ২১১ মেট্রিক টন চাল আনা হয়েছে ভবানীগঞ্জ খাদ্যগুদামে।
তবে গুদামে নিম্নমানের চাল পাওয়া প্রসঙ্গে বাগমারার চুক্তিবদ্ধ তিন চালকলমালিক নজরুল ইসলাম, ইয়াছিন আলী ও শামসুল ইসলাম দাবি করেন, তারা ভালো চাল দিয়েছেন। বাগমারার বাইরে থেকে নিম্নমানের চাল এসেছে।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাদ্যগুদামে সাধারণত পরিদর্শক ছাড়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় না। মো. বাচ্চু মিয়া উপপরিদর্শক হওয়া সত্ত্বেও তাকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা খাদ্যগুদামের উপপরিদর্শক হিসেবে তিনি বদলি আদেশপ্রাপ্ত ছিলেন। তবে তাকে সংযুক্তিতে ভবানীগঞ্জ খাদ্যগুদামে ন্যস্ত করা হয়।
জানতে চাইলে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাইন উদ্দিন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, পরিদর্শক না পাওয়ার কারণে তখন তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এখন অবশ্য পরিদর্শক সহজলভ্য হয়ে গেছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
আমারবাঙলা/এফএইচ