বগুড়ার নন্দীগ্রামে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনে চুরি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে যুবক ও তরুণ সমাজ। এ উপজেলায় সব ধরনের মাদক বিক্রি আগের চেয়ে বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অর্ধশতাধিক স্পটে সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় মাদক সেবীদের আনাগোনা। সিন্ডিকেট টিকিয়ে রাখতে গড়ে তোলা হয়েছে এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাং। ইয়াবা আসক্তিতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তরুণ সমাজ। মাদক কারবারিরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আসার চেষ্টা করছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, মাদকের লাগামহীন বিস্তারে নাজেহাল তরুণ, কিশোরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলেও মাদকের বিস্তার। একাধিকবার মাদকসহ আটকের পর কারাবন্দী হলেও জামিনে এলাকায় ফিরে আবারো পুরানো পেশায় ফিরছে অপরাধীরা। গ্রামাঞ্চলে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ নানা ধরনের মাদক সরবরাহ বেড়েছে। কৌশলগত কারণে শুধুমাত্র পরিচিত ব্যক্তির কাছেই মাদক বিক্রি করা হয়। বিক্রিও আগের চেয়ে বেড়েছে। সড়কের পাশে এবং বাজারে তাৎক্ষনিক লোকেশনে দাঁড়িয়ে থাকা মাদকাসক্তদের হাতে পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে মাদক পৌছেঁ যায়। এ কাজে কিশোর বয়সীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিত্যক্ত বাড়ি, পুকুরপাড়, জঙ্গল, স্কুলমাঠসহ অলিগলিতে মাদক সেবনের আসর বসে।
গত শনিবার উপজেলার কৈগাড়ী এলাকার মহাসড়কের পাশে মাদক পাচারের সময় একজনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কারবারি আব্দুল হাকিমের কাছ থেকে ৪০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বগুড়া জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আতোয়ার রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রাপ্ততথ্যে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা পেশার আড়ালে উপজেলার সিমলা বাজার, গুলিয়া, চাতরাগাড়ি, চৌমুহনী, হাটকড়ই, কুন্দারহাট, নিনগ্রাম, বিজরুল, গোছাইল, খেংশহর, দাসগ্রাম, মুরাদপুর, রণবাঘা, হাটলাল, দলগাছাসহ অর্ধশতাধিক স্পটে চলে মাদকের কারবার।
পৌর শহরের ওমরপুর, কলেজপাড়া, পুরাতন বাজার, বাসস্ট্যান্ড, দামগাড়া, ফোকপাল, কালিকাপুর, নামুইট এবং ঢাকুইর মহল্লা এলাকায় মাদকের তৎপরতা বেড়েছে। ফিলিং স্টেশন এলাকায় সন্ধ্যা নামলেই বাড়ে মাদক সেবীদের আনাগোনা। তাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইয়াবা। কলেজপাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়েছে। নানা পেশার আড়ালে মাদক বিক্রি করছে সক্রিয় কারবারিরা। তারা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে। মোটরসাইকেল ও অটোভ্যানে দিনেরাতে আসে মাদকের চালান।
স্থানীয়রা বলছেন, কিশোরেরা হাতের কাছে সহজে মাদক পেয়ে সেবনের পর বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এক ব্যক্তি একাধিক উৎস থেকেও মাদকের অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। অর্থের জোগানে ভয়ংকর অপরাধেও জড়িয়ে পড়ে মাদকসেবীরা। এ ছাড়া একাধিক মাদক মামলার আসামিরা রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যপদ বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা পুলিশের চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য দলীয় সাইনবোর্ড কাজে লাগাতে পারে। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা থেকে ঝরেপড়া তরুণ সমাজ মাদকের আগ্রাসনে থাকায় তাদের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অভিভাবকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক জানান, রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকা মাদক ব্যবসায়ীদের হাতেনাতে ধরতে ব্যর্থ হলে ঝামেলা হতে পারে। এরপরও অনেকেই নজরদারিতে রয়েছে। থানা পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানে বেশ কয়েকজন আইনের আওতায় এসেছে। তাদের মধ্যে সেবীর সংখ্যাই বেশি। শীর্ষ মাদক কারবারি আইনের আওতায় এলেও তারা জামিনে কারামুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরে আবারো মাদকের ব্যবসা শুরু করেছে। সেবনকারীরা অপরিচিত হলে তারা স্বীকার করে না, বিক্রিতেও রাজি হয় না। পরিচিত হলেও কৌশলে তাৎক্ষনিক লোকেশনে কিশোরদের মাধ্যমে মাদক পৌঁছে দেয়। এ কাজে ব্যবহার হচ্ছে মোটরসাইকেল। ট্রাক চালকদের মধ্যে গাঁজা সেবনকারীর সংখ্যা বেশি। কেউ কেউ কথিত শ্রমিক সংগঠনের আড়ালে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (নন্দীগ্রাম সার্কেল) মো. নুরুজ্জামান চৌধুরী জানান, মাদক ও জুয়ার সঙ্গে কোনো আপস নেই। সিন্ডিকেটের নেপথ্যে যেই থাকুক, রাজনৈতিক নেতা হলেও ছাড় দেওয়া হবে না। তথ্য পাওয়া মাত্রই অভিযানে নামছে পুলিশ। জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে অভিযান চলমান রয়েছে। আসক্তির কবল থেকে যুবক-তরুণ সমাজকে রক্ষায় সমাজের সকল পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
আমারবাঙলা/ইউকে