সংগৃহিত
আর্টস

আলিয়ঁসে সুরঞ্জনার ‘সীবিত কোলাজ’ প্রদর্শনী 

সাজু আহমেদ: রাজধানী ঢাকায় চিত্র প্রদর্শনী উপভোগের কেন্দ্রগুলোর অন্যতম আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ। প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিতই শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করে। সে ধারাবাহিকতায় আসছে নতুন একটি প্রদর্শনী। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে শিল্পী সুরঞ্জনা ভট্টাচার্যের ব্যতিক্রমী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। ‘সীবিত কোলাজ’ শীর্ষক তার একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন হবে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায়। প্রদর্শনীটি যৌথভাবে উদ্বোধন করবেন শিল্পী মনিরুল ইসলাম ও অধ্যাপক জাফর ইকবাল উদ্বোধনী আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অধ্যাপক শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য, শিল্প সমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ, শিল্পী সৈয়দ ইকবাল। প্রদর্শনীটি চলবে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত।

সোমবার থেকে শনিবার প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকবে। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত।

ব্যথাতুর ভালবাসার চারুকৃতি ‘সীবিত কোলাজ’ প্রদর্শনীর উদ্যোক্তা শিল্পী সুরঞ্জনা ভট্টাচার্যের জন্ম নারায়ণগঞ্জে বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম ও নরসিংদীতে। আশৈশব সূচিকর্মের প্রতি ঝোঁক ছিল সুরঞ্জনার, নরসিংদীর সরকারি কারিগরি বিদ্যালয়ে সূচিকর্মের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। সে আগ্রহ ও প্রশিক্ষণ কাজে লাগল প্রায় দুই দশক পর। প্রায় এক যুগ আগে মন্ট্রিয়লে থাকাকালে তিনি দুরারোগ্য ডিস্ট্রোফি রোগে আক্রান্ত হন, ফলে তার বাম হাত প্রায় অকেজো হয়ে যায়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার অন্যতম যন্ত্র হিসেবে শুরু করেন ব্যবহৃত কাপড়ের টুকরো দিয়ে কোলাজ। মাতিসের করা নীলনারীর কোলাজের একটি অনুলিপি টাঙানো ছিল শিল্পীর ঘরের দেয়ালে। এ কোলাজ যখন মাতিস করেন তখন তিনিও প্রায় অন্ধ, কাকতালীয় সমাপতন বলা বাহুল্য। শিল্পকর্মটি শিল্পী সুরঞ্জনাকে অনুপ্রাণিত করে গেছে তার কল্পনাগুলোকে কোলাজের মাধ্যমে সৃষ্টিতে পরিণত করতে। তার সেসব সৃষ্টিকর্ম দর্শকের সামনে হাজির করতেই এ প্রদর্শনী। বলা যায় কোলাজ নিয়েই সুরঞ্জনা ভট্টাচার্যের এসব শিল্প নির্মাণ।

শিল্পকৌশল হিসেবে কোলাজের বয়স দুই হাজার বছরের বেশি। আধুনিক শিল্পধারা বা মডার্ন আর্টের যুগে পিকাসো, জর্জ ব্রাক, অঁরি মাতিস ও ভাসিলি কঁদিনিস্কির মতো মহান শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় ধন্য হয়েছে এ শিল্প। এদের মধ্যে বিশেষ করে কঁদিনিস্কির শিল্পকর্ম ছিল আকৈশোর সুরঞ্জনার বিস্ময়, অনুরাগ ও অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ আশা করে প্রদর্শনীর মাধ্যমে সুরঞ্জনাকে মানুষ নতুন করে আবিষ্কার করবে। বলাই বাহুল্য আমাদের জীবনে প্রতিদিন শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে আমরা মানসিক অসুস্থতা নিয়ে যেভাবে চিন্তিত হই কখনোই তেমন ভাবে আমাদের চিন্তা করা হয়নি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে মানসিকভাবে আমরা যেভাবে অসুস্থ থাকি তার জন্য আমরা নিজেকে কিভাবে তৈরি করি, কখনই তৈরি করা হয়নি। তার জন্য আমরা যেটা করতে পারি তা হল আমরা শিল্পকে বেছে নিতে পারি। আর্টকে বেছে নিতে পারি। অথচ তিনি নিজে অসুস্থ থাকার পর কখন ডিপ্রেশনকে বেছে নেননি। তিনি জীবনকে বেছে নিয়েছেন, তার জন্য তিনি আর্ট আর শিল্পকে বেছে নিয়েছেন। তার অসুস্থতার সময়ে তার যে গল্প তৈরি হয়েছে তার জন্য শিল্পী হিসেবে শ্রদ্ধার দাবিদার সুরঞ্জনা ভট্টাচায।

ব্যতিক্রমী এই প্রদর্শনীর প্রসঙ্গে সুরঞ্জনা বলেন, আসলে আমি এক্সিজিবিশন করবো এই স্বপ্ন নিয়ে কখনও কাজ শুরু করিনি। ২০১৪ সালে আমি হঠাৎ করে আমি বাংলাদেশে আসার পরে আমার কাঁধ থেকে কোমর পর্যন্ত প্যারালাইজড হয়ে যায়। এরপর সারাদিন ঘরে একা। আমার স্বামী আমার পাশে একটা মুড়ির কৌটা এবং দুইটা পানির বোতল রেখে চলে যেত। প্রথমদিকে বিষয়টি মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হতো। এইভাবে মাস দুয়েক চলে গেল। তখন আমি চিন্তা করলাম যে একদিন তো মারাই যাব। নিশ্চয়ই সেখানে শুয়ে শুয়ে বেডশো হবে, পচে গলে মরে যাব, তার চেয়ে কিছু একটা করি। অন্তত যতটুকু পারি ততটুকু মুভমেন্টে যাই। তখন আমি আমার ছেলের জন্য একটা কাঁথা তৈরি করা শুরু করলাম। যেখানে কাঁথার মধ্যে কিছু কবিতা, কিছু ওরা যারা প্রিয় মানুষ, আমার ছেলের যারা প্রিয় লোক এরা আমাকে দেখতে আসতো আমার বন্ধু বান্ধবরা দেখতে আসতো, তারা আসার পরে আমি কাঁথাটা দিতাম, যে দু’কলম লিখে যাও,।

আমার ধারণা ছিল যে আমি আর বাঁচবো না, সো এই কাঁথাটা আমি যাওয়ার পরে আমার ছেলে পাবে, তো এই ভাবে শুরু করি কিন্তু কাঁথা শেষ হতে বেশি সময় লাগলোনা বন্ধু বান্ধবরা কেউ বাংলায় কেউ ফরাসিতে কেউ জার্মানে দুকলম করে লিখে গেছে, তো এই কাঁথা একদিন শেষ হয়ে গেলো, তখন কি করবো? তখন আমার বাসার ঠিক আমি যে বেডে শুতাম, আমার হাসপাতাল বেডের সামনেই একটা মাঁতিসের নীল নারী একটা পেন্টিং ছিল। ঐটা কোলাজ বলে, ঐটা ছিল আমার একদম চোঁখের সামনে, সারাক্ষণ ঐটাই দেখতাম, আর এমনিতেও মাঁতিসের কানিজ এরা আমার প্রিয়। তখন আমি চিন্তা করলাম আমি তো রং তুলিতে করতে পারবোনা, আমি কাঁথাতে করতে পারবো। আর ছোট আমি ছোটবেলাথেকেই সেলাই কাজ করি, আমাদের বাংগালী মেয়েদের তো সবার এইটা শেখানো হয়। তো আমি তখন ছোট ছোট টুকরো নিয়ে ওটা শুরু করলাম। এখন আমি মনে হয় ৪০-৪২ টা কাজ দিয়ে এক্সিবিশনটা শুরু করব, কিন্তু আমার এই ২০০৭ থেকে ২০২৪ অব্দি প্রায় একশোর মতো কাজ জমে গেছে।

এক্সিবিশন করবো এটা তো স্বপ্নের বাইরে ছিল এক্সিবিশন হচ্ছে বা সবাই যখন প্রশংসা করছে তখন মনে হয় যন্ত্রণার বাহিরেও কিছু পাওয়ার আছে মানুষ চাইলেই পায় এবং সেটা দিচ্ছে কিন্তু আমার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজন, আশা করি আস্তে আস্তে আরো নতুন বন্ধু হবে নতুন সম্পর্ক হবে। আশা করি প্রদর্শনী আমার বাকি জীবনে আরো ভালো কাজের প্রেরণা দেবে।

এবি/এইচএন

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান

নিজস্ব প্রতিবেদক : আমাদের কাছে সব...

২৫ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামীকাল শনিবা...

১০ টাকায় প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী...

সড়কে শৃঙ্খলা না থাকায় বাড়ছে দুর্ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ১৫ বছরে সড়ক...

আ’লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামীকাল শনিবা...

ধ্বংসস্তূপে জিম্বাবুয়ের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন

ক্রীড়া ডেস্ক: চট্টগ্রামের আকাশে মেঘের ঘনঘটা। হালকা বাতাসও বই...

২৫ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামীকাল শনিবা...

মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আসিফের অভিষেক

বিনোদন ডেস্ক: অস্কারজয়ী ভারতীয় সু...

ওরাল ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহিলা ও শিশু ব...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা