বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের কোলঘেঁষা জনপদ বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা। কিন্তু এ এলাকার হাট-বাজারগুলোতে এখন পরিবেশ বিধ্বংসী নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যাগে সয়লাব। অবাধে পলিথিনের বিক্রি ও ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য ও সুন্দরবনের উপকূলীয় এলাকার পরিবেশ। রাস্তাঘাট, নদী-নালা ও ড্রেনে পলিথিনের আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ায় তৈরি হচ্ছে জলজট ও ভূমিদূষণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ৮ এপ্রিল সরকারি সিদ্ধান্তে দেশে সব ধরনের পলিথিনের শপিং ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, মজুদ, বিতরণ ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রজ্ঞাপন জারির পর কিছুদিন পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ থাকলেও বর্তমানে আইনি প্রয়োগের অভাবে মোরেলগঞ্জ পৌরসদর বাজারসহ উপজেলার সবখানেই প্রকাশ্যে এর ব্যবহার বেড়েছে।
উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে ছোট-বড় মিলিয়ে অর্ধশতাধিক হাটবাজার রয়েছে। এসব বাজার ছাড়াও পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে পণ্য সামগ্রীর সঙ্গে পলিথিনের ব্যাগ দেওয়ায় এর ব্যবহার লাগামহীনভাবে বাড়ছে। মোরেলগঞ্জ পৌর সদর বাজার, সন্ন্যাসী, খাউলিয়া, আমতলী, নব্বৈরশি বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের হাটে হরহামেশায় এসব নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রি হচ্ছে।
মোরেলগঞ্জ বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন ফরাজি জানান, পলিথিন তুলনামূলক সস্তা ও সহজলভ্য। তিনি মনে করেন, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের তৈরি ব্যাগ বাজারজাত করা হলে এই ভয়াবহতা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যেত। একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এখন আর ক্রেতারা ব্যাগ নিয়ে বাজারে আসেন না, তাই বেচাকেনার স্বার্থে তাঁদের পলিথিনের ব্যাগ দিতে হচ্ছে।
মোরেলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির বলেন, পলিথিন পরিবেশের জন্য বড় হুমকি। এটি মানুষ ও পরিবেশের জন্য দুর্ভোগ ডেকে আনে। পলিথিন পচনশীল না হওয়ায় এটি মাটি ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে, যা 'স্থল মাইনের চেয়েও ভয়াবহ'।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, পলিথিন পঁচে না, ফলে এটি মাটির উর্বরতা শক্তি কমিয়ে ফেলে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামাল হোসেন মুফতি এবং বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. আ. স. মো. মাহবুবুল আলমও পলিথিনকে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে এর ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা ও কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপের ওপর জোর দেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আইন অমান্য করে পলিথিন উৎপাদন, আমদানি, মজুদ ও বাজারজাতকারীকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। ব্যবহারকারীকে ছয় মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি শহিদুল হক বাবুল বলেন, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও কঠোর আইন থাকার পরও পলিথিনের ব্যবহার কমছে না। এ জন্য সচেতনতার পাশাপাশি প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাগেরহাটের সহকারী পরিচালক শরিফা সুলতানা জানান, সরকারিভাবে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটজাত পণ্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং পলিথিনের ভয়াবহতা সম্পর্কে সাধারণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুন্দরবনের উপকূলীয় এই অঞ্চলে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার এখনই বন্ধ করা না গেলে তা ভবিষ্যতে পরিবেশের ওপর মারাত্মক বিপজ্জনক পরিণতি নিয়ে আসবে।
আমারবাঙলা/এফএইচ