অনিশ্চয়তার মেঘ কেটে গেছে। এশিয়া কাপ ক্রিকেট যথাসময়েই শুরু হচ্ছে। রবিবার (৩ আগস্ট) রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুটির ভেন্যুর নামও জানিয়ে দিয়েছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)।
সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ায় বহুল প্রতীক্ষিত ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ আবারও দেখার সুযোগ পাচ্ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল। সুপার ফোরে উঠলে তাদের আরেকটি লড়াই দেখা যাবে ২১ সেপ্টেম্বর। এমনকি ২৮ সেপ্টেম্বর ফাইনালেও দেখা হতে পারে তাদের।
অথচ সম্প্রতি পেহেলগাম হামলার জেরে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাত লেগে গিয়েছিল। তখন ভারতের কয়েকজন সাবেক ক্রিকেটার, এমনকি দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) পক্ষ থেকেও বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় সিরিজ তো নয়ই; তারা এসিসি ও আইসিসির টুর্নামেন্টেও পাকিস্তানের বিপক্ষে আর কখনো খেলবে না।
কিন্তু দুই দেশের শীতল সম্পর্কের বরফ কিছুটা গলতেই পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে রাজি হয়েছে ভারত। এ নিয়ে নরেন্দ্র মোদির সরকার ও বিসিসিআইয়ের বিরুদ্ধে ভারতেরই কেউ কেউ সরব হয়েছেন।
এই তালিকায় সর্বশেষ নাম প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী। ৪৫ বছর বয়সী প্রিয়াঙ্কা ভারতের মহারাষ্ট্রভিত্তিক রাজনৈতিক দল শিবসেনার (ইউবিটি) নেত্রী ও রাজ্যসভার সংসদ সদস্য। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে রাজি হওয়ায় তিনি ভারত সরকার ও ক্রিকেট বোর্ডকে নির্লজ্জ বলেছেন।
আজ সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রিয়াঙ্কা ক্ষোভ নিয়ে লিখেছেন, ‘ব্লকবাস্টার ফিকশ্চার: ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ ১৪ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত হয়েছে। সুপার ফোর এবং ফাইনালে আবারও মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। (এতেই স্পষ্ট) আমাদের ভারতীয় ভাই ও আমাদের উর্দি পরা যোদ্ধাদের রক্তের চেয়ে অর্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে ভণ্ডামির কারণে ভারত সরকারের লজ্জা হওয়া উচিত। আর প্রিয় বিসিসিআই, এটা শুধু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অর্থ নয়, এটা অভিশপ্ত অর্থও হবে।’
গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারান, আহত হন ১০ জন। এ ঘটনায় পাকিস্তানের মদদ আছে বলে দাবি করে ভারত সরকার। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে নেয় বিদ্রোহী গ্রুপ দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ), যাদেরকে পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তাইয়েবার একটি শাখা মনে করে ভারত।
ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে বিরোধ সৃষ্টি হয়। মে মাসের শুরুর দিকে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাত লেগে যায়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় কদিন পরই তারা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়।
প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী শুধু ক্ষোভ প্রকাশ করেই থামেননি; এক্সে নিজের আরেকটি পোস্টে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ থেকে লাভবান হতে চাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন, ‘ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করা প্রতিটি পৃষ্ঠপোষক, সম্প্রচারকারী চ্যানেল ও স্ট্রিমিং অ্যাপকে চিহ্নিত করুন যেন তাদের লজ্জা দেওয়া যায়। বিসিসিআই এবং ভারত সরকার স্পষ্টতই নির্লজ্জভাবে এই ম্যাচ আয়োজনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ভারতীয় নাগরিকদের কণ্ঠস্বর জোরালো হতে হবে।’
এই পোস্টে ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ইলেকট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কেও ট্যাগ করেছেন প্রিয়াঙ্কা, ‘আমি তথ্য ও সম্প্রচার এবং ইলেকট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচারকারী সব স্ট্রিমিং অ্যাপ ও টিভি চ্যানেলকে নিষিদ্ধ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। নাকি তারাও পিছু হটবে?’
প্রিয়াঙ্কার এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বার্তা সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছে, সরকার বিসিসিআইকে কোনো টুর্নামেন্টে ভারতীয় দল পাঠানো থেকে বিরত রাখতে পারে না, ‘বিসিসিআই ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নয়। কারণ, জাতীয় ক্রীড়া শাসন বিল এখনো পাস হয়নি। তাই মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য নেই। তবে আমরা অপেক্ষা করব এবং দেখব বিসিসিআই জনসাধারণের অনুভূতির প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়।’
আমারবাঙলা/জিজি