জাতীয়

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের শরণার্থীদের এক জায়গায় আনতে চায় মিজোরাম

বিবিসি বাংলা

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে আসা কয়েক হাজার শরণার্থীকে স্থানান্তরিত করে এক জায়গায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরাম সরকার। ত্রাণ বণ্টন ও শরণার্থীদের ওপরে নজর রাখার জন্যই এই পরিকল্পনা বলে রাজ্যটির সরকার জানাচ্ছে।

বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং পার্শ্ববর্তী মনিপুর থেকে ৪২ হাজারেরও বেশি মানুষ এখন শরণার্থী হয়ে মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে এসে বছর তিনেক ধরে মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছেন দুই হাজারের বেশি মানুষ, তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। মূলত বান্দরবানের নানা এলাকা থেকে এসেছেন তারা।

তাদের অভিযোগ বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যে অভিযান শুরু করেছিল, সেটি থেকে বাঁচতেই ভারতে পালিয়ে এসেছিলেন তারা। বাংলাদেশ পুলিশ অবশ্য সেই সময়ে বলেছিল যে এরা দেশ থেকে পালিয়ে যায়নি, নিরাপত্তাজনিত কারণে কিছু লোকজন চলে গিয়েছিল। এদের বেশিরভাগই দক্ষিণ মিজোরামের লংৎলাই জেলার কয়েকটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন।

বাংলাদেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের বেশিরভাগই বম জনগোষ্ঠীর মানুষ, তবে তাদের সঙ্গে কিছু টংটঙ্গিয়া গোষ্ঠীর মানুষও এসেছেন। বম জনগোষ্ঠীটি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। মিজোরামের মানুষ মনে করেন মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীরা একই জনগোষ্ঠীর সদস্য।


কেন স্থানান্তরের পরিকল্পনা?
মিজোরাম রাজ্যের নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শরণার্থীদের এক জায়গায় নিয়ে আসার যে পরিকল্পনা সরকার করছে, তা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা লালমুয়ানপুইয়া পুন্তে। দক্ষিণ মিজোরামের লংৎলাই জেলায় আশ্রয় নেওয়া দুই হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শরণার্থীদের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কয়েকদিন আগে একটি বৈঠক করেন পুন্তে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ওই বৈঠকে পুন্তে জানান শরণার্থীরা যাতে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো বিভিন্ন জায়গায় বসতি গড়তে না পারেন, সেজন্য একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাসরত শরণার্থীদের একটি জায়গায় স্থানান্তরিত করার জন্য সরকার একটা পরিকল্পনা নিচ্ছে, এ কথাও ওই বৈঠকে জানান পুন্তে। প্রশাসনিক সুবিধার জন্যই এটা দরকার, এমন মন্তব্যও করেছেন তিনি। তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে মানবিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের সুবিধা হবে।

লংৎলাই জেলার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে থাকা ২০১৪ জন বাংলাদেশি শরণার্থীকে স্থানান্তরিত করে ওই জেলারই চারটি গ্রামে নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন পুন্তে। জেলার ডেপুটি কমিশনারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমানা লাগোয়া দক্ষিণ মিজোরামের এই লংৎলাই জেলায় এই মুহূর্তে ৬০৩০ জন মিয়ানমারের নাগরিক, ২০১৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক এবং মনিপুর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা ৮৪ জন মানুষ রয়েছেন।

তাদের মানবিক সহায়তা, ত্রাণ সামগ্রী, খাবার ইত্যাদি দিয়ে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছে মিজোরামের শক্তিশালী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়াং মিজো অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমএ। তারা বলছে যে ত্রাণ বিলি-বণ্টনের সুবিধার জন্য একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলুক সরকার।

ওয়াইএমএর প্রেসিডেন্ট লালমাছুয়ানা বলেন, শরণার্থীদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের দাবি আমরা সরকারকে জানিয়েছিলাম। সেই কমিটি তৈরি হয়েছে, আমাদের প্রতিনিধিও আছেন সেখানে। এখানকার সরকার তো দীর্ঘদিন ধরেই মানবিক সহায়তা করে আসছে, আমরাও তাদের নিয়মিত রেশন দিচ্ছি। এই শরণার্থীরা তো সবাই আমাদের ভাই-বোন। কিন্তু আমাদেরও তো সীমাবদ্ধতা আছে। এখন দিল্লির সরকারের উচিত হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

মিজোরাম সরকারের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীরা বলছেন বিভিন্ন জায়গা থেকে শরণার্থীদের এক জায়গায় নিয়ে আসা হলে তারা সমস্যায় পড়তে পারেন। লংৎলাই জেলার পার্ভা-তে দুই বছর ধরে আশ্রয় নিয়েছেন বইলিয়ান থাংবম। তিনি আদতে বাংলাদেশের বান্দরবানের রুমা থানা এলাকার থিংদলতে পাড়ার বাসিন্দা।

তিনি বলছিলেন, আমরা এখন ৪০টি পরিবার থাকি। শুনছি অন্যান্য গ্রাম থেকে শরণার্থীদের নিয়ে আসা হবে। প্রায় ৩০০ পরিবার আসবে শুনতে পাচ্ছি। এখনও সঠিক জানি না। তবে এতে আমাদের তো সমস্যা হবে। সব গ্রামের শরণার্থী মানুষকে যদি এক জায়গায় নিয়ে আসে তাহলে তো চাপ বেড়ে যাবে। আমরা দিনমজুরি করে খাই। অন্য এলাকার শরণার্থীরাও চলে এলে তো মজুরি করে খাওয়ার লোকও বেড়ে যাবে। অত কাজ কই? এছাড়াও দোকান বাজারও তো সীমিত এখানে।

তিনি আরও জানাচ্ছিলেন সরকার থেকে চাল দেওয়ার কথা ছিল, এখনও সেই চাল পাওয়া যায়নি। শোনা যাচ্ছে দিন কয়েকের মধ্যে চাল দেবে। যে চাল পাওয়ার কথা বলছিলেন বইলিয়ান থাংবম, সেটা আসলে মিজোরামের শরণার্থীদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ করা চাল। ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে ওই চাল ইতিমধ্যেই জেলা সদরগুলিতে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে মিজোরামের খাদ্য দফতর।

ইয়াং মিজো অ্যাসোসিয়েশন বলছে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত আরও খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা, শরণার্থীদের পুনর্বাসনে আরও এগিয়ে আসা।

ওয়াইএমএর প্রেসিডেন্ট লালমাছুয়ানার কথায়, আমরা তো বছর দুয়েক ধরে এই শরণার্থীদের ঘর বানিয়ে দেওয়া, ত্রাণসামগ্রী দেওয়া, ওষুধ দেওয়া এসব করেই চলেছি। এরা অন্য দেশে থাকলেও আমাদেরই জাতিগোষ্ঠীর সদস্য– তাই আমাদের ভাই-বোন। মানবিকতার খাতিরেই তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব আমাদের। ত্রাণসামগ্রী যাতে সুষ্ঠুভাবে বিলি বণ্টন করা যায়, সেজন্য আমরাই রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করেছিলাম একটা উচ্চপর্যায়ের কমিটি গড়তে। এখন যদি সেই কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় যে শরণার্থীদের স্থানান্তরিত করে এক জায়গায় নিয়ে আসবে, তাতে দুটো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তিনি বলেন, প্রথমত স্থানান্তরের খরচ আছে একটা। সেটা কে বহন করবে, এটা একটা প্রশ্ন। আবার শরণার্থীরা এমন গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন, যেখানে তাদের ভারতীয় আত্মীয় স্বজনরা থাকেন। এদের যদি অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে বিদেশের মাটিতে আত্মীয়স্বজন ছাড়া থাকতে তাদের একটা সামাজিক সমস্যা হতে পারে।

মিজোরাম সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শরণার্থীদের কবে স্থানান্তরিত করা হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বইলিয়ান থাংবমের মতো হাজার দুয়েক বাংলাদেশি শরণার্থীর কাছে এটা স্পষ্ট যে নিজের দেশে, নিজের গ্রামে তাদের এখনই ফেরা হবে না।

আমার বাঙলা/এনবি

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আর দেরি নয়, তামাক নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ দরকার

জনস্বার্থে ন্যায্য ও সময়োপযোগী প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে দেশের ত...

ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রস্তুত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী  

ইসি যে সময় ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে সে সময়ের জন্য প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী&rs...

বাংলাদেশ সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কার টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণা

পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট...

খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনায় ট্রাম্পের ভেটো

বর্তমানে খুবই আলোচিত বিষয় হল ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেন...

ড্রয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ শুরু মেসির মায়ামির

নতুন কিছু প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে জমকালো উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আজ...

আজ সোমবার থেকে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস

গত কয়েকদিন ধরে মৃদু তাপপ্রবাহের পর বৃষ্টিপাতের আভাস পাওয়া গেছে। দেশের বেশিরভা...

ঈদযাত্রা ‘স্বস্তিদায়ক’ না হওয়ায় ‘দুর্ঘটনা ও হতাহত বেড়েছে’: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

উৎসব বা আনন্দ করতে গিয়ে অনেক সময় নিরানন্দে পরিণত সড়ক দুর্ঘটনার কারণে। তাই যথা...

বাবাকে নিয়ে মন্দিরার পোস্ট

পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ‘নীলচক্র’ ছবিতে অভিনয় করেছেন নবাগত...

বাংলাদেশ সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কার টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণা

পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট...

ইডেন কলেজের পুকুরের পানিতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের পুকুরের পানিতে সাঁতার শিখতে গিয়ে ডুবে সানজিদা আক্ত...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা