প্রতীকী ছবি
স্বাস্থ্য
এক হাজার ৬৬৮ জনকে নিয়ে গবেষণা

বছরে লাখে ক্যানসার রোগী শনাক্ত ৫৩ জন

জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধনে দেখা গেছে, দেশের একটি এলাকায় বছরে এক লাখ মানুষের মধ্যে ক্যানসার শনাক্ত হচ্ছে ৫৩ জনের। এ ছাড়া পুরুষের মধ্যে স্বরযন্ত্রের ক্যানসার বেশি, নারীর বেশি স্তন ক্যানসার। এ এলাকায় যত মৃত্যু হচ্ছে, তার ১২ শতাংশের পেছনে আছে ক্যানসার।

জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধনের কাজটি করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের শিক্ষক ও গবেষকেরা।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিএসএমএমইউতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই নিবন্ধনের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধনের তথ্য ক্যানসার প্রতিরোধ, প্রতিকার ও চিকিৎসায় ভূমিকা রাখবে। এই নিবন্ধন আরো বড় পরিসরে করা প্রয়োজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের প্রতিবেদনে অনুমিত হিসাব বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ক্যানসারে আক্রান্ত হয় এক লাখ ৬৭ হাজার ২৫৬ জন। তখনকার জনসংখ্যা অনুসারে প্রতি লাখে ১০০ জন নতুন ক্যানসার রোগী দেখা দেয়।

মূল উপস্থাপনায় বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলায় ৪৬ হাজার ৬৩১টি পরিবারের দুই লাখ এক হাজার ৬৬৮ জনকে আমরা গবেষণার আওতায় নিয়েছি। তাতে দেখা গেছে, ২১৪ জনের কোনো না কোনো ক্যানসার আছে। অর্থাৎ প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ক্যানসারে আক্রান্ত ১০৬ জন।

দেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসারের কোনো তথ্য বা পরিসংখ্যান ছিল না। কত মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত, কোন ক্যানসারে কত মানুষ বেশি ভুগছেন, এতকাল তা বলা হয়েছে অনুমিত হিসাব থেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বাংলাদেশের ক্যানসারের অনুমিত হিসাব ব্যবহার করে। বাস্তব অবস্থা বোঝার উপায় হচ্ছে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন। এটি মূলত গবেষণা।

শনিবারের অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আতিকুল হক বলেন, মানুষের মধ্যে ক্যানসারের প্রকোপ বুঝতে হলে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন থাকা প্রয়োজন। ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান এমনকি আফগানিস্তানে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন থাকলেও বাংলাদেশে তা ছিল না। এটি শুরু করেছে বিএসএমএমইউ।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় বিএসএমএমইউর গবেষকেরা ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ক্যানসার নিবন্ধন শুরু করেন। এরপর গবেষকেরা ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে এ বছরের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আরও ১৩ হাজার ৪১১টি পরিবারের তথ্য দ্বিতীয়বার নেন বা ফলোআপ করেন। সব তথ্যই গতকাল উপস্থাপন করা হয়।

মূল উপস্থাপনায় মো. খালেকুজ্জামান বলেন, হোসেনপুরের মানুষের মধ্যে ৩৮ ধরনের ক্যানসারের সন্ধান পাওয়া গেছে। ক্যানসার রোগীদের ৯৩ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৭৫ বছরের মধ্যে। ১৮ বছরের কম বয়সের বেশ কয়েকজন ক্যানসার রোগী আছেন হোসেনপুরে। তিনি বলেন, বেদনাদায়ক হচ্ছে সাত শতাংশের কিছু বেশি ক্যানসার রোগী কোনো ধরনের চিকিৎসা নেন না।

নিবন্ধনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পুরুষের মধ্যে পাঁচটি ক্যানসার বেশি। এর মধ্যে আছে স্বরযন্ত্র (১৩ শতাংশ), পাকস্থলী (১০ দশমিক চার শতাংশ), ফুসফুস (আট দশমিক সাত শতাংশ), ঠোঁট ও মুখগহ্বর (সাত শতাংশ) এবং খাদ্যনালির (ছয় দশমিক এক শতাংশ)। নারীদের প্রধান পাঁচটি ক্যানসারের মধ্যে আছে স্তন (৩৬ দশমিক চার শতাংশ), জরায়ুমুখ (১১ দশমিক এক শতাংশ), ঠোঁট ও মুখগহ্বর (১০ দশমিক এক শতাংশ) , থাইরয়েড (সাত দশমিক এক শতাংশ) এবং ডিম্বাশয়ের (পাঁচ দশমিক এক শতাংশ) ক্যানসার।

এসব তথ্য তুলে ধরার পর মো. খালেকুজ্জামান বলেন, ক্যানসারের রোগীদের মধ্যে ১৭ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ, ১১ শতাংশের ডায়াবেটিস, ছয় শতাংশের হৃদ্রোগ এবং তিন শতাংশের কিডনি রোগ আছে। দুই শতাংশ ক্যানসার রোগীর স্ট্রোকের ইতিহাস আছে। প্রায় ৭৬ শতাংশ পুরুষ ক্যানসার রোগীর ধূমপানের ইতিহাস আছে।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে একাধিক অংশগ্রহণকারী বলেন, সারা দেশের পরিস্থিতি বোঝার জন্য এ ধরনের নিবন্ধন আরো বড় পরিসরে হওয়া প্রয়োজন। একটি দেশের পরিস্থিতি জানা-বোঝার জন্য অন্তত পাঁচ লাখ মানুষকে গবেষণার আওতায় নিতে হয়। এই গবেষণায় দুই লাখ মানুষের তথ্য নেওয়া হয়েছে। কেউ বলেন, বিএসএমএমইউর এই কাজ যেন অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে না যায়, সে ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগী ভূমিকা দরকার।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, নিত্যনতুন জ্ঞান তৈরিতে গবেষণার বিকল্প নেই। বিএসএমএমইউ থেকে সেই গবেষণা হওয়া উচিত; যা রোগীদের কল্যাণে কাজে আসে। যেসব গবেষণা দেশের মানুষের, দেশের রোগীদের উপকার হবে, সে ক্ষেত্রে সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, গণ-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে এমন গবেষণার জন্য অর্থের কোনো সমস্যা হবে না। জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন থেকে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে, তা দেশের মানুষের ক্যানসার প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় বড় ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশে ক্যানসার গবেষণার বহুমুখী দ্বার উন্মোচন করবে।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

রাস্তা অবরোধ করার অধিকার কারো নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ফরিদপুরের সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাস্তা অবরোধের ঘট...

১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্য...

সুশীলা কারকির উত্থান যেভাবে

নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্...

আয়ের দিক দিয়ে ফের মেসিকে ছাড়িয়ে শীর্ষে রোনালদো

রেকর্ডের দৌড়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলে। কিন্...

সাবালেঙ্কার সাফল্যের রহস্য

সদ্য ইউএস ওপেন নারী এককের শিরোপাজয়ী বেলারুশের টেনিসকন্যা আরিনা সাবালেঙ্কা নিজ...

রাকসু নির্বাচনে কার কী প্যানেল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-রাকসু নির্বাচনের এ পর্যন্ত নয়টি প্...

এমিতে ‘অ্যাডোলেন্স’-এর জয়জয়াকার

বাংলাদেশ সময় সোমবার (১৫ ) সকালে ঘোষণা করা হলো ৭৭তম এমি অ্যাওয়ার্ডস। এদিন এমির...

আলজেরিয়ায় নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ

আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আব্দেলমাজিদ তেববুন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সিফ...

বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে তিস্তার পানি

টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি আব...

নেপালের প্রথম নারী অ্যাটর্নি জেনারেল হলেন সাবিতা ভাণ্ডারি

নেপালে প্রথমবারের মতো অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ পেয়েছেন একজন নারী। প্রেসিডে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা