ঐতিহ্য ও কৃষ্টি

বগুড়ায় মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে, এই শিল্পের সাথে থেকে চলছে না সংসার

বগুড়া প্রতিনিধি

বগুড়ায় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মাটির তৈরী তৈজসপত্রের চাহিদা শহরের পাশাপাশি গ্রামেও কমে গেছে। ফলে এ শিল্পের সাথে জড়িত পাল সম্প্রদায়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

অনেকেই ইতোমধ্যে পেশা পরিবর্তন করেছেন। পালপাড়ায় আগে যে ব্যস্ততা দেখা যেতো,সে ব্যস্ততা এখন আর নেই। সারি সারি মাটির তৈজসপত্র এখন আর তেমনভাবে নজরে পড়ে না। মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা আগের মত না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র।

গ্রাম-বাংলার অতীত ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে মৃৎশিল্প। এমন একসময় ছিল যখন পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল কাজে মাটির তৈরি জিনিসের বিকল্প ছিল না। মৃৎশিল্পীরা একসময়ে শুধুমাত্র নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে শুকনা খড়, লাকড়ি, মাটি, বালি ও পানির সাহায্যে তৈরি করতেন দধির পাত্র, পিঠাখোলা, ভাতের পাতিল, পাতিলের ঢাকনা, তরকারি কড়াই, রসের হাড়ি, ধুপ জ্বালানি পাত্র, মুড়ির পাতিল, বাতি জ্বালানি পাত্র, জলকান্দা শিশুদের জন্য বিভিন্ন রকমের মাটির তৈরি খেলনা।

কিন্তু কালের পরিক্রমায় বাহারি ডিজাইনের প্লাস্টিক, মেলামাইন, ষ্টিল, বিদ্যুৎ চালিত রাইসকুকার, সিরামিক ও সিলভারের জিনিষ ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কমে গেছে। যার কারণে এই শিল্পের সাথে জড়িত মানুষের একদিকে যেমন কমে গেছে কাজের পরিধি,তেমনি কমেছে উপার্জন। জীবন-জীবিকার জন্য বাধ্য হয়ে অনেকেই বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত। আধুনিক জিনিসপত্রের ভিড়ে মাটির দাম বৃদ্ধিসহ নানা সংকট এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে বলে জানান মৃৎশিল্পীরা। পেশার চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় মৃৎশিল্পীদের বর্তমান প্রজন্মের কেউ কেউ পেশা পরিবর্তন করেছে।

মাটির অভাব এবং জ্বালানীর দাম বৃদ্ধির ফলে এ শিল্পের সাথে যুক্ত থাকা পাল সম্প্রদায়ের মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বগুড়ার নন্দীগ্রামের ৫নং ভাটগ্রাম ইউনিয়নের হাটকড়ই গ্রামের পালপাড়ার প্রায় এক শতাধিক পাল পরিবার মৃৎশিল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন। চল্লিশটি পরিবার এখনও এ পেশার সাথে যুক্ত রয়েছেন। এ পেশাকে আশ্রয় করে জীবন-জীবিকা ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগান দিয়ে আসছেন।

এই পালপাড়ায় একশো বছরেরও অধিক সময় ধরে এই মৃৎশিল্পের কাজ চলে আসছে। পালপাড়ায় আগে যে ব্যস্ততা দেখা যেতো সেই ব্যস্ততা এখন আর নেই। সারি সারি মাটির তৈজসপত্র এখন তেমন নজরে পড়ে না।

সরেজমিনে পালপাড়ায় দেখা যায়,৪০ টা পরিবার এখনও বাপ-দাদার এই শিল্পকে ধরে রেখেছেন। কেউ দইয়ের পাতিল তৈরি করছেন। কেউ হাঁড়ি-পাতিল সহ ২০_২৫ রকমের মাটির জিনিসের কাজ করছেন। আর দইয়ের পাতিল হাঁড়ি পাতিল রোদে শুকানো সহ সব ধরনের কাজে পুরুষদের সহযোগীতা করছেন পরিবারের নারী ও শিশুরা।

এদিকে শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া পালপাড়ায় ১০০ টি পরিবারের বসবাস। প্রত্যেক পরিবারেই কেউ না কেউ ধরে রেখেছেন তাদের বাপ দাদার আদি ব্যবসা। উপজেলার আড়িয়া পালপাড়া ঘুরে দেখা গেছে । মাটি দিয়ে দইয়ের সরা আর গ্লাস সহ বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরি করছে হাটকড়ই গ্রামের পালপাড়ার নির্মলা রাণী পাল, পারুল রাণী, মাধুরী পাল। শ্রী গঙ্গা পাল বলেন, আমাদের মূল সমস্যা মাটি পাওয়া যায় না। মাটি কষ্ট করে ম্যানেজ করতে হয়, আর জিনিসপাতি তৈরি করেই লাভ কি, আগের মত বিক্রি হয় না। শুধুমাত্র এখন বাপ দাদার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আমরা কাজ করছি। এই কাজ করে এখন আমাদের সংসার চলে না। পাশাপাশি অনেক ধরনের কাজ করতে হয় আমাদের। আগে মাটির জিনিস খুব ভালো চলত এখন আর তেমন ভাবে চলে না।

কারণ বাজারে এখন প্লাস্টিক সহ বিভিন্ন রকমের পণ্য পাওয়া যায়। এই কারণেই কেউ নিতে চায় না। আগে পালপাড়ার অনেক পরিবারে এই শিল্পর সাথে যুক্ত ছিল। এখানকার অর্ধেক পরিবার এই পেশা বাদ দিয়ে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছে। মৃৎশিল্পর দিকে যদি সরকার ও বগুড়ার ডিসি নজর দিত, সহযোগিতা করতো, তাহলে এই কাজ করে দুটা ডাল ভাত খেতে পারতাম আমরা। এই পেশার সাথে থেকে যদি সংসারই না চলে তাহলে এই পেশা বাধ্য হয়েই ছেড়ে দিতে হবে।

আড়িয়া পালপাড়া উদয়ন পাল জানান, তার বাবা মৃত ভুপেন পাল একসময় ফেরি করে বিভিন্ন মেলায় খেলনা থেকে শুরু করে সংসারের বিভিন্ন তৈজস পত্র বিক্রি করতেন। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মাটির তৈরি জিনিসের স্থান দখল করেছে প্লাস্টিক। দাম কম হওয়ার কারণে মানুষ এখন প্লাস্টিকের জিনিস বেশি ব্যবহার করেন। একারণে পাল পাড়ার অনেকেই আর মাটি দিয়ে খেলনা তৈরি করেন না।

বাবার হাত ধরে শেখা খেলনা এবং শো-পিস তৈরির কাজটি ধরে রেখেছেন উদয়ন পাল। তিনি ১৫-২০ আইটেমের খেলনা এবং শো-পিস তৈরি করছেন। তৈজস পত্র বিক্রি করেন মহাস্থান, ভিন্ন জগত, স্বপ্নপুরি, রাজশাহী, কুয়াকাটা এলাকায় পিকনিক স্পটগুলোতে মাটির তৈরি খেলনা এবং শো-পিস সরবরাহ করে থাকেন।

আমারবাঙলা/ইউকে

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে দ্বিমুখী চিত্রে নগরবাসীর ক্ষোভ

চট্টগ্রাম নগরীর সড়কে চলছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বিরোধী অভিযান। একদিকে ট্রাফ...

ভিসা প্রতরণার নতুন কৌশল;ফেসবুকে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা দেওয়ার নামে প্রতারণা 

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে অনলাইনে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা দেওয়ার নামে প্রতা...

লক্ষ্মীপুর পৌরসভা-  প্রকৌশলীসহ ৩৯ জনকে দুদকে তলব 

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুর পৌরসভার প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বির...

যশোরে তরুণদের মধ্যে বাড়ছে এইচআইভি সংক্রমণ

সীমান্তবর্তী জেলা যশোরে আশঙ্কাজনকভাবে এইচআইভি সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ...

সুনামগঞ্জে যুবদলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

সুনামগঞ্জে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আনন্দ...

‘হ্যাঁ’ ‘না’ পোস্টে সরগরম ফেসবুক 

সামাজিক যোগাযোগামাধ্যম ফেসবুকে তোলপাড় চলছে ‘হ্যাঁ’ ‘না&rsqu...

ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নারী বিশ্বকাপে ইতিহাস দক্ষিণ আফ্রিকার

আক্ষেপ ঘুচল দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েদের। প্রথমবারের মতো নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফা...

নভেম্বরেই গণভোটের দাবিতে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতসহ ৮ দল

আগামী নভেম্বরেই গণভোটের দাবিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেবে...

২০৩৪ সালের মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি গড়বে বিএনপি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জানিয়েছেন,...

হামাসের নিরস্ত্রীকরণ প্রশ্নে প্রায় ৭০ শতাংশ ফিলিস্তিনি ঘোরবিরোধী

হামাস নিরস্ত্র হোক, চান না ৭০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বেশির ভাগ ফিলিস্তিনি...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা