দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে নাব্যতা ও ঘাট সংকটে ঈদযাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে।
পদ্মা সেতু চালুর পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ অনেকটা কমেছে। তবে ঈদে রাজধানী থেকে ফেরা যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পায় স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ। যাত্রী ও যানবাহনের চাপে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ঘরমুখো যাত্রী ও চালকদের। যে কারণে আসন্ন ঈদুল ফিতরে যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত কয়েকমাস ধরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে নাব্যতা সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। নাব্যতা সংকটের পাশাপাশি দৌলতদিয়া প্রান্তে বন্ধ রয়েছে ৪টি ফেরিঘাট। ঘাট সংকট ও নাব্যতা সংকটে ফেরি চলাচল ব্যাহতসহ অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ঘরে ফেরা যাত্রীদের দুর্ভোগের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পদ্মায় নৌপথে ফেরি সার্ভিস লঞ্চসহ অন্যান্য জলযানসমূহের সুষ্ঠুভাবে চলাচল নিশ্চিতকল্পে ঘাটের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও যাত্রীসাধারণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে গত রবিবার গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নাহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে ঘাট পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলা পরিষদের হলরুমে সার্বিক আলোচনা হয়। সভায় গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউ টিএ, বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভাসূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদযাত্রায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৭টি ফেরি ও ২০টি লঞ্চ চলাচল করবে। ফেরিগুলোর মধ্যে ৯টি রো রো (বড় ফেরি), ৩টি কে টাইপ ও ৫টি ছোট ফেরি রয়েছে।
সোমবার (২৪ মার্চ) সরেজমিন, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া প্রান্তের ৭টি ঘাটের মধ্যে ৪টি ঘাটই বন্ধ রয়েছে। ৩টি ঘাট দিয়ে ফেরি লোড-আনলোড করা হচ্ছে। দৌলতদিয়া প্রান্তের লঞ্চঘাট থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় ১টি চ্যানেল দিয়ে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল করছে। সেখানে দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। একাধিক লঞ্চচালক দুর্ঘটনার শঙ্কার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ফেরিঘাটে প্রচণ্ড ধুলাবালিও রয়েছে। কোন সমস্যায় দৌলতদিয়া প্রান্তের ১টি ফেরিঘাট বন্ধ হয়ে গেলে ২টি ঘাট দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করতে হবে।
বাস টার্মিনাল এলাকায় বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও তাদের সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া থেকে মৌসুমি কাউন্টার বসানো হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে এসব কাউন্টার বসাতেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে অনেকেই কাউন্টার বসানোর পরিকল্পনার জন্য দেন-দরবার শুরু করেছেন। মৌসুমি কাউন্টারে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয় বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে।
কয়েকজন যাত্রীদের সাথে কথা হয় ঈদযাত্রা নিয়ে, তারা বলেন, প্রতি বছর প্রশাসন সভা করেন। কিন্তু, সেই সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় না। দৌলতদিয়া টার্মিনাল থেকে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়। তিন চাকার যানবাহনগুলোও অতিরিক্ত ভাড়া নেয়। প্রশাসন এসব দেখে কোন বছরই অতিরিক্ত ভাড়া প্রতিরোধ করতে পারেনি। তাছাড়া ফেরিঘাট এলাকায় ঈদকে সামনে রেখে ছিনতাইকারীর দৌরাত্ব ও বৃদ্ধি পায়। তবে ঈদের আগে বেশ কয়েকজন ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজকে পুলিশ গ্রেফতার করায় সেটা সবার জন্য স্বস্তির খবর হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে এবারের ঈদযাত্রায় ১৭টি ফেরি চলাচল করবে। ৩টি ঘাট দিয়ে ফেরি লোড-আনলোডে কোন সমস্যা হবে না বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ফেরিঘাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। অভিযানে চুরি, ডাকাতি ছিনতাইয়ের মূল হোতা আজগর শেখ ও রাজুসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। ঈদযাত্রায় স্বস্তি ফেরাতে পুলিশ ঘাট এলাকায় দিনরাত কাজ করছে।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দে প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে। সেখানে মোবাইল কোর্ট, পুলিশ, আনসার সদস্যসহ ফায়ার সার্ভিস কাজ করবেন। ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে বলে দাবি করেন তিনি।
আমারবাঙলা/জিজি
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            