খেলা

নাজমুল কী পেলে টেস্ট অধিনায়ক থাকবেন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

খুব ভালো হতো শিরোনামের প্রশ্নটা সরাসরি নাজমুল হোসেনকেই করা গেলে। সে উপায় আপাতত নেই। সিরিজের মাঝখানে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন ছাড়া ক্রিকেটারদের গণমাধ্যমে কথা বলা বারণ। তার ওপর নাজমুল নিজেই তো টেস্ট দলের অধিনায়ক!

শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর তিনি আর টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দেবেন কি না, সেটা অবশ্য একটা প্রশ্ন এবং সে প্রশ্ন হঠাৎই সামনে আসেনি। শ্রীলঙ্কায় আসার আগমুহূর্তে যখন বিসিবি আকস্মিক নাজমুলকে সরিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজকে ওয়ানডের নেতৃত্বে আনল, তখন থেকেই আলোচনাটা চলছে।

নাজমুল তখনই বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগকে জানিয়েছিলেন, ওয়ানডে অধিনায়কত্বে না রাখলে তিনি আর টেস্ট অধিনায়কও থাকতে চান না। কারণ, তিনি মনে করেন, এক ড্রেসিংরুমে তিন অধিনায়কের উপস্থিতি বাংলাদেশের ক্রিকেটে নানাভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর নেতৃত্বকে পুরোপুরি বিদায় বলতে পারেন, দিয়েছিলেন সে আভাসও।

প্রশ্নটাও তখন থেকে-এই সিরিজের পর নাজমুল কি সত্যিই টেস্ট দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন? যদিও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসাটা এখনই সময়ের দাবি নয়। কাল থেকে শুরু হতে যাওয়া কলম্বো টেস্টের পর বাংলাদেশ দল আবার টেস্ট খেলবে নভেম্বর-ডিসেম্বরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে। মাঝে সবই ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি। তার মানে টেস্ট অধিনায়কত্ব নিয়ে সিদ্ধান্তে আসার আগে চিন্তাভাবনার জন্য হাতে প্রায় পাঁচ মাসের মতো সময় আছে।

আর বিষয়টি নিয়ে যেহেতু জটিলতার সৃষ্টি হয়েই গেছে, নাজমুল বা বিসিবি-দুই পক্ষেরই উচিত হবে ঝোড়ো সময়ে তাড়াহুড়া করে এর সমাধান খুঁজে জটিলতা আর না বাড়ানো। ভেবেচিন্তে এগোনোর যথেষ্ট সময় হাতে আছে। কে না জানে-সময় অনেক কিছুই বদলে দেয়।

নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বগুণ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। তবে নাজমুলকে ওয়ানডে নেতৃত্ব থেকে বাদ দেওয়ার যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা থাকাটা জরুরি ছিল, যেটি তাঁকে দেয়নি বিসিবি। শুধু সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে যে তিনি আর ওয়ানডে দলের নেতৃত্বে থাকছেন না।

বিসিবি চাইলে বলতে পারে, নাজমুলকে তো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেটি যখন শেষ, এখন দায়িত্বটা অন্য কাউকে দেওয়া যেতেই পারে। তবে প্রশ্ন সেটি নয়। প্রশ্ন হলো একজন অধিনায়ককে ‘সাবেক’ করে দেওয়ার প্রক্রিয়াটা তাঁকে যথাযথ সম্মান জানিয়ে সম্পন্ন হলো কি না, সেটা। এ রকম সিদ্ধান্তের আগে ‘বিদায়ী অধিনায়কে’র সঙ্গে সৌজন্যতার স্বার্থে হলেও আলোচনা করে নেওয়া উচিত। নাজমুলের বেলায় তা হয়নি বলেই এত প্রশ্ন।

তিন সংস্করণের অধিনায়ক নাজমুলকে করা হয়েছিল গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি। এরপর গত মে মাসে টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব দেওয়া হয় লিটন দাসকে, নাজমুল থেকে যান টেস্ট আর ওয়ানডের অধিনায়ক। সর্বশেষ ১২ জুন বিসিবি নাজমুলের পরিবর্তে মিরাজকে ওয়ানডের অধিনায়ক ঘোষণা করে সবাইকে চমক দেয়, নাজমুল হয়ে যান শুধুই টেস্ট অধিনায়ক। অধিনায়কত্ব নিয়ে সর্বশেষ বিতর্কের শুরু তখন থেকেই।

গত বছর তিন সংস্করণের নেতৃত্ব পাওয়ার আগে নাজমুল দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, অধিনায়কত্ব দেওয়া হলে সেটি তিনি লম্বা সময়ের জন্যই চাইবেন। সঙ্গে এও জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ দলে তিন সংস্করণে তিন অধিনায়কের ধারণাকে তিনি সমর্থন করেন না। নাজমুলের মত ছিল, তিন সংস্করণে একজন অধিনায়ক রাখাই ভালো। যদিও ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হতে পরে টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব তিনি নিজেই ছেড়ে দেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে টেস্টের অধিনায়কত্ব ছাড়ার চিন্তা করলেও নাজমুল এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি বলেই জানিয়েছে সূত্র। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। কারণ, শ্রীলঙ্কা সিরিজ শেষে বিসিবির সঙ্গে আলোচনা করেই নিতে চান সিদ্ধান্তটা। নাজমুল যদি শেষ পর্যন্ত ঠিক করেন যে টেস্টের নেতৃত্ব চালিয়ে যাবেন, সে ক্ষেত্রে বিসিবির কাছে টেস্ট দলে সুস্পষ্টভাবে নিজের কর্তৃত্ব বুঝে নিতে চাইবেন তিনি। চাইবেন টেস্ট দলের সবকিছুতে যেন তাঁর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো হয়।

তিন সংস্করণের নেতৃত্ব পাওয়ার পর লম্বা সময়ের পরিকল্পনা করে এগুচ্ছিলেন নাজমুল। বিশেষ করে ২০২৭ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ওয়ানডের জন্য বিশেষ কিছু পরিকল্পনা ছিল তাঁর। গত দেড় বছরে ক্রিকেটারদের সঙ্গে সেভাবে বোঝাপড়া তৈরি করেছেন। প্রধান কোচসহ কোচিং স্টাফের অন্য সদস্যদের সঙ্গেও জমিয়ে তুলেছিলেন মিথস্ক্রিয়া। মাঝে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে ভাটার টান গেলেও অধিনায়ক নাজমুলের নেতৃত্বগুণ আলাদাভাবেই চোখে পড়েছে সব সময়।

কিন্তু যখনই তাঁর দেড় বছরে প্রক্রিয়ার ফলাফল আসার সময় হলো, তখনই ওয়ানডের নেতৃত্ব থেকে নাজমুলকে সরিয়ে দেওয়া হলো। কেন, কী কারণে-অদ্ভুতভাবে সেসবেরও কোনো ব্যাখ্যা নেই! তাতে নাজমুলের এত দিন ধরে দলটাকে গুছিয়ে আনা যেমন বৃথা গেল, নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক মিরাজকেও এখন আবার সবকিছু নতুন করে করতে হবে, যা প্রায় দেড় বছর ধরে একটু একটু করে এগিয়ে এনেছিলেন নাজমুল।

এ তো গেল ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর পরিকল্পনার অপচয়ের প্রসঙ্গ। বাংলাদেশ দলে তিন অধিনায়কের উপস্থিতির কিছু নেতিবাচক প্রভাব নিয়েও আলোচনা আছে, যা বিভিন্ন সময়ে তাঁর কথাবার্তা থেকেও বুঝেছেন ঘনিষ্ঠজন এবং বোর্ডের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিরা।

প্রথমত, অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে তিন সংস্করণেই যেহেতু ঘুরেফিরে বাংলাদেশ দলে একই ক্রিকেটাররা খেলেন। ফলে প্রতিটি সংস্করণের অধিনায়কই চাইবেন সেরা খেলোয়াড়দের দিয়ে নিজের দল ভারী করতে। তাতে অধিনায়ক হিসেবে সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে।

কিন্তু বাংলাদেশ দলে, বিশেষ করে পেস বোলিংয়ে এমন কিছু ক্রিকেটার আছেন, বিসিবি যাঁদের বিশ্রাম দিয়ে খেলানোর প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আসছে। পেসারদের বাইরে সংস্করণভেদে ‘বিশ্রাম’ দেওয়া বা টিম কম্বিনেশনের কারণে একটি সংস্করণের অধিনায়ক তাঁর দলে নির্দিষ্ট কাউকে চাইতে পারেন আবার না–ও চাইতে পারেন।

এ ক্ষেত্রে টেস্ট ও ওয়ানডের অধিনায়ক একই হওয়ার সুবিধা হলো, কোচ-নির্বাচকদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে অধিনায়ক ঠিক করে নিতে পারেন কাকে কোন সংস্করণে খেলাবেন এবং কাকে কোন সংস্করণে খেলাবেন না। ভিন্ন ভিন্ন অধিনায়ক থাকলে সে ব্যবস্থাপনা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। কারণ, একই ক্রিকেটারকে দুই সংস্করণের অধিনায়কই দলে চাইতে পারেন। তাতে বাধাগ্রস্ত হতে পারে দুই অধিনায়কের পরিকল্পনা বাস্তবায়নই।

টেস্ট ও ওয়ানডেতে পৃথক অধিনায়ক থাকার সময় অতীতে বাংলাদেশ দল আরও একটি সমস্যারও মুখোমুখি হয়েছিল বলে শ্রুত আছে। দুই অধিনায়কের ‘প্রিয়ভাজন’ হওয়ার উদ্দেশ্যে একজনের কাছে গিয়ে আরেকজনের নামে অভিযোগনামা প্রকাশ করা হতো, যা ড্রেসিংরুমের আবহে অস্বস্তিও আনত। ওয়ানডে ও টেস্ট দলে যেহেতু ‘কমন’ ক্রিকেটারের সংখ্যা বেশি; এই দুই সংস্করণে একজন অধিনায়ক থাকলে সে রকম পরিস্থিতি এড়ানো যায়। অধিনায়কের প্রতি ক্রিকেটারদের সমীহ-শ্রদ্ধাও বাড়ে।

টেস্ট-ওয়ানডের নেতৃত্বে ভাগাভাগি দলের প্রতি ক্রিকেটারদের কমিটমেন্টও দুই ভাগ করে দিতে পারে। কারণ, তাঁদেরও তখন সুযোগ তৈরি হয় পছন্দের সংস্করণের অধিনায়কের ছায়ায় চলে গিয়ে সংস্করণ বাছাইয়ের উদ্দেশ্য হাসিল করা। আট বছর জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতায় দূর থেকে হলেও সে রকম পরিস্থিতি নাজমুল দেখে থাকবেন। আর সে কারণেই বাংলাদেশ দলে সংস্করণভেদে, বিশেষ করে টেস্ট ও ওয়ানডেতে ভিন্ন ভিন্ন অধিনায়কের পক্ষে তিনি কখনোই নন।

তবু বিসিবি আবারও সে পথে গেছে। অন্যদিকে নাজমুলও নিজের পথ থেকে সরতে চান না। টেস্ট ও ওয়ানডেতে এখনো তিনি একই অধিনায়কের পক্ষে। বাংলাদেশ দলের জন্য এটাকেই যেহেতু ভালো মনে করেন, ওয়ানডের মতো টেস্টের নেতৃত্বও মিরাজকে দিয়ে দেওয়ার পক্ষে তিনি। আর সেটা নাকি মোটেও রাগ-ক্ষোভ থেকে নয়। বরং দুটি দল একই অধিনায়কের অধীন থাকলে অধিনায়কের পরিকল্পনা করা ও তা বাস্তবায়ন সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।

আর যদি নাজমুল টেস্টের নেতৃত্বে থেকে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন, বিসিবিকে দিতে পারেন নিজের সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা এবং সে অনুযায়ী চাহিদা আর শর্ত। বিসিবি তা মানলেই কেবল শ্রীলঙ্কা সিরিজের পরও টেস্ট দলের অধিনায়ক থাকতে পারেন নাজমুল। নইলে তিন সংস্করণের ক্রিকেটে তিনি হয়ে যাবেন শুধুই একজন ব্যাটসম্যান।

নাজমুলের নেতৃত্বগুণ সহজাত। অধিনায়কত্ব উপভোগ করেন। দলকে নেতৃত্ব দেওয়াটা নিজের ব্যাটিং পারফরম্যান্সেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে বিশ্বাস তাঁর। তবে টেস্ট দলে নাজমুলই অধিনায়ক থাকবেন নাকি আর কেউ দায়িত্বে আসবেন, সেটি এখনই বলার সুযোগ নেই। নাজমুল এর মধ্যে নিজে কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে আরও মাস পাঁচেক। তা ফল মধুর হলে অপেক্ষা করতে দোষ কী!

আমারবাঙলা/জিজি

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

করাইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড: ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আদনান সাহিল

করাইল বস্তির সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে খাদ্যসহ...

পেট্রলে দগ্ধ আল আমিন ঢাকায় স্থানান্তর

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য কনটেন্ট তৈরি করে মানুষের গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন ময়...

বালুভর্তি ট্রাকের রাজত্বে ধুলায় অতিষ্ঠ কমলগঞ্জবাসী

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার–ভৈরবগঞ্জ–মিরতিংগা চাবাগা...

নোয়াখালীতে আনসার ভিডিপি ব্যাংকের কোটি টাকা আত্মসাৎ, ব্যবস্থাপক গ্রেপ্তার

নোয়াখালীর সেনবাগ ও দত্তেরহাট শাখা থেকে ১০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগে আ...

দেশি–বিদেশি ৭৫০ দৌড়বিদের অংশগ্রহণে কমলগঞ্জে ম্যারাথন

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে দেশি–বিদেশি ৭৫০ দৌড়বিদ নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ‘ছ...

একনেকে ১৬ হাজার কোটি টাকার ১৮ প্রকল্প অনুমোদন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১৬ হাজার ৩২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব...

দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের নিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি বিদেশি...

খালেদা জিয়ার অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন: আহমেদ আযম খান

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল বলে জানিয়েছেন দল...

র্দীঘ ১১মাস ধরে ঘরবন্দী অসহায় এক পরিবার

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে জমি দখলে নিতে ১১ মাস ধরে একটি পরিবারকে ঘরবন্দী করে রা...

শিক্ষকদের আন্দোলন: লক্ষ্মীপুরে দেড় ঘন্টা পর পরীক্ষা শুরু

দেশব্যাপী চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন। লক্ষ্মীপুরেও শিক্ষকরা আ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা