সংগৃহীত
জাতীয়

জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘খাদ্য হোক নিরাপদ, সুস্থ থাকুক জনগণ’ প্রতিপাদ্যে আজ রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সারাদেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস। প্রতিবছরের ২ ফেব্রুয়ারি দিবসটি উপলক্ষে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) দেশব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে দেশে প্রথমবারের মতো পালিত হয় নিরাপদ খাদ্য দিবস। ওই বছর সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে সচেতন করে তোলার অংশ হিসেবে ২ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা। এ ছাড়া বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সর্বসাধারণকে জানানো এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুত, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বিষয়ে সর্বস্তরে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাই এ দিবসের প্রধান লক্ষ্য।

পুষ্টিবিদরা মনে করেন ট্রান্স ফ্যাটি এসিড (টিএফএ) বা ট্রান্সফ্যাট একটি বিষাক্ত খাদ্য উপাদান যা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ নানাবিধ অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ট্রান্সফ্যাট মুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে সবধরনের ফ্যাট, তেল এবং খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের দুই শতাংশ নির্ধারণ করে প্রবিধানমালা প্রকাশ করেছে। প্রবিধানমালাটি দ্রুত ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগ ঝুঁকি কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।

এদিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) দিবসটি উপলক্ষে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী ভোজ্যতেল ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ। কিন্তু ড্রামের অধিকাংশ খোলা ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ নেই বা পরিমিত মাত্রায় থাকে না। প্লাস্টিকের ড্রাম বারবার ব্যবহারের ফলে ভোজ্যতেল বিষাক্ত হতে পারে। তা ছাড়া ড্রামের খোলা ভোজ্যতেলে ভেজাল মেশানোর সুযোগ থাকে। ফলে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ বাস্তবায়নে ড্রামের খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।

প্রজ্ঞা জানিয়েছে, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, দেশে ছয় থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে ২০ দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের (গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারী ব্যতীত) মধ্যে পাঁচ দশমিক চার শতাংশ ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতিতে ভুগছে।

আইসিডিডিআর,বি’র এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশ ড্রামে বাজারজাত করা হয়, যার মধ্যে ৫৯ শতাংশই ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ নয় এবং ৩৪ শতাংশে সঠিকমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ নেই। মাত্র সাত শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইনে নির্ধারিত ন্যূনতম মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া গেছে। এসব ড্রামে কোনো প্রকার লেবেল এবং উৎস শনাক্তকরণ তথ্য যুক্ত না করায় তেল সরবরাহের উৎস চিহ্নিত করা যায় না। ফলে কেউ অপরাধ করলে তদের চিহ্নিত করা যায় না।

জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২৫ উপলক্ষে এক প্রতিক্রিয়ায় প্রজ্ঞা'র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, ভোজ্যতেল খাদ্যপণ্য বিধায় এটি নিরাপদভাবে ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার। ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং এর ক্ষতি সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে।

এ ছাড়া শনিবার সকালে রাজধানীতে বাংলাদেশ ফুড সেফটি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘নিরাপদ খাদ্য: মানবসৃষ্ট খাদ্য দূষণ ও ভেজাল প্রতিকার’ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

খাদ্যবিষয়ক সেমিনারে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. ওয়ায়েস কবির বলেন, ইতোপূর্বে সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব নিয়ে আলোচনা হলেও সমন্বয় হয়নি। এ সমন্বয় প্রশাসক থেকে মাঠ পর্যায়ের কাজেও হতে হবে। তা না হলে খাদ্যশিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসর্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাবেক সহ-সভাপতি ছৈয়দ মোহা. শোয়াইব হাসান। প্যানেল আলোচকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাণ গ্রুপের হেড অব কোয়ালিটি কন্ট্রোল ড. এস এম মারুফ কবির, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মাহতাবউদ্দিন প্রমুখ।

ড. ওয়ায়েস কবির বলেন, ‘সরকারি সংস্থাগুলোর যেমন জনবল, প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, তেমনি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকেও একই ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. ইকবাল রউফ মামুন খাদ্য দূষণের বিভিন্ন উৎস, সচেতন বা অসচেতনভাবে খাদ্য দূষণ এবং বিভিন্নভাবে ভেজাল দেওয়ার কারণ নিয়ে আলোচনা করেন।

ছৈয়দ মোহা. শোয়াইব হাসান বলেন, খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও উৎপাদনের সকল স্তরে অতি দ্রুততার সঙ্গে সহায়ক পরিবেশ তৈরি এবং সুশাসনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে এ খাতে লোকসান হবে।

খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে খাদ্য সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। জোরালো হ্যাজার্ড অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কন্ট্রোল পয়েন্ট সিস্টেম বাস্তবায়ন, কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিনিয়োগ, সঠিক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, ফুড সেফটি কালচার সৃষ্টি, নিরাপদ ও টেকসই কাঁচামাল ব্যবহার, সঠিক ও সম্পূর্ণ তথ্যসহ স্বচ্ছভাবে সমস্ত খাদ্যপণ্য লেবেল করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যও সেমিনারে আহ্বান জানানো হয়।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

উত্তরায় প্রাইভেটকারে অপহরণ; ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় অপহরণে ব্যবহৃত একটি প্রাইভে...

আমাকে চেয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বানাতে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সরকারের সময় তিনবার...

ভালুকায় সৌন্দর্য বাড়াতে ইউএনও’র ‘নিজ খরচে’ সবুজ বিপ্লব

ভালুকা উপজেলার পরিবেশ সংরক্ষণ ও নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নি...

কালীগঞ্জে ফিল্মিস্টাইলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জে...

সড়কহীন  ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা