কুমিল্লার লালমাইয়ে হোটেলে শিশু শ্রমিক নিয়ে প্রশ্ন তোলায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের এক শ্রম পরিদর্শকসহ ৩ জনকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি, ফ্রি খেতে আসায় তাদের অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
ঘটনাটি দুদিন আগের হলেও সোমবার (১৮ আগস্ট) বিকেল থেকে অবরুদ্ধ সময়ের ১৮ মিনিটের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, শনিবার (১৬ আগস্ট) রাত আনুমানিক ৮টায় কলকারখানা অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক গোলাম খাজা মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন আহমেদ, একই দপ্তরের অফিস সহায়ক ইউনুছ ব্যাপারী ও তাদের বহনকারী গাড়িচালক ওহাব হোটেলে গিয়ে হোটেল মালিকের সঙ্গে কথা বলতে চান। ওই সময়ে হোটেল মালিক বাসায় ছিলেন।
মালিকের অবর্তমানে তারা মালিকের ছেলে মমিনের কাছে শ্রম আইন লঙ্ঘন করে শিশুদের দিয়ে হোটেলে কাজ করানোর ব্যাখ্যা জানতে চান। শ্রমিক রেজিস্ট্রার ও কলকারখানার লাইসেন্স দেখতে চান। এতেই হোটেল মালিকের ছেলে মমিন ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু বহিরাগতকে খবর দিয়ে শ্রম পরিদর্শককে অবরুদ্ধ করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ১৮ মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, ওহাব হোটেলের কেবিনে বসা শ্রম পরিদর্শকসহ ৩ জনকে অবরুদ্ধে করে রেখেছেন হোটেল মালিক পক্ষের লোকজন। ওই সময়ে হোটেল মালিক আবদুল ওহাবসহ বিভিন্ন ব্যক্তি অবরুদ্ধদের ফ্রি খাবার খেতে এসেছেন বলে অভিযোগ দিচ্ছেন।
একজন লাইভে শ্রম পরিদর্শক ও অফিস সহায়ককে এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করছেন। অবরুদ্ধরা ফ্রি খাবার খাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে উল্টো তাদের পরিদর্শন কাজে অসহযোগিতার অভিযোগ করেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা ফেসবুক লাইভ বন্ধ করতে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু হামলা ও মারধরের ভয়ে অবরুদ্ধ শ্রম পরিদর্শক লাইভ বন্ধ না করতে ও নিরাপদে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে সহযোগিতা চান।
হোটেল মালিক আব্দুল ওহাব জানান, তারা এসে বলে লাইসেন্স আছে কি? কর্মচারীর বেতন ঠিকঠাক দেননি? এভাবে চার দিন আসছে। তিন দিন ফ্রি খেয়েছে, এক দিন টাকা দিয়েছে। আমি বললাম, আপনারা কলকারখানায় যাবেন, হোটেলে কী?
শ্রম পরিদর্শককে অবরুদ্ধ করে রাখার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, আমি ৪০ বছর ধরে হোটেল ব্যবসা করি। প্রতিদিন ৪০/৫০ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হয়। সরকারকে অনেক টাকা ভ্যাট দিই।
অবরুদ্ধ থাকার বিষয়ে শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) গোলাম খাজা মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৬ আগস্ট রাত ৮টায় আমার এলাকার কাজ শেষে কুমিল্লা ফেরার সময় দেখি লালমাই বাজারের ওহাব হোটেলে কিছু শিশু শ্রমিক কাজ করছে। আমরা গিয়ে শিশুদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। ওই সময় হোটেলের মালিক ওহাবের ছেলে আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়।
তিনি বলেন, শিশুদের আমাদের সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। এরপর আমরা তাদের শ্রম আইনের নিয়ম মানছেন কি না জানতে চাই। শ্রমিক রেজিস্ট্রার দেখাতে বলি। এতে হোটেল কর্তৃপক্ষ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। মানুষ জড়ো করে গালমন্দ শুরু করে। আমার সহকারীর গায়ে হাত তোলে। তাদের এসব আচরণ দেখে আমার কাছে উনাদের মাদকাসক্ত মনে হয়েছে। তারা আমাদের প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখে।
ফ্রি খাবার খাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই হোটেলে এর আগে আমি আর কখনো যাইনি। আমার সহকারী একবার গিয়ে খাবার খেয়ে বিল দিয়েছেন, এর প্রমাণ হিসেবে রিসিট রয়েছে। শ্রম আইন লঙ্ঘনের ও পরিদর্শন কাজে বাধা দেওয়ার অপরাধে ওহাব হোটেলের মালিকের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন বলেও তিনি জানান।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কুমিল্লার উপমহাপরিদর্শক সৈয়দ নাজমুল রাশেদ বলেন, শ্রম পরিদর্শক ও অফিস সহায়ককে অবরুদ্ধ করে রাখার ১৮ মিনিটের একটি ভিডিও ফেসবুকে দেখেছি। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রাথমিক তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমারবাঙলা/এফএইচ