নুসরাত জাহান ঐশী: স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়া সংগঠন ‘আমরা একাত্তর’র প্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৮ জুন) সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আমরা একাত্তরের প্রধান সমন্বয়ক হিলাল ফয়েজী। সংগঠনের চেয়ারপারসন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃণাল সরকার।
অনুষ্ঠানে ৫৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখা ৫৩ তরুণকে ব্যতিক্রমী সম্মাননা দেয় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে সমতাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি। এ সময় আগামীর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বাণী সম্বলিত সম্মাননা ক্রেস্ট ও জাতীয় পতাকা হস্তান্তর করেন।
সম্মাননা প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (বীর উত্তম), নাসির উদ্দিন ইউসুফ, জিল্লুর রহমান দুলাল, খায়রুল আহসান খান, আনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ শাহ আলম, মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু, পরিমল চন্দ্র শীল, মো. নূর আলী, প্রদীপ চক্রবর্তী, কার্তিক চ্যাটার্জি, অজয় দাস গুপ্ত, ড. আমজাদ হোসেন, ড. দিপা ইসলাম, মিজানুর রহমান খান (বীর প্রতীক), এনামুল হক চৌধুরী খসরু, দিল আফরোজ দিলু, রোকেয়া কবির, লক্ষ্মী চ্যাটার্জি, আনোয়ার জাহিদ, এএসএম সবুর, মাহমুদ সেলিম প্রমুখ।
সন্মাননাপ্রাপ্তরা তরুণের প্রতিনিধিরা হলেন- শহীদসন্তান জাহীদ রেজা নূর, অনুজীব বিজ্ঞানী সেজুতি সাহা, এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার, অ্যান্টার্কটিকা বিজয়ী মহুয়া রউফ, আয়রনম্যান ইমতিয়াজ এলাহীল, নৃত্যশিল্পী পূজা সেন গুপ্ত, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সাংবাদিক আবু সালেহ রনি, তামান্না মিনহাজ ও আজিজুল পারভেজ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে সংগঠনের কার্যপরিধি তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সাংবাদিক মাহফুজা জেসমিন ও তামজীদ সিদ্দিকী স্পন্দন।
আমরা একাত্তরের নেতৃবৃন্দরা জানান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রেরণা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা সংগঠনটির একটি উদ্দেশ্য। তারা মুুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে একত্রিত করে তাদের মহান কর্মের যথাযথ স্বীকৃতি ও কর্ম সংরক্ষণ করতে চান।
নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে এবং তাদের কাছে সে চেতনা লালনের দায়িত্ব হস্তান্তর করার প্রয়াসে আমরা একাত্তর সংগঠন বছরব্যাপী দেশজুড়ে এবং দেশের বাইরেও নানা কর্মসূচির আয়োজন করে আসছে। দেশের এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অর্জন উদযাপনের মাধ্যমে জাতির সামনে দেশের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরাও সংগঠনটির একটি লক্ষ্য।
সংগঠনের নেতৃস্থানীয়রা জানান, তারা ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জেনোসাইডের স্বীকৃতির দাবিতে কার্যকর কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন। এ দাবির স্বীকৃতি চেয়ে জাতিসংঘে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে যেসব জায়গায় জেনোসাইড হয়েছে, তার একটি তালিকাও জাতিসংঘে পেশ করা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়।
সংগঠনটির আরও একটি উদ্দেশ্য হলো একটি সমতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা। এরই একটি পদক্ষেপ হিসেবে নারীর সম্মান ইস্যুটি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবছর অগ্রহায়ণ মাসে সংগঠনটি ‘বোন নবান্ন উৎসব’ পালন করে আসছে, যা মূলত ভাইয়েদের পক্ষ থেকে বোনদের জন্য আয়োজন।
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক হিলাল ফয়েজী বলেন, গৌরবজ্জল অতীতের পথ ধরে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে একটি অসাম্প্রদায়িক, মানবিক, ন্যায় ও সমতাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে নতুন জাগরণ সৃষ্টির প্রয়াসে কয়েক বছর আগে আমরা একাত্তরের যাত্রা শুরু হয়। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল। এ আয়োজনের মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মের হাতে দেশের দায়িত্ব তুলে দিতে চাই। তারাই হবে আগামীর বাংলাদেশ। আমরা এমন প্রজন্ম চাই, যারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি মাহবুব জামান বলেন, আমরা একাত্তর একটি জাগরণের প্লাটফর্ম; মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শভিত্তিক সংগঠন। ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের উত্থানের সময় আমরা বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ‘আমরা একাত্তর’ ব্যানারে একত্র হন। সে সময় এর কার্যক্রম তেমন অগ্রসর না হলেও করোনাকালসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নানা ধরনের মানবিক সহায়তা নিয়ে আমরা মানুষের পাশে থেকেছি। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা এবং নানা সংকটে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে থেকে শক্তি ও বিশ্বাস জুগিয়েছি। সাংগঠনিকভাবে এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
এ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধের বই জাদুঘর গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সংগঠনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আমরা একাত্তরের নেতৃবৃন্দরা।
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            