ফুটবল ক্লাব কেনাবেঁচার খবর যাঁরা গভীরভাবে অনুসরণ করেন, তাঁদের কাছে নামটা পরিচিত মনে হতে পারে। বাকিদের কাছে নামটা অচেনাই লাগবে হয়তো।
আমান্ডা স্ট্যাভেলি। হঠাৎ করেই এই ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছেন ইংলিশ ফুটবলে বা প্রিমিয়ার লিগে। শোনা যাচ্ছে, ৫২ বছর বয়সী স্ট্যাভেলি নাকি প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব টটেনহাম হটস্পার কিনে নিতে চাচ্ছেন। যদিও টটেনহামের বর্তমান মালিকপক্ষ সাফ জানিয়ে দিয়েছে—ক্লাব বিক্রির কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।
ইংলিশ ফুটবলে স্ট্যাভেলির নাম শোনা যায় প্রায়ই। ২০২১ সালে সৌদি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (পিআইএফ) হয়ে নিউক্যাসল ইউনাইটেড কেনার সময় বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। সে সময় স্বামী মেহরদাদ গোদৌসির সঙ্গে মিলে তিনি ক্লাবের ১০ শতাংশ শেয়ার নিয়েছিলেন। পরে ধীরে ধীরে তা কমতে কমতে দাঁড়ায় মাত্র ৬ শতাংশে। অবশেষে গত জুলাইয়ে শেয়ার বিক্রি করে নিউক্যাসল ছাড়েন দুজনেই।
টটেনহামের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে আলোচনা জমে ওঠে গতকাল। টটেনহাম এক বিবৃতিতে জানায় যে তারা দুটি পক্ষ থেকে প্রস্তাব পেয়েছিল এবং সেগুলো ‘সুস্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান’ করেছে। এই দুই পক্ষের একটি হলো স্ট্যাভেলির পিসিপি ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স লিমিটেড। তবে গতকাল সোমবার পিসিপি জানিয়েছে, টটেনহাম কেনার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। কিন্তু এটাই তাদের চূড়ান্ত কথা, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।
ইংলিশ ফুটবলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক স্ট্যাভেলির। ২০০৮ সালে বার্কলেজ ব্যাংকে বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। একই বছর শেখ মনসুর যখন ম্যানচেস্টার সিটি কিনলেন, সেই দর–কষাকষিতেও কাজ করেছিলেন স্ট্যাভেলি। অর্থাৎ সুযোগ পেলেই বড় কোনো প্রকল্পে ঢুকে পড়ার অভ্যাস আছে তাঁর।
নিউক্যাসল ছাড়ার পর থেকে নতুন কোনো ‘অসাধারণ সুযোগ’ খুঁজছিলেন স্ট্যাভেলি। টটেনহামের কাঠামো, ঐতিহ্য আর সম্ভাবনা তাঁকে টেনেছিল বলেই মনে হচ্ছে। যদিও প্রিমিয়ার লিগের বড় ক্লাবগুলোর মধ্যে টটেনহাম গত দেড় দশকে মালিকানা পরিবর্তন করেনি। ক্লাবের মালিক সংস্থা ইনিক এবারও জোর দিয়ে বলেছে, ওই ধারাই বজায় থাকবে।
কিন্তু স্ট্যাভেলি যে সহজে হাল ছাড়েন না, সেটা তাঁর নিউক্যাসল-পর্ব থেকেই বোঝা যায়। চার বছরের বেশি সময় ধরে তিনি চেষ্টা করেছিলেন ক্লাবটি কিনতে। একবার তো নিজেরাই ঘোষণা দিয়েছিলেন, চুক্তি ভেস্তে গেছে। তারপর আবার আলোচনায় ফিরে আসেন, শেষমেশ সফলও হন।
শুধু পিআইএফকে নিউক্যাসল কিনে দিয়েই স্ট্যাভেলি বসে থাকেননি। শিরোপার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন ক্লাবের সমর্থকদের, অথচ তখন দলটা লড়ছে অবনমন ঠেকাতে। এরপর তিনি নিউক্যাসলের উত্থানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কোচ হিসেবে এডি হাউকে নিয়োগ এবং ব্রুনো গিমারেস, অ্যান্থনি গর্ডন ও টিনো লিভ্রামেন্টোর মতো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের কেনার পেছনেও তাঁর বড় ভূমিকা ছিল।
তাই গত গ্রীষ্মে হঠাৎ করে মালিকানার কাঠামো বদলে যাওয়ার পর যখন স্ট্যাভেলি-গোদৌসি শেয়ার বিক্রি করে সরে দাঁড়ালেন, তখন তা অনেকের কাছেই ছিল চমক। তাঁদের অংশ কিনে নেয় সৌদি পিআইএফ আর রিউবেন পরিবার।
তবু স্ট্যাভেলি-গোদৌসি দুজনেই নিউক্যাসল সমর্থক রয়ে গেছেন। মার্চে কারাবাও কাপ ফাইনালে ওয়েম্বলিতেও দেখা গেছে তাঁদের। বোঝাই যাচ্ছে, ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে ভালোবাসেন তাঁরা দুজন। তাঁদের টটেনহাম কেনার আগ্রহটা তাই ‘হঠাৎ আসা খেয়াল’ বলে ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
আমারবাঙলা/জিজি