চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কনকনে শীতের রাতে সড়কের পাশে পড়ে ছিল দুই শিশু। বড় বোন আয়শা (৪) ছোট ভাইকে আগলে ধরে বসে ছিল—ঠান্ডা আর অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) রাতের ওই দৃশ্য স্থানীয়দের চোখে পড়ে পিএবি সড়কের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের শোলকাটা এলাকায়।
স্থানীয়দের ভাষ্য, সন্ধ্যার পরও শিশুদুটি একই জায়গায় বসে থাকতে দেখে ভিড় জমে। কথা বলার চেষ্টা করলে বড় শিশুটি জানায়, তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মৌলভীর দোকান এলাকায়। পরে সিএনজি চালক মহিম উদ্দিন এগিয়ে এসে শিশুদের নিয়ে যান হাজিগাঁও ঝিওরি গুচ্ছগ্রামে তাঁর বাসায়। বিষয়টি তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও জানান।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে সেখানে গিয়ে কথা হয় আয়শার সঙ্গে। সে জানায়, তার নাম আয়শা, ভাইয়ের নাম মোরশেদ। বাবার নাম খোরশেদ আলম, মায়ের নাম ঝিনুক। তাদের খালা মা–বাবার কাছ থেকে এনে সড়কের পাশে রেখে গেছে—এমন কথাই জানায় শিশুটি। তবে কেন এমনটি করা হয়েছে, সে বিষয়ে শিশুটি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি।
আশ্রয়দাতা মহিম উদ্দিন বলেন, ‘রাতে প্রচণ্ড ঠান্ডায় ওরা কাঁপছিল। আয়শার কথা শুনে বুঝলাম বিষয়টি গুরুতর। তাই দেরি না করে বাসায় নিয়ে আসি।’ তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, ‘দুই শিশুই অসুস্থ। ছোটটি প্রতিবন্ধীও। রাতে গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে খাবার খাওয়ানোর পর কিছুটা স্বাভাবিক হয়।’
স্থানীয়দের ধারণা, দীর্ঘদিনের অসুস্থতা ও আর্থিক সংকটের চাপ থেকেই অভিভাবকেরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
আনোয়ারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোমেন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। শিশুদের ছবি ও পরিচয় বিভিন্ন থানায় পাঠানো হয়েছে, যাতে পরিবার শনাক্ত করা যায়।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘সড়কের পাশে পাওয়া দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে তাদের সেইভহোমে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ও সমাজসেবা কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
ঘটনাটি নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—অসুস্থতা ও দারিদ্র্যের চাপে পড়ে শিশুদের সুরক্ষা কতটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে? শীতের রাতে সড়কের পাশে পড়ে থাকা এই দুই শিশুর গল্প যেন সমাজের দায়বদ্ধতার কথাই মনে করিয়ে দেয়।
আমারবাঙলা/এনইউআ