ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে থার্টি ফার্স্ট নাইটে কোনো আতশবাজি, পটকা না ফোটানোর আহ্বান জানিয়েছেন পানি সম্পদ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে বুধবার (১ জানুয়ারি) ভোর পাঁচটা পর্যন্ত বহিরাগতরা (অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক, রোগী ও সাংবাদিক বাদে) ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না।
এদিকে থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতসবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো বন্ধে রিট করা হয়েছে। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টে একজন আইনজীবী এ রিট করেন।
এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর ডিএমপি সদরদপ্তরে আয়োজিত ডিএমপির নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় থার্টিফার্স্ট নাইটে উন্মুক্ত স্থানে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো এবং ফানুস ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানানো হয়।
সন্ধ্যা থেকে চলবে ভ্রাম্যমাণ আদালত
থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি, পটকা না ফোটানোর আহ্বান জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এটিকে নিরৎসাহিত করতে সন্ধ্যার পর থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীতে গণমাধ্যমকে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হলো।
এতে বলা হয়, এর আগে থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজির শব্দে ভয় পেয়ে হৃদ্রোগে ভুগতে থাকা এক শিশুর মৃত্যু হয় বলে খবরে প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া অতিরিক্ত শব্দের কারণে শ্রবণশক্তি ও স্মরণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাত, দুশ্চিন্তা, উগ্রতা, উচ্চ রক্তচাপ, কান ভোঁ ভোঁ করা, মাথা ঘোরা, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়া, মানসিক অস্থিরতা, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়া সহ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে থার্টি ফার্স্ট নাইটে জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর এ ধরনের বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হলো।
উল্লেখ্য, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এর ৭ বিধি লঙ্ঘন করে অননুমোদিতভাবে ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের সময় আতশবাজি ও পটকা ফোটালে তা বিধিমালার ১৮ বিধি অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
উল্লিখিত আইনের ব্যত্যয় হলে বা ভঙ্গ করলে প্রথম অপরাধের জন্য অনধিক এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড প্রদানের বিধান রয়েছে।
থার্টি ফার্স্ট নাইটে ঢাবি এলাকায় প্রবেশে কড়াকড়ি
থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাবি কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস এলাকায় প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে। এতে বলা হয়, থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে সেদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরদিন ১ জানুয়ারি ভোর ৫টা পর্যন্ত প্রবেশপথগুলোতে (শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, বার্ন ইউনিট, শিববাড়ি ক্রসিং, ফুলার রোড, পলাশী মোড় ও নীলক্ষেত) বৈধ আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অন্যান্য সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি, জরুরি সেবায় নিয়োজিত গাড়ি (অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক, রোগী ও সাংবাদিক) চলাচল করতে পারবে। এর বাইরে অন্য কেউ ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত জায়গায় কোনো ধরনের অনুষ্ঠান, আতশবাজি, ফানুস ও বিস্ফোরক দ্রব্য বহন এবং ফোটানো যাবে না।
পটকা-আতশবাজি ফোটানো বন্ধে রিট
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান থার্টি ফার্স্টে আতসবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো বন্ধে রিট দায়ের করেন। রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।
রিটে থার্টি ফাস্ট নাইটে বাসাবাড়ির ছাদ ও সব ভবন, উন্মুক্ত স্থান, পার্কে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো এবং ফানুস ওড়ানো বন্ধে রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারির মতো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া রাত ১০টা থেকে সড়ক, পার্ক ও উন্মুক্তস্থানে জনসমাগম বন্ধের পাশাপাশি আতশবাজি-পটকা ও ফানুস কেনাবেচা বন্ধ চাওয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশনাও রিটে চাওয়া হয়েছে।
মেট্রোরেল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ
মেট্রোরেল স্টেশন রুট এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফানুস না ওড়াতে অনুরোধ জানিয়েছে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড।
সোমবার কোম্পানির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানানো হয়।
এতে বলা হয়, এমআরটি লাইন ৬-এর রুট অ্যালাইনমেন্ট ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় থার্টি ফাস্ট নাইট এবং ইংরেজি নতুন বছর ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে ফানুস বা অনুরূপ কোনো বস্তু না ওড়ানোর অনুরোধ করা হচ্ছে।
মেট্রোরেলে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন লাখ যাত্রী চলাচল করেন। উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহার করে প্রতিদিন মেট্রো ট্রেন চলাচল করে। থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে ফানুস বা অনুরূপ কোনো বস্তু ওড়ানো হলে এর মাধ্যমে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই বৈদ্যুতিক লাইনে জড়িয়ে যেকোনো মুহূর্তে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটাসহ প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
তাই ফানুস বা অনুরূপ কোনো বস্তু ওড়ানোর ফলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনের আওতায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            