নিজস্ব প্রতিবেদক: তাপপ্রবাহ এবারই শেষ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, এই তাপপ্রবাহ এবারই শেষ নয়, আগামী বছরগুলোতেও এমন গরম আবার আসতে পারে। এজন্য আমাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং আগামী বছরের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।
রোববার (৫ মে) দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত তাপমাত্রাজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়ক জাতীয় গাইডলাইনের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, তাপমাত্রাজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি গাইডলাইন করে দিয়েছে, যা খুবই সময়োপযোগী। এখানে বর্ণিত নির্দেশিকা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। এরইমধ্যে সব সরকারি হাসপাতালে এই গাইডলাইন পাঠানো হয়েছে এবং চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, এই তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে বাচ্চারা আর বয়োজ্যেষ্ঠরা। যারা একটু শারীরিকভাবে কম সামর্থ্যবান, যাদের ডায়াবেটিক, হার্টডিজিস বা বিভিন্ন অসুখে ভুগছেন তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। এই বইয়ে নির্দেশিত গাইডলাইন লিফলেট আকারে স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে দিতে হবে। এই নির্দেশ আমি এরইমধ্যে দিয়েছি।
নগর পরিকল্পনাবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা দেখি গ্রামের চেয়ে ঢাকা শহরে তাপমাত্রা অত্যধিক বেশি। এর কারণ, আমরা ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে ঢাকা শহরে গাছপালা সব কেটে সাবাড় করে ফেলেছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর হয়ত আমরা খুব প্রভাব ফেলতে পারি না। কিন্তু, নগর পরিকল্পনা করার সময় যদি এসব বিষয় আমরা মাথায় রাখি, তাহলে অনেকাংশে পরিত্রাণ সম্ভব।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, প্রতিটি শিশুরই সুস্থ পরিবেশ পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং আমাদের সবার এক্ষেত্রে ভূমিকা রয়েছে। গরমজনিত অসুস্থতা মোকাবিলা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোয় অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের শিশুদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার পথ সুগম করতে পারি।
তিনি জানান, ইউনিসেফের সাম্প্রতিক প্রক্ষেপণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের একটি গুরুতর প্রতিক্রিয়া হিসেবে, ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মোট শিশুর ৯৯ শতাংশ বা ৩ কোটি ৫৫ লাখ শিশু প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হবে। এই সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি। ২০২০ সালে মাত্র ২৬ লাখ শিশু, যা দেশের মোট শিশুর ৫ শতাংশ, এই ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছিল।
ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রতি তিন শিশুর একজন বা প্রায় ২ কোটি শিশু প্রতিদিন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। চলমান তাপপ্রবাহ, বন্যা, নদী ভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট অন্যান্য পরিবেশগত অভিঘাতের মতো বিরূপ আবহাওয়াজনিত পরিস্থিতিরও শিকার হচ্ছে শিশুরা।
শিশুদের ওপর তাপপ্রবাহের প্রভাব অনেক ধরনের হতে পারে। তাই ইউনিসেফ শিক্ষা খাতে এর ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারকে সহায়তা করার ব্যাপারে কাজ করছে। ইউনিসেফের কারিগরি সহায়তায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ‘শিক্ষায় জলবায়ু পরিবর্তন’ কাঠামো গড়ে তুলতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলোর সঙ্গে একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক শিক্ষাকে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং এর মাধ্যমে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত একটি প্রজন্ম গড়ে তোলা।
বাংলাদেশে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত আর্দ্র মাসগুলোতে এটি মানুষের জন্য অনেক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। ইউনিসেফ জলবায়ু-সম্পর্কিত স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং প্রতিটি শিশুর জন্য একটি সহনশীল ও টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে ডিজিএইচএস, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা করে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা, ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেনটেটিভ এমা ব্রিগহাম প্রমুখ।
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            