বেকার জীবন যে কত কষ্টকর, তা ভালো করেই জানেন নাসির উদ্দিন মল্লিক। পাঁচ সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন কষ্টে দিন কাটিয়েছেন তিনি। কোথাও চাকরি বা আয়ের পথ না পেয়ে অবশেষে নিজ প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন এই সফল উদ্যোক্তা। সুন্দরবনের উপকূলে মোরেলগঞ্জে লবণাক্ত জমিতে বেকার নাসির এখন সফল কমলা চাষী
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলে, বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার পুটিখালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের পুটিখালী গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন মল্লিক। তার পিতা তৈয়ব আলী মল্লিক একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। তিন ভাইয়ের মধ্যে নাসির বড়। পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্বও তার কাঁধে।
দীর্ঘ বেকার জীবনের কষ্ট পেরিয়ে তিনি ইউটিউব দেখে চুয়াডাঙ্গার একটি কমলা বাগানের অনুকরণে চাষের সিদ্ধান্ত নেন। ২০২০ সালে ৫০টি চায়না কমলার চারা ক্রয় করেন প্রতিটি ১২৫ টাকা দরে এবং সাড়ে ৭ কাঠা জমিতে রোপণ করেন। এক বছর পরেই ফলন আসে। প্রথম বছর প্রতিটি গাছে ২৫-৩০টি করে ফল হয়।
গত বছর তার বাগান থেকে ১৭ মণ ২৩ কেজি কমলা বিক্রি করে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় করেন। এ বছর ফলন হয়েছে দ্বিগুণ, যদিও বাজারদর কিছুটা কম। তিনি জানান, এবারও প্রায় ৪ লাখ টাকার বেশি বিক্রি আশা করছেন।
নাসির উদ্দিন মল্লিক বলেন, “আমার বাগানে লবণাক্ত মাটিতেও ভালো ফলন হয়েছে। এটা আল্লাহর আশীর্বাদ। পরিবারের সদস্যরা সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করে। কমলাগুলো খুব মিষ্টি, তাই স্থানীয় বাজারে চাহিদাও ভালো। অনেক বেপারী বাগান থেকেই ফল কিনে নেয়।” তিনি আরও বলেন, “লেখাপড়া শেষে সরকারি চাকরি করতেই হবে — এটা ভুল ধারণা। বিদেশে না গিয়েও দেশের মাটিতে পরিশ্রম করে সাফল্য অর্জন সম্ভব। পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি।”
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “এ উপজেলায় কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কমলা চাষে আলাদা কোনো প্রকল্প না থাকলেও কিছু উদ্যোক্তা নিজ উদ্যোগে চাষ করছেন। নাসির উদ্দিন মল্লিকের বাগানের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব এবং তাঁকে পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করব।”
আমার বাঙলা/আরএ