যাঁর শুরু আছে, তাঁর শেষও আছে—এটাই জগতের নিয়ম। লিওনেল মেসিও ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্ন দেখছেন। বাংলাদেশ সময় আগামীকাল ভোরে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে নামছে আর্জেন্টিনা। বুয়েনস এইরেসের এস্তাদিও মনুমেন্তালে হতে চলা ম্যাচটাই জাতীয় দলের হয়ে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে মেসির শেষ ম্যাচ। কে জানে, আর্জেন্টিনার জার্সিতে দেশের মাটিতে এটি মেসির শেষ ম্যাচও হয়ে যেতে পারে!
তাই অবধারিতভাবে মেসিকে ঘিরে আবেগের স্ফূরণ ঘটছে আর্জেন্টাইন ফুটবলের সমর্থকদের মধ্যে। দেশটির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কারও কারও দুই চোখও ভিজছে। এভাবে আবেগতাড়িত হয়ে পড়াদের মধ্যে একজন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। গত রাতে ম্যাচ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনের প্রায় পুরোটাই ছিল আবেগঘন। সেখানেই স্কালোনি জানিয়ে দিয়েছেন, মেসির উত্তরসূরি কখনো পাওয়া সম্ভব নয়।
খেলোয়াড়ি জীবনের শুরু থেকেই মেসিকে চেনেন স্কালোনি। একসময় দুজন আর্জেন্টিনা দলে সতীর্থও ছিলেন। সেই পথচলার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি কেঁদে ফেলেন। এক সাংবাদিকও এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি হালকা করার জন্য স্কালোনি মজা করে বলেন, ‘আপনি কি কাঁদছেন? এটা তো আমার উদ্দেশ্য ছিল না।’
জবাবে সাংবাদিক বলেন, ‘আপনি আমাকে জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ উপহার দিয়েছেন।’ এ কথা শুনে কোচ স্কালোনির চোখও ভিজে যায়, কণ্ঠ কেঁপে ওঠে। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, মেসি আসলে তাঁর জীবনে, কোচিং ক্যারিয়ারে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
৪৭ বছর বয়সী স্কালোনি মেসির সঙ্গে পথচলার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি ওর সঙ্গে খেলেছি। শুধু বলটা ওকে পাস দেওয়াটাই আমার কাছে বিশেষ ব্যাপার ছিল। বিশ্বকাপে ওর সঙ্গে থাকা আর ওকে ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে দেখা সত্যিই হৃদয়স্পর্শী এক অভিজ্ঞতা। সময় গড়ানোর সঙ্গে আমরা সবাই এর অর্থ আরও গভীরভাবে বুঝতে পারব। আগামীকাল দিনটা হবে সুন্দর আর আবেগময়। তবে আমার আশা আর্জেন্টিনায় এটাই ওর শেষ ম্যাচ হবে না। আমরা চেষ্টা করব যেন ও চাইলে আরেকটা ম্যাচ খেলতে পারে। কারণ, এটা ওর প্রাপ্য।’
২০২৬ বিশ্বকাপের সময় মেসির বয়স ৩৯ পেরিয়ে যাবে। বিশ্বকাপ শেষে আর্জেন্টিনার জার্সি চিরতরে তুলে রাখার ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে। এরপর মেসির মতো আর কাউকে কি পাবে আর্জেন্টিনা? স্কালোনির উত্তর, ‘আর্জেন্টিনা বা বিশ্ব ফুটবলে মেসির উত্তরাধিকারী? না, এমন কেউ হতে পারবে না। হবেও না। হয়তো কয়েকজন দুর্দান্ত খেলোয়াড় আসবে, যারা একটি যুগকে সংজ্ঞায়িত করবে। কিন্তু এত দিন ধরে সে যা করেছে, আমার মনে হয় তা অতুলনীয় হয়ে থাকবে। ফুটবলে অনেক অকল্পনীয় ঘটনা ঘটে। কিন্তু আমি প্রায় নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ওর মতো কাউকে আর দেখা যাবে না। আমার মনে হয় ওর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।’
আন্তর্জাতিক ফুটবলে ২০ বছরের ক্যারিয়ারে আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৩ ম্যাচ খেলেছেন মেসি, গোল করেছেন ১১২টি। জিতেছেন চারটি ট্রফি—২০২১ ও ২০২৪ কোপা আমেরিকা, ২০২২ ফিনালিসিমা ও ২০২২ বিশ্বকাপ, যা তাঁকে ‘অমরত্বের স্বাদ’ পাইয়ে দিয়েছে।
আমারবাঙলা/জিজি