ছবি: সংগৃহীত
জাতীয়

‘কমান্ডিং’ পুলিশ কর্মকর্তাদের গত ৩ নির্বাচনের ভূমিকা যাচাই হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত তিন নির্বাচনে ‘কমান্ডিং রোলে’ থাকা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত পুলিশ কর্মকর্তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরির কাজ এখন চলমান।

পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) থেকে ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের যাচাই-বাছাই চলতি বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। বিশেষ করে যারা আগের নির্বাচনে দলনেতা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের আগামী নির্বাচনে দায়িত্ব না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, তাদেরকে এরই মধ্যে কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। শুধু নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শই নয়, নিকটাত্মীয়দের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়েও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদেরকে।

যোগাযোগ করা হলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, গত তিনটি নির্বাচনে যারা 'কমান্ডিং রোলে' ছিলেন, তাদের আসন্ন নির্বাচনে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হবে না। তিনি গত ১ সেপ্টেম্বর বলেন, 'আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ করতে পারব।'

নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'প্রায় দুই লাখ পুলিশ সদস্যের মধ্যে প্রায় দেড় লাখ সদস্যকে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করার জন্য প্রয়োজন হতে পারে।'

তিনি আরো বলেন, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকায় পুলিশের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ শুরু হবে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তা শেষ হতে পারে। একই সময়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের তালিকাও তৈরি করা হবে বলে জানান তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পুলিশের মনোবলে ঘাটতির কারণে এই নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

আগের নির্বাচনগুলোতে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে বাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। অনেক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালন এবং নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরতে সহায়তার অভিযোগ উঠেছিল।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ২০০ জনেরও বেশি কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে, যারা গত তিনটি নির্বাচনে কমান্ডিং পদে ছিলেন। এই সময়ে প্রায় ১৫ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই কনস্টেবল। এতে পুলিশ সদস্যের মোট সংখ্যা ১ লাখ ৯৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে।

২০২৪ সালের নির্বাচনে সারা দেশে প্রায় ১ লাখ ৭৪ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল, যেখানে ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে বাহিনীটি ১৯৯১, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাবে।

যাচাই-বাছাই

গত মাসে পুলিশ সদর দপ্তর সারা দেশের সব ইউনিটকে পুলিশ কর্মকর্তাদের পটভূমি, গণ-অভ্যুত্থানের সময় তাদের ভূমিকা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের রেকর্ড পরীক্ষা করার নির্দেশ দেয়।

ডিএমপির ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস বিভাগ ৩০ জুলাই পুলিশের সব ইউনিটকে একটি চিঠি পাঠায়। এতে এসআই এবং এএসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের বিস্তারিত তথ্য এবং তাদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়। এই চিঠির একটি অনুলিপি ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

কোনো তথ্য গোপনের চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে চঠিতে সতর্ক করা হয়েছে।

যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, মূল্যায়নকারীদের কিছু প্রশ্ন তাদের কাছে 'বিব্রতকর' মনে হয়েছে। ডিএমপির একজন পরিদর্শক বলেন, আগস্টের শুরুতে তিনি স্পেশাল ব্রাঞ্চ (বিশেষ শাখা) থেকে একটি ফোন কল পান।

তিনি বলেন, 'জিজ্ঞাসাকারী আমার শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা জানতে চান এবং চাচা-খালাসহ অন্যান্য আত্মীয়দের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানতে চান।' ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, 'চাকরির ২০ বছর পর আত্মীয়স্বজন সম্পর্কে এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বিব্রত বোধ করেছি।' তিনি যোগ করেন, নির্বাচনের আগে যাচাই-বাছাই নতুন কিছু নয়, তবে অতীতে কখনো এমন প্রশ্ন করা হয়নি।

নারায়ণগঞ্জের একজন পরিদর্শক জানান, প্রায় দেড় মাস আগে জেলা বিশেষ শাখা (ডিএসবি) তার ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই পরিদর্শক বলেন, 'ডিএসবি আমার আগের কর্মস্থল এবং অতীতের নির্বাচনগুলোতে কমান্ডিং অফিসার হিসেবে আমার ভূমিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছে।'

নতুন সরঞ্জাম ও যানবাহন পাচ্ছে পুলিশ

আইজিপি বাহারুল আলম জানান, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ জানুয়ারি মাসে সদস্যদের জন্য 'বডি-ওর্ন ক্যামেরা' চালু করবে। এই ডিভাইসের মাধ্যমে পুলিশ সদর দপ্তর, আঞ্চলিক কার্যালয় এবং নির্বাচন কমিশন থেকে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

তিনি আরো জানান, অক্টোবরের মধ্যে বিদেশ থেকে ওয়াকি-টকিসহ বিভিন্ন যোগাযোগ সরঞ্জাম এবং পুলিশি টহলের জন্য যানবাহন আসার কথা রয়েছে।

আমারবাঙলা/এফএইচ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আইসিসি থেকে বড় সুখবর পেলেন রিশাদ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে দুই ম...

সুন্দরবন উপকূলে পলিথিন, হুমকিতে পরিবেশ

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের কোলঘেঁষা জনপদ বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা। কিন্তু এ এ...

বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়নি : আইন উপদেষ্টা

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়নি, দলটি...

১৫ সেনা কর্মকর্তা কারাগারে

গুমের ঘটনায় দু’টি ও একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৫ সেনা কর্মকর্ত...

নির্বাচন কমিশন কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না: সিইসি

ভোটের দায়িত্ব পালনকালে নির্বাচন কমিশন কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না বলে...

শেখ হাসিনাসহ তিনজনের রায়ের দিন ঘোষণা হবে ১৩ নভেম্বর

গত জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষম...

নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে ৩৬ প্রস্তাব বিএনপির

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে...

একটি দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার সুযোগ খুঁজছে: সালাহউদ্দিন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ মন্তব্য করেছেন, একটি রাজনৈতিক দল...

আওয়ামী লীগে যোগ দিলেন বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রীর ছেলে

কিশোরগঞ্জ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্বাস্থ্যপ্রতিম...

বাংলাদেশে সাইবার হামলার বড় অংশ আসে চীন থেকে

দেশের ব্যাংক খাতে প্রতিদিনই চার শতাধিক সাইবার হামলার শিকার হতে হচ্ছে। বাংলাদে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা