সংগৃহিত
পরিবেশ

উপকূলে কাঁকড়া ধরায় নিষেধাজ্ঞা

এস. এম সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: সুন্দরবনের উপকূলে নদনদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা সব ধরনের কাঁকড়া আহরণ ২ মাস নিষিদ্ধ করেছে বনবিভাগ। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুরো সুন্দরবনে এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।

২ মাস দরিদ্র পরিবারগুলোর খেয়ে-না খেয়ে কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে। ফলে জেলেরা সরকারি সহায়তা দেওয়ার দাবি জানান।

বুধবার (৩ জানুয়ারি) বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নূরুল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি- এই ২ মাস প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদ মা কাঁকড়ার প্রধান প্রজনন মৌসুম। এ সময় প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষে সরকারিভাবে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার পাশ পারমিট বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে।

এই ২ মাসে ডিমওয়ালা মেদী-মায়া কাঁকড়া বিভিন্ন নদী-খালে কোটি কোটি বাচ্চা ছাড়ে। বনের উপকূলীয় এলাকার হাজারো জেলে এ কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

এই কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি করে ব্যবসায়ীরাও বছরে কোটি টাকা আয় করেন। বনবিভাগের তথ্যানুযায়ী, সুন্দরবনের ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১৮৭৪.১ বর্গ কিলোমিটার যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১.১৫ শতাংশ।

সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। বনের এ প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় এবং মা কাঁকড়ার প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষে ৫৯ দিনের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ রাখেন।

তবে এই ২ মাস কীভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাজারো জেলে।

কালাবগি এলাকার জেলে সালাম মোল্যা বলেন, কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম শুরু হয়েছে। বনবিভাগ পাশ পারমিট বন্ধ করে দিয়েছে, তাই সুন্দরবন থেকে ৩ দিন আগে কাঁকড়া ধরা বন্ধ করে বাড়ি ফিরে এসেছি।

শুধু আমি না, আমার মত সকল জেলেও নৌকা-দড়ি নিয়ে ফিরে এসেছে। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল কোনো লোক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে যায় না। যারা যায়, তারা অধিকাংশই অতি দরিদ্র।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালে এ ২ মাস দরিদ্র পরিবারগুলোর খেয়ে-না খেয়ে কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে। তারপরও সরকারি নিয়ম তো মানতে হবে। কাঁকড়া ধরা বন্ধের সময়ে সরকারি কোনো ভাতার ব্যবস্থা থাকলে এমন কষ্ট হতো না। তিনি বন্ধের সময়ে সরকারি সহায়তা দেয়ার দাবি জানান।

সুন্দরবন বিভাগ জানায়, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি ২ মাস সুন্দরবনের নদ-নদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা দেশের রপ্তানি পণ্য শিলা কাঁকড়াসহ সব ধরনের কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম।

এ সময়ের মধ্যে মা কাঁকড়ার ডিম থেকে প্রচুর পরিমাণ কাঁকড়া জন্ম নেয়। মা কাঁকড়া রক্ষার জন্যই প্রতি বছরের এ সময়ে সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ করে বন বিভাগ।

এদিকে কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা জানান, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা থেকে কয়েক কোটি টাকার বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়া রপ্তানির জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

বিদেশে রপ্তানি করা কাঁকড়ার ৯৯ শতাংশ সুন্দরবন থেকে আহরণ করা হয়ে থাকে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এ দুই মাসে কাঁকড়া রপ্তানি শূণ্যের কোঠায় নেমে আসে। ফলে এর সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ এ সময় বেকার হয়ে পড়ে।

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের কাঁকড়া জেলে নিমাই চন্দ্র বালা জানান, আমার প্রধান পেশা সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ করা। বছরে এই ২ মাস আমি পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করি। ২ মাসের জন্য অন্য পেশায়ও যুক্ত হতে পারি না।

বছরে ২ মাস বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়ে মংলার জয়মনি এলাকার কাঁকড়া জেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার বিভিন্ন পেশার কর্মজীবীদের প্রণোদনা দেয়, কিন্তু আমাদের জন্য কিছু নাই।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল জানান, কাঁকড়া নদী বা খালে বেড়ে উঠলেও এর প্রজনন হয় সাগরের মুখে বা গভীর সাগরে। তাই এই সময় কাঁকড়া গভীর সাগরের দিকে ছোটে।

তাছাড়া এ সময় নদীর পানি থেকে সাগরের পানি গরম এবং নদীর পানির থেকে সাগরের পানির বেশি লবনাক্ততা থাকে। এসব কারণেও নদী খাল থেকে কাঁকড়া সাগরে ছুটে যায়।

কাঁকড়া সাগরে ছুটে যাওয়ার মুহূর্তে যাতে তাদের ধরতে না পারে সে জন্য কাঁকড়ার অভায়ারণ্য সুন্দরবনে মা কাঁকড়া রক্ষায় এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বনবিভাগ।

এছাড়া মা কাঁকড়ার যখন ডিম হয়, তখন তাদের ধরা খুবই সহজ। তারা ক্ষুধার্থ থাকে। তাদের সামনে যে খাবার দেয়া হয়, তারা দ্রুত তা খাওয়ার জন্য এগিয়ে আসে। ফলে প্রজনন মৌসুমে খুব সহজেই জেলেরা কাঁকড়া শিকার করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যদি এ সময় কাঁকড়া শিকার না করা হয়, তাহলে পরবর্তী বছরে অধিক রে কাঁকড়া উৎপাদন ও বিদেশে অধিক পরিমাণ রপ্তানি করা সম্ভব হয়।

পূর্ব-সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নূরুল করিম বলেন, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ ২ মাস কাঁকড়ার প্রজননের মৌসুম হওয়ায় এ সময় কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে শুধু সুন্দরবন এলাকায়। তাই সুন্দরবন বিভাগ এটা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

উল্লেখ্য, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে কাঁকড়া রপ্তানিতে আয় দাঁড়ায় ১৪৬ মিলিয়ন ডলারে। এভাবে পর্যায়ক্রমে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এর আয় ৫-৬ গুণ বেড়ে য়ায়। কাঁকড়া আহরণের সবচেয়ে বড় ভান্ডার সুন্দরবন।

এবি/এইচএন

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নরসিংদীর মনোহরদীতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা

আজ ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। উদয়ের পথে শুনি কার বাণী—

কুষ্টিয়ায় ৮১ কিলোমিটার এলাকায় বিজিবির তৎপরতা

সাম্প্রতিক ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠে...

একই স্থানে সূর্যোদয়–সূর্যাস্ত দেখার অপার সৌন্দর্যের দ্বীপ রাঙ্গাবালী

পটুয়াখালীর সমুদ্রবেষ্টিত দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী যেন লুকিয়ে থাকা এক টুকরো স...

চট্টগ্রামে ছাত্রদল কর্মী হত্যায় আরেক ছাত্রদল কর্মী গ্রেপ্তার

মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাটে ছাত্রদলকর্মী তাহমিদ উল্যাহ (১৮) হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযো...

ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ করার প্রতিবাদে রাঙ্গাবালীতে বিক্ষোভ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে পটুয়াখালীর...

মহেশখালীতে অবৈধভাবে মাটি কাটার অভিযোগে অর্থদণ্ড

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় অবৈধভাবে মাটি কাটার ও পরিবহনের অভিযোগে ভ্রাম্যমা...

শ্রীমঙ্গলে ‘হারমোনি উৎসব’ স্থগিত 

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের শ্রী...

নরসিংদীর মনোহরদীতে জুয়া খেলার অভিযোগে চারজন আটক 

জে,এম, শাহজাহান মোল্লা, মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি: মনোহরদী উপজেলার কাচিকাট...

রাউজানে নির্বাচনী প্রস্তুতি ঘিরে যৌথ মহড়া ও মতবিনিময় সভা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন–২০২৬ সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনের...

বিজয় দিবস উদযাপনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির প্রস্তুতি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি মহান বিজয় দিবস উদযাপনের জন্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা