বিনোদন
মুভি রিভিউ ‘দরদ’

‘জমজমাট আয়োজনে সাধারণ গল্প’

শাহরিয়ার আহমেদ

বিশ্বের আনাচে-কানাচের সিনেমা দেখে আমার বড় হয়ে ওঠা। সবকিছু দূরে রেখে গতকাল দেখলাম এক বাংলা ভাষার সিনেমা নাম ‘দরদ’। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রচেষ্টায় নির্মিত সিনেমাটির কাহিনি চিত্রনাট্য ও সংলাপ পরিচালনা করেছেন অনন্য মামুন। সিনেমা দেখার আগে সব সময় আমি ভাবি ‘আমি কিছু জানি না’। এরপর সিনেমা আমার কাছে নতুন কিছু নিয়ে আসে যা আমাকে ভাবায়। অনন্য মামুনের ‘দরদ’ সিনেমাও আমাকে ভাবিয়েছে।

সিনেমাটি নিয়ে বলার আগে আমি বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কিছু বলে রাখার প্রয়োজন অনুভব করছি। বাংলা ভাষার সিনেমার আদিম প্রয়াস ‘নাচ-গান’ সিনেমা শিল্প থেকে যতদিন না মুক্তি পাবে ততদিন এই ভাষার সিনেমা স্বাবলম্বী হবে না। তাহলে প্রশ্ন, কেন এখনো বিষয়গুলো চলে আসছে? উত্তরটা মার্কেটিং বা সিনেমার প্রচার-প্রচারণা। সিনেমার নাচ-গান মানুষ দেখবে আর জানবে বাজারে একটি সিনেমা আসছে। শুধু এটুকুই।

যাক সে আলাপ, এ আলাপের রেশ ধারে আরেকটু বলি আমাদের দেশে সিনেমা বানাতে যত টাকা প্রয়োজন হয় তার বিশাল একটা অংশ ব্যয় হয় সিনেমার প্রচার-প্রচারণায়। বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির এই বাণিজ্যিক প্রথা যতদিন না ভাঙা যাবে ততদিন বাংলা সিনেমার নিজস্ব কোনো পরিচয় তৈরি হবে না। এবার আসি ‘দরদ’ সিনেমার আলোচনায়। সিনেমাটি মন্দের ভালো। একেবারেই খারাপ নির্মাণ নয়। সুন্দর আলো, সুন্দর সংলাপ, আর সুন্দর চিত্রায়ণ আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে। সিনেমাটি উপভোগ্য। সময় নষ্ট হবে না।

বাংলাদেশ ভারতের যৌথ প্রযোজনায় এর আগে আরও ছবি নির্মিত হয়েছে। সে সবের আলোকে এই সিনেমার বাণিজ্যিক সফলতা-ব্যর্থতা মাপা ঠিক নয়। যেহেতু সিনেমা নির্মাণ একজন পরিচালকের ভালোবাসার জায়গা সুতরাং আমরা তার প্রচেষ্টাকে ভালোবাসবো।

সিনেমায় ক্যারিয়ার গড়তে হলে পরিচালকের দর্শন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, কারণ তার দর্শনই তাকে একদিন অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। একজন গুণি নির্মাতার কাছে সিনেমার বাণিজ্যিক সফলতা-ব্যর্থতা তেমন কিছু নয়। আর যদি তিনি একজন পেশাদার নির্মাতা হন তবে তার বাণিজ্যিক সফলতা-ব্যর্থতা মাপা যেতিই পারে।

তাহলে দরদ সিনেমা কেমন ছিল? এটি একটি ভিন্নধারার বাণিজ্যিক সিনেমা। সিনেমা শিল্প হয়ে উঠতে কিছু জিনিস অবশ্যই বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখতে হয়। ইংরেজি আর্ট শব্দের বাংলা যেমন শিল্প তেমনই ইন্ডাস্ট্রি শব্দের বাংলাও শিল্প। শৈল্পিক সিনেমা বানাতে আরও কিছু সংযোজন- বিয়োজন করতে হয় একজন পরিচালককে।

‘ফিল্ম থিওরি’ মেনে যে সিনেমা বানানো হয় তাকে বলে অঁতর থিওরি। এ থিওরিতে একজন পরিচালক এমনভাবে সিনেমাটি পরিচালনা করেন যেখানে তার নিজস্ব একটি রন্ধনপ্রণালি ফুটে ওঠে। সহজ ভাষায় সিনেমাটি আমরা দেখি পরিচালকের চোখে। তাই আমি বলেছি ‘দরদ’ একটি বাণিজ্যিক সিনেমা ও ভিন্ন ধারার ‍ সিনেমা। সিনেমার গল্পটি বারবার ঘুরপাক খেয়েছে সিনেমার প্রধান চরিত্র দলুকে ঘিরে। এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলা মেগাস্টার শাকিব খান। দলুকে ঘিরে গল্প আবর্তিত হলেও দলুকে সিনেমায় দেখানো হয় একজন অ্যান্টাগনিস্ট হিসেবে। আর প্রোটাগনিস্ট হিসেবে রয়েছেন সিনেমার নায়িকা সোনাল চৌহান। বাংলা সিনেমায় এই প্রচেষ্টা খুব সাধারণত দেখা যায় না। শাকিব খানে অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার সাথে খুব সুন্দর একটি মিশেল দেখা গেছে সোনাল চৌহানের। এর সাথেসাথে দুই বাংলার গুণী অভিনেতাদের পর্দায় খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন অনন্য মামুন। পাশাপাশি আলো, শব্দ, সংলাপের অসাধারণ ব্যবহার করেছেন সিনেমার পরিচালক।

বাণিজ্যিক সিনেমা হিসেবে ‘দরদ’ বাণিজ্যকে কিছুটা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মতন সিনেমা। পোস্টারে অ্যাকশন জনরার ডিজাইন থাকলেও সিনেমাটি আসলে সাইকো-থ্রিলার। খুব সহজেই একটি জটিল গল্পকে আট থেকে আশির কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন পরিচালক। ‘দরদ’ সিনেমা যেহেতু একটি যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমা তাই এই সিনেমায় বিশেষভাবে লক্ষণীয় এর ভাষার ব্যবহার। সিনেমা অবশ্যই সংস্কৃতিতে প্রভাব ফেলে। সিনেমা সমাজের কাছে দায়বদ্ধ না থাকলে সমাজে বদলে যায়। তবে দরদ সিনেমায় এরকম কিছু লক্ষ করা যায়নি। যেহেতু দুই দেশের যৌথ প্রয়াসে বানানো সিনেমা। সেহেতু কিছুটা ভাষার আমদানি-রপ্তানি দুদেশেই হবে।

এই সিনেমায় আরও বিষয় হলো সিনেমার মাধ্যমে ব্রান্ডিং। যেহেতু এই সিনেমায় অর্থ লগ্নি করেছে ইউনিলিভার সেহেতু সিনেমাটোগ্রাফিতে কোথাও কোথাও প্রবণতা লক্ষ করা যায় কোম্পানিটাকে ব্রান্ডিং করতে। এটা এখন আর তেমন নতুন কিছু নয়। প্রায় হরহামেশাই হয়।

এই সিনেমার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ শাকিব খান। বাংলাদেশে স্টারডমে একেবারে সবার ওপরে তিনি তা স্বীকার করতেই হবে। শাকিব খানের মার্কেট ভ্যালু এই সিনেমায় খুব বড় একটা প্রভাব রেখেছে। অনন্য মামুনের পরিচালিত এই সিনেমাটি এ যাবত তার ক্যারিয়ারে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি। আমরা এর আগেও পর্দায় অনন্যা মামুনের মুন্সিয়ানা দেখেছি।

তার পরিচালিত আরও কিছু সিনেমা হলো, মোস্ট ওয়েলকাম, আমি শুধু চেয়েছি তোমায়, অস্তিত্ব, আবার বসন্ত, নবাব এলএলবি, মেকআপ ও কসাই। সবগুলো সিনেমাই ব্যবসায় সফল।

সব মিলিয়ে সিনেমাটি আমার কাছে খুব সাধারণ লেগেছে। পাশাপাশি মনে হয়েছে এত জটিল একটি গল্পকে কীভাবে এত সহজ করে বলা সম্ভব। হয়ত তা পরিচালক ও তার টিম মেম্বারদের চেষ্টার কারণেই হয়েছে। সব মিলিয়ে আমার চোখে সিনেমাটি তার জায়গা বানাতে পেরেছে যেখানে সিনেমাটি যেতে চেয়েছিল।

লেখক: সাংবাদিক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন বিভাগ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

শিল্পী বিপাশা গুহঠাকুরতার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

বিশিষ্ট নজরুল-সঙ্গীত শিল্পী বিপাশা গুহঠাকুরতার তৃত...

ঢাকায় পরপর ৩ দিন ৩ দলের সমাবেশ

বৃহস্পতিবার (১ মে) থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের সরকার...

আমাকে চেয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বানাতে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সরকারের সময় তিনবার...

কালীগঞ্জে ফিল্মিস্টাইলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জে...

হিটলারের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল, নতুন তথ্য

এডলফ হিটলার সারাবিশ্বে পরিচিত নাম। তিনি ছিলেন স্বৈ...

উত্তরায় প্রাইভেটকারে অপহরণ; ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় অপহরণে ব্যবহৃত একটি প্রাইভে...

আমাকে চেয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বানাতে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সরকারের সময় তিনবার...

ভালুকায় সৌন্দর্য বাড়াতে ইউএনও’র ‘নিজ খরচে’ সবুজ বিপ্লব

ভালুকা উপজেলার পরিবেশ সংরক্ষণ ও নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নি...

কালীগঞ্জে ফিল্মিস্টাইলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জে...

সড়কহীন  ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা