ছবি: সংগৃহীত
সারাদেশ

রাজার ভরসায় এখন দিশেহারা আক্কেলপুরের কৃষক

মতলুব হোসেন, জয়পুরহাট প্রতিনিধি

উচ্চ ফলনের আশায় চলতি আমন মৌসুমে নতুন জাতের ‘রাজা ধান’ লাগিয়েছিলেন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কৃষকরা। কিন্তু রাজার উপরে সেই ভরসা আজ পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নে। বীজ কোম্পানির আশ্বাসে যে “ব্রাক-১৮ রাজা ধান” চাষ করেছিলেন তারা, সেই ধান এখন মাঠে শুকিয়ে খড়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে। পরিশ্রমের ফল চোখের সামনে নষ্ট হতে দেখে হতাশ ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা।

আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের আবাদপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম চলতি মৌসুমে রাজা ধান চাষ করে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, “স্বপ্ন ছিল এই ধান বিক্রি করে ছেলের পড়াশোনার খরচ ও মা-বাবার চিকিৎসা করাব। দোকানদার বলেছিল এই ধান খুব ভালো ফলন দেবে, গাছও হবে শক্ত। প্রথমে গাছও ছিল সতেজ ও শীষভরা। কিন্তু এখন পুরো জমির প্রায় ৮০ শতাংশ গাছ শুকিয়ে গেছে। সব শেষ হয়ে গেছে।”

রফিকুলের মতো একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন উপজেলার রামশালা, কাঁঠালবাড়ী, ভিকনী ও পশ্চিম আমুট্ট সংলগ্ন খাদাইল মাঠের কৃষকরা। তারা সবাই “রাজা ধান” নামের একই জাতের বীজ ব্যবহার করেছিলেন। শুরুতে চারা ছিল সবল ও সবুজ, কিন্তু কিছুদিন পরই পাতাগুলো হলুদ হয়ে যায় এবং গাছ গোড়া থেকে শুকাতে শুরু করে। কয়েক দিনের মধ্যেই বেশিরভাগ জমির ধান গাছ মরে যায়।

কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, কলেজ বাজারের মজিবর বীজ ভান্ডার থেকে ব্রাক-১৮ রাজা ধানের বীজ ক্রয় করেছিলেন। নিয়মিত কীটনাশক প্রয়োগ করলেও গাছ টিকেনি। কৃষক মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, “বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ২৭ মন ফলনের আশায় রাজা ধান লাগিয়েছিলাম। দেড় বিঘা জমিতে ২০-২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন সব গাছ পুড়ে যাওয়ার মতো শুকিয়ে গেছে। আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি।” তিনি জানান, এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।

শাহিনুরের মতো ভিকনী গ্রামের কৃষক মতিন মিয়াও একই সমস্যায় পড়েছেন। সাত বিঘা জমিতে রাজা ধান চাষ করে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন তিনি। এখন ধান না পেয়ে তিনি ঋণে জর্জরিত।

মজিবর বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মজিবর রহমান বলেন, “আমি কৃষকদের অভিযোগ পেয়েছি এবং বিষয়টি ব্রাক অফিসে জানিয়েছি।”

ব্রাক জয়পুরহাট কার্যালয়ের সিনিয়র টেরিটরি অফিসার আসাদুজ্জামান খান বলেন, “আমরা কৃষকদের সাথে কথা বলেছি। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, “রাজা ধান লাগিয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে যদি দেখা যায় বীজের গুণগত সমস্যার কারণে ক্ষতি হয়েছে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে কৃষি গবেষণাগার থেকেও টিম এনে পরীক্ষা করানো হবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবিদা খানম বৈশাখী বলেন, “ধানের ছবি সহ একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ব্রাক ধান-১৮ জাতটি কৃষকরা উচ্চ ফলনের আশায় চাষ করেছিলেন। কিন্তু এখন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে ধানের গাছ মরে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসারের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। রিপোর্টে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আমারবাঙলা/এফএইচ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মোরেলগঞ্জে লবণাক্ত জমিতে কমলা     

বেকার জীবন যে কত কষ্টকর, তা ভালো করেই জানেন নাসির উদ্দিন মল্লিক। পাঁচ সন্তান...

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণায় পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংক অকার্যকর

আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত শরিয়াভিত্তিক ৫টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে কে...

ফেনীতে চাঞ্চল্যকর দুই শিশু হত্যা মামলার মূল আসামি জনি গ্রেপ্তার

ফেনীর সদরের বিরিঞ্চিতে দুই শিশুকে পুড়িয়ে হত্যার মামলার মূল আসামি কামাল হোসেন...

খালেদা জিয়ার খালাসের রায় প্রকাশ 

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ডের রায়...

ঝিকরগাছা থেকে পিতাপুত্রসহ পাঁচজন উদ্ধার, আটক ২

চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রাম থেকে ২৫ দিন আগে অপহৃত পাঁচজন...

গুমের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, অধ্যাদেশ অনুমোদন

গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছ...

রাজার ভরসায় এখন দিশেহারা আক্কেলপুরের কৃষক

উচ্চ ফলনের আশায় চলতি আমন মৌসুমে নতুন জাতের ‘রাজা ধান’ লাগিয়েছিলেন...

এক্সিম ব্যাংকের সাবেক এমডি ফিরোজ গ্রেপ্তার

এক্সিম ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনক...

সোজা আঙুলে না উঠলে বাঁকা করব, ঘি আমাদের লাগবেই: তাহের

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, &ld...

নভেম্বরে গণভোটের দাবিতে উত্তাল পল্টন

নভেম্বরে গণভোট আয়োজন ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে রাজধানী...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা