সারাদেশ

যে ওয়ার্ডে ভোটার মাত্র ৮২ জন

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের সাগরতীরের কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত ৯ নম্বর খুদিয়ারটেক ওয়ার্ড, যেখানে লোকসংখ্যা মাত্র ১৯৭ জন। তাঁরাও আবার থাকেন না খুদিয়ারটেকে। বসবাস করেন প্রায় এক কিলোমিটার দূরের তাবেলরচর এলাকায়। ওয়ার্ডটিতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য হিসেবে কাজ করছেন আনোয়ারা বেগম (৬৭) নামের একজন নারী। দুই দফায় নির্বাচিত হয়ে প্রায় ৯ বছর ধরে ইউপি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি।

সর্বশেষ ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আলী আকবর ডেইল ইউনিয়ন পরিষদের এই ওয়ার্ডের নির্বাচন হয়। ভোটার ছিলেন ৮২ জন। এর মধ্যে ৪১ জন নারী, ৪১ জন পুরুষ। নির্বাচনে ৩৯ ভোট পেয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন আনোয়ারা বেগম। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাফর আলম পান ৩০ ভোট। ৮২ ভোটারের মধ্যে প্রয়োগ হয় ৭৬ ভোট। এর আগে ২০১৬ সালের নির্বাচনেও ৩৭ ভোট পেয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন আনোয়ারা বেগম।

আনোয়ারা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী আহম্মদ খলিল ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তিনবারের (১৫ বছর) ইউপি সদস্য ছিলেন। সারা জীবন তিনি মানুষের জন্য কাজ করেছেন। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৪ বছর আগে তিনি মারা গেছেন। পরে ভোটারদের অনুরোধে তিনি প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়ে আসছেন।

আনোয়ারার পাঁচ ছেলে। তিন ছেলে কুতুবদিয়ার বাইরে ব্যবসা ও চাকরি করেন। বাকি দুজন সৌদি আরবে থাকেন। কুতুবদিয়াতে একাকী সবকিছু সামলান বৃদ্ধা এই নারী। তিনি বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হয় এই অঞ্চলের মানুষকে। জীবনে ৩০টির বেশি ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেছি, চোখের সামনে শত শত মানুষকে মরতে দেখেছি। যত দিন বেঁচে থাকি, মানুষের সেবা করেই বাঁচতে চাই।’

বাসিন্দা কম যে কারণে

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে খুদিয়ারটেকের অন্তত ১০ হাজার ঘরবাড়ি সাগরে বিলীন হয়। নিহত হন দুই হাজারের বেশি মানুষ। বসতবাড়ি হারানো খুদিয়ারটেকের অন্তত ২৯ হাজার মানুষ মাথা গোঁজার জন্য ঠাঁই করে নেন কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমুদ্র উপকূলীয় সরকারি খাসজমিতে। এতে অনেকটাই জনশূন্য হয়ে পড়ে এলাকাটি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকাজুড়ে নেই কোনো ঘরবাড়ি। অন্তত ৩ হাজার একর জমিতে করা হয়েছে লবণ চাষ। খুদিয়ারটেকের ১৫টি পরিবার বসবাস করে তাবলেরচর এলাকায় বেড়িবাঁধের পাশে নির্মিত কয়েকটি ঘরে। বেড়িবাঁধের পাশে নির্মিত বসতিগুলো বেড়া, পলিথিন আর ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে গড়া। বাসিন্দারা সাগরে মাছ ধরে এবং লবণের মাঠে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, ১৯৭০ সালের দিকে কুতুবদিয়ার আয়তন ছিল ৯৯ দশমিক ১৩ বর্গকিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে দ্বীপের আয়তন কমতে কমতে এখন ২৭ বর্গকিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে দ্বীপের চারপাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে লন্ডভন্ড হয়। তখন ১৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। বসতবাড়ি হারিয়ে অন্তত ৬০ হাজার মানুষ অন্য স্থানে চলে যান। সাগরে বিলীন হয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খুদিয়ারটেক ও রাজাখালী দুটি মৌজা।

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ইউপি সদস্য আনোয়ারা বেগমের ঘরটিও বিলীন হয়। এরপর তিনি পরিবার নিয়ে চলে আসেন পাঁচ কিলোমিটার দূরে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসংলগ্ন শান্তিবাজার গ্রামে। সেখানে এক খণ্ড জমি কিনে বসতি শুরু করেন।

আনোয়ারা বেগম বলেন, ১৯৯০ সালের শেষ দিকেও খুদিয়ারটেকের লোকবসতি ছিল ২৯ হাজার। এখন কেউ নেই। একানব্বইয়ের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে খুদিয়ারটেক মৌজার চান্দারপাড়া, উত্তরপাড়া, কাহারিয়া পাড়া, মাঝরপাড়া, বক্তারকাটা, ছমদের ডেইল, টেকপাড়া, সাইটপাড়া, কিল্যাপাড়ার ২টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১২টি মক্তব-মাদ্রাসা, ৩০টি মসজিদসহ ১০ হাজার ঘরবাড়ি সাগরে বিলীন হয়েছে। খুদিয়ারটেকের বাস্তুহারা অন্তত ৩০ হাজার মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন কক্সবাজার শহর, চকরিয়া, রামু, পেকুয়া, টেকনাফ, বান্দরবানের লামা, আলীকদম, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, মিরসরাই, রাউজান, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া এলাকায়।

আনোয়ারা বলেন, খুদিয়ারটেকের পশ্চিম পাশে দুই কিলোমিটার এবং দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে সাড়ে তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মিত হলে বাস্তুহারা মানুষগুলো পুনরায় জন্মভূমিতে বসবাসের সুযোগ পাবেন। ৮-৯ বছর ধরে তিনি বেড়িবাঁধ নির্মাণের চেষ্টা-তদবির করে যাচ্ছেন। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা খুদিয়ারটেকে ৭-৮ হাজার ভোটারকে এলাকায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও চালাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১১০।

আলী আকবর ডেইল ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আকতার কামাল বলেন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে খুদিয়ারটেক নিশ্চিহ্ন হলেও কিছু ভোটার পাশের এলাকাতে বসবাস করেন। জনসংখ্যা অনুপাতে তাঁদের ত্রাণসহায়তাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। ইউপি সদস্য আনোয়ারা বেগম সবকিছু তদারকি করেন।

আমারবাঙলা/জিজি

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ফুলকোর্ট সভা ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতিদের অংশগ্রহণে ফুলকোর্ট সভা...

যে কারনে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন,ব্যাখ্যা করলেন অজিত দোভাল

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল বলেছেন, দুর্বল শাসন ব্যবস...

দেশজুড়ে সমবায়ের জয়যাত্রা, বঞ্চিত সিলেট বিভাগ

দেশজুড়ে যখন সমবায়ের জয়যাত্রা, তখন সিলেট বিভাগ যেন রয়ে গেছে উন্নয়নের মানচিত্রে...

সুদানে ভয়াবহ গণহত্যা চালালো আরএসএফ

সুদানের দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশার শহরে ভয়াবহ গণহত্যার চিত্র উঠে এসেছে। আবুবকর আ...

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সমঝোতার পথে সরকার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দলগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে সরকার। ইতোমধ...

১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ২৬ টাকা কমালো সরকার

ভোক্তাপর্যায়ে এলপি গ্যাসের নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নভেম্বর মাসের জন্য...

কয়েকটি দলের মন রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টা দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছেন: মঞ্জু

কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মন জুগিয়ে চলতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা দেশকে অনিশ্চিত গন্তব...

মোরেলগঞ্জে ভরা মৌসুমে সারের জন্য হাহাকার কৃষকরা

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের উপকূলে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে য...

বাংলাদেশ গ্রাহক বাজারে পাঁচ মাসেই মুখ থুবড়ে পড়ল স্টারলিংক

বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের যাত্রা...

আবারো জামায়াতের আমির হলেন ডা. শফিকুর রহমান

ফের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ‘আমির’ নির্বাচিত হয়েছেন ডা. শফিকুর...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা