সংগৃহীত
স্বাস্থ্য

হঠাৎ খোসপাঁচড়া বৃদ্ধির কারণ কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক

জীবনে একবারও খোসপাঁচড়া হয়নি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। মানুষের অসচেতনতা, ভুল চিকিৎসা আর ঘন বসতির কারণে খোসপাঁচড়া ‘নীরব মহামারী’র আকার ধারণ করছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগীই এখন খোসপাঁচড়ায় আক্রান্ত। গত কয়েক মাসে ছোঁয়াচে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।

তারা বলছেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগীই এখন খোসপাঁচড়ায় আক্রান্ত। গত কয়েক মাসে ছোঁয়াচে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।

সপ্তাহখানেক ধরে চুলকানিতে ভুগছেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা শাহনাজ আক্তার। বুধবার তিনি ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগে চিকিৎসা নিতে যান।

শাহনাজ বলেন, “সারা শরীরেই চুলকানি আছে। তবে শরীরের ভাঁজে ভাজে বেশি চুলকানি। লাল লাল গোটা উঠেছে, রাতে অনেক বেশি চুলকায়। চুলকালে আবার আরাম হয়, কিন্তু রক্ত তো বের হচ্ছে।

“ভালো হয় না দেখে ডাক্তারের কাছে আসছি। বাসার সবাইকে ওষুধ ব্যবহার করতে বলছে।”

হাসপাতালে গিয়ে পাওয়া গেল দুলাল শেখকে। নাখালপাড়ার এই বাসিন্দা দুই মাস ধরে চুলকানিতে আক্রান্ত। তিনি আক্রান্ত হওয়ার বেশ কিছুদিন পর তার স্ত্রীরও চুলকানি শুরু হয়েছে। তবে হাসপাতালে মূলত হাঁটুর ব্যথার চিকিৎসা করাতে এসেছেন দুলাল শেখ। পরে ডাক্তার তাকে চর্মরোগ বিভাগেও পাঠিয়ে দেন।

দুলাল বলেন, “শরীরের চিপায় চাপায় অনেক চুলকানি। দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাইছিলাম। প্রথম প্রথম চুলকানি কিছুটা কমলেও যায় না। এখন দেখিয়ে দেখি ডাক্তার কী বলে।”

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাহেদ পারভেজ বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১২০০ থেকে দেড় হাজার রোগী আসছেন। এর মধ্যে শতকরা ৭০ জনই খোসপাঁচড়ার রোগী।

“বর্তমানে আমি বলব বাংলাদেশে এটি নীরব মহামারী। অর্থাৎ সবার ঘরেই এ রোগটা আছে, কিন্তু কেউ স্বীকার করছে না। যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ার কারণে এটা বাড়ছে তো বাড়ছেই। এ রোগটা খুব ছোঁয়াচে। সবাইকে সচেতন হতে হবে।”

তিনি বলছেন, রোগী যতই চুলকায় ততই আরাম পায়। তবে চুলকানি বেড়ে পরবর্তীতে ‘সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন’ হয়। কোনো কোনো রোগীর পুঁজ তৈরি হয়, কারোর শরীরে গর্ত হয়ে যায়।

“আঙ্গুলের চিপায়, জয়েন্ট, শরীরের ভাঁজ, নাভি, জননাঙ্গে চুলকানি তীব্র হয়, বেশি তীব্রতা বাড়ে রাতে ঘুমানোর সময়। প্রথমদিকে শরীরের উত্তাপ বাড়ে।”

জীব্নযাত্রার পরিবর্তন এনে খোসপাঁচড়া রোগ নিয়ন্ত্রণ বা এড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন ডা. জাহেদ।

তিনি বলেন, “এটা কতবার হতে পারে বলা মুশকিল। একেকজনের পরিবেশ, থাকার অবস্থান, আর্থ-সামাজিক অবস্থা একেক রকম। যার স্যানিটেশন, আর্থ-সামাজিক অবস্থা দুর্বল তার ক্ষেত্রে এ রোগটা বারবার হতে পারে। ৫/৬ বারও হয়েছে এমন রোগীও আমরা পেয়েছি।”

যারা খোসপাঁচড়ায় আক্রান্ত হননি, তাদের সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, প্রতিদিন সাবান দিয়ে গোসল করা, বাসার কারোর মধ্যে কোন ধরনের চুলকানি দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং সুযোগ থাকলে খোসপাঁচড়ায় আক্রান্ত রোগীকে আলাদা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

রোগটি দিনদিন বাড়ার কারণ হিসেবে সহকারী অধ্যাপক মো. মোর্শেদুল ইসলাম সজীব রোগীদের ‘অসচেতনতা, চিকিৎসা সম্পন্ন না করা আর নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার না করা’কে দায় দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, “অল্প একটু ভালো হোন…. আর যেহেতু রোগটা ছোঁয়াচে তার থেকে আরও একশ জনের হচ্ছে। একজনের কাছ থেকে ছড়াতে সময় লাগে ১৫ মিনিট, একজন রোগী যদি প্রপার ট্রিটমেন্ট না নেন, তার মানে সে তো ভালো হচ্ছে না। হাজার হাজার মানুষকে ছড়াবে। এভাবে মোটামুটি সারাদেশে ছড়ায় গেছে।“

ঠিকঠাক চিকিৎসা নিলে এ রোগ থেকে ১২ ঘণ্টায় সুস্থ হওয়া সম্ভব জানিয়েব ডা. সজীব বলেন, তাতে ছড়ানোরও সুযোগ থাকে না।

“আগে শীতে একটা মহামারীর মতো আসত, তবে সারা বছর এত রোগী থাকত না। মানুষ অনেক ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় থাকে… হল, মেস, মাদ্রাসায় এ রোগ ছড়িয়ে গেছে। এমনও রোগী আছে, যাদের কোনো চুলকানি থাকে না, কিন্তু তারা রোগ ছড়াচ্ছে।”

রোগ থাকুক বা না থাকুক, এক বাসায় একসঙ্গে থাকেন এমন সবার চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

“একজন ওষুধটা মাখল না, তার গায়ে জীবাণু আছে- যারা ভালো হয়ে গেছিল তাদের আবার হবে ওর কাছ থেকে। এ রোগে একজন মানুষ বারবার আক্রান্ত হতে পারে।“

খোসপাঁচড়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা না নিলে পরে আরও জটিলতা তৈরির ঝুঁকি রয়েছে বলে জানান ডা. সজীব।

তিনি বলেন, “সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় স্ক্রিনের। একজিমা… আরও বিভিন্ন রোগের দিকে চলে যায়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন তৈরি হয়। ইনফেকশনটা কিডনিতে গিয়ে কিডনি রোগ হয়। বড়দেরও কিডনি রোগ হতে পারে।”

একজন সুস্থ মানুষের আঙ্গুলের ফাঁকে, জননাঙ্গে চুলকানি থাকলে এবং এর তীব্রতা রাতে বাড়লে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

“চিকিৎসা নেওয়ার সময় নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। সবাইকে ওষুধ মাখতে হবে, সব জামা কাপড় গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। খোঁজ খবর রাখতে হবে পরিবারের কারোর চুলকানি হচ্ছে কিনা, যদি হয় সেক্ষেত্রে একসাথে চিকিৎসা নিয়ে ফেলতে হবে।

“আর নরমালি কোথাও বেড়াতে গেলে, কোনো বিছানায় ঘুমাতে গেলে খেয়াল রাখতে হবে বিছানার চাদর ধোয়া কিনা, আশেপাশের কারোর খোসপাঁচড়া আছে কিনা। থাকলে আলাদা থাকতে হবে।”

আমারবাঙলা/ইউকে

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

শিবগঞ্জে জুলাই-আগস্টের শহীদদের স্মরণে ছাত্রদলের স্মরণসভা

জুলাই-আগস্ট মাসের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ছাত্র-জনতার স্মরণে শিবগঞ্জে এক স্মর...

ছাত্র-জনতাকে ঢাকায় আনতে আট জোড়া ট্রেন ভাড়া করল সরকার

ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে ছাত্র-জনতা আনতে আট জোড়া...

বিষাদ স্মৃতি নিয়ে ক্লাসে ফিরেছেন মাইলস্টোন শিক্ষার্থীরা

একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুনের হলকায় ছিন্নভিন্ন হয়েছিল ভবন, স্...

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ১৩৩ শিশু

গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশজুড়ে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলন দমনে চালানো সহিংস অভি...

রাজসাক্ষী দিতে হাজির সাবেক আইজিপি মামুন

জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে আন্...

এনসিপি ‘কিংস পার্টি’, তাদের দুজন সরকারে : ইফতেখারুজ্জামান

গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত হওয়া রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) &lsqu...

দম্পতিদের গ্রিন কার্ড পাওয়ার নিয়ম কঠোর করল যুক্তরাষ্ট্র

পরিবার-ভিত্তিক অভিবাসন ভিসার আবেদন, বিশেষ করে বিবাহ-ভিত্তিক সব আবেদন আরও কঠোর...

‘বিশ্বাসের তেল-পানি’ নিতে ভিড়

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার চেঁউখালি গ্রামের বায়তুল নুর জামে মসজিদ চত্বরে &lsquo...

সুনামগঞ্জে পরিবহণ শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলছে

তিন দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছে সুনামগঞ্জ জেলা সড়ক প‌...

ইয়ামিনকে এপিসি থেকে ফেলা এএসআই গ্রেফতার

ঢাকার সাভারে জুলাই আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শিক্ষার্থী আসহাবুল ইয়া...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা