মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের পাথারিয়া চা বাগানে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বেকি লেক দেশে এখনো তেমন পরিচিত নয়। পাথারিয়ার ঐতিহ্যবাহী চা বাগানের মাঝখানে থাকা এ লেকটি যেন প্রকৃতির লুকিয়ে রাখা এক রত্ন।
চারদিকে সবুজে ঘেরা চা বাগান, পাখির কলতান, বানরের খেলা আর লেকজুড়ে ফুটে থাকা লাল–সাদা শাপলা—সব মিলিয়ে অপার্থিব এক দৃশ্যপট গড়ে তুলেছে বেকি লেককে। প্রায় ২৭ একরজুড়ে বিস্তৃত এই লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রতিনিয়তই পর্যটকদের আহ্বান জানায়।
শীতের শুরুতে এ লেকে আসে নানা প্রজাতির অতিথি পাখি। পাশাপাশি সারাবছরই দেখা মেলে বক, হাসপাখি, সারসসহ কিছু বিরল প্রজাতির পাখির আনাগোনা। পাখিপ্রেমীদের কাছে তাই এ লেকের আকর্ষণ আরও বেশি। আশপাশে চা শ্রমিকদের জীবনধারার বাস্তব চিত্রও দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে।
তবে এমন মনোরম সৌন্দর্যের লেকেও পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক কম। পাথারিয়া চা বাগানের বাসিন্দা ও শ্রমিকরা জানান, “এই লেক অনেক পুরোনো। আগে শুধু আমরা যেতাম, এখন বাইরে থেকেও কেউ কেউ আসে। সরকার বা প্রশাসন নজর দিলে পর্যটক আরও বাড়বে।”
স্থানীয় এক যুবক বলেন, “এলাকায় অনেক সুন্দর জায়গা আছে, কিন্তু প্রচার–প্রসারের অভাবে খুব কম মানুষই জানে। বেকি লেককে ঘিরে উন্নয়ন হলে বড়লেখার নাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।”
নিউ সমনবাগ চা বাগানের ব্যবস্থাপক শাহিদ নেওয়াজ বলেন, “বেকি লেককে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে তা আমাদের জন্য উপকারী হবে। এতে স্থানীয় অর্থনীতি যেমন চাঙ্গা হবে, তেমনি কর্মসংস্থানও বাড়বে।”
স্থানীয়রা মনে করেন, বেকি লেককে কেন্দ্র করে একটি সংরক্ষিত পর্যটন এলাকা গড়ে তোলা সম্ভব। লেকের পাশেই নির্মিত হতে পারে দর্শন টাওয়ার, নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা ও পর্যটকদের জন্য বিশ্রামাগার। স্থানীয় হস্তশিল্প, খাদ্যকেন্দ্র ও ছোট উদ্যোগ গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের মানুষ সরাসরি অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবেন। তরুণরা গাইড হিসেবে কাজ করে আয়ের পথও তৈরি করতে পারবেন।
বেকি লেক ঘিরে পর্যটন সম্ভাবনা তাই অনেক, যা বাস্তবায়ন হলে বড়লেখা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় নতুন অর্থনৈতিক গতি সঞ্চার করবে।
আমারবাঙলা/এফএইচ