বাণিজ্য ডেস্ক: আমদানিতে নানা শর্তের কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি কিছুটা কমছে। চলতি হিসাবের পরিস্থিতিও বেশ উন্নতি হয়েছে। তবে আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতিতে পড়ছে দেশ। এর মূল কারণ, যে হারে দেশে বিদেশি ঋণ আসছে তার চেয়ে বেশি আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের সামগ্রিক লেনদেনে বড় ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের(জুলাই-নভেম্বর) বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে দুই হাজার ৯৬ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এসময় আমদানি হয়েছে দুই হাজার ৫৭২ কোটি ডলারের পণ্য। এতে করে অর্থবছরের পাঁচ মাসে ৪৭৬ কোটি ২০ লাখ (৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১১০ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ৫২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা।
এদিকে ডলার সংকট কাটাতে নানা উপায়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। একই সঙ্গে তুলনামূলক কম প্রয়োজন বা বিলাসী পণ্যের এলসি খোলার সময় শতভাগ পর্যন্ত নগদ মার্জিনের শর্ত দেওয়া আছে। এ ছাড়া বড় এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে তথ্য নিয়ে তার সঠিকতা যাচাই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ডলার সংস্থান করা ছাড়া ব্যাংকগুলোকে এলসি না খুলতে বলা হয়েছে। এর প্রভাবে আমদানি কমেছে।
পাঁচ মাসে বৈদেশিক বাণিজ্যের আর্থিক হিসাবে ৫৪০ কোটি ডলার ঘাটতি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ গুণের চেয়ে বেশি। গত অর্থবছরের জুলাইয়ে এ ঘাটতি ছিল ১২৬ কোটি ডলার
এক হাজার ৭১৫ কোটি ৫০ লাখ (১৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে গত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষ হয়। এর ধারাবাহিকতায় ঘাটতি নিয়েই শুরু হয়েছে চলতি অর্থবছর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, পাঁচ মাসে বৈদেশিক বাণিজ্যের আর্থিক হিসাবে ৫৪০ কোটি ডলার ঘাটতি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ গুণের চেয়ে বেশি। গত অর্থবছরের জুলাইয়ে এ ঘাটতি ছিল ১২৬ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি, বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ও আশানুরূপ রপ্তানি ও রেমিট্যান্স না আশা এবং বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এ ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে।
তারা জানান, সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি বেড়ে যাওয়া মানে বিভিন্ন উৎস থেকে দেশে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিশোধ ঝুঁকি এড়াতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বা রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচুর পরিমাণ ডলার বিক্রি করছে।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৬৭০ কোটি (৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ধারাবাহিকভাবে কমছে রিজার্ভ। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ আছে ২৭ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার, যা বিপিএম ৬ অনুযায়ী রয়েছে ২১ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি, বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ও আশানুরূপ রপ্তানি ও রেমিট্যান্স না আশা এবং বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এ ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে
চলতি হিসাবের ভারসাম্য (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স)
চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।
সবশেষ তথ্য বলছে, অর্থ বছরের পাঁচ মাসে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭ কোটি ৯০ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ৫৬ কোটি ডলার।
ওভারঅল ব্যালেন্স
সামগ্রিক লেনেদেনে (ওভারঅল ব্যালেন্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-নভেম্বর মাসে সামগ্রিক লেনেদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এই সূচকটি আগের বছর একই সময় ঘাটতি ছিল ৬০০ কোটি ডলার।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৯০৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগের বছর একই সময় পাঠিয়েছিলেন ৯০৫ কোটি ২০ লাখ ডলার।
বিদেশি বিনিয়োগ
দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে বাংলাদেশ যেখানে ২১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময় এসেছে ১৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নেট এফডিআই বলা হয়।
আলোচিত অর্থবছরে নিট বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। এই সূচকটি আগের বছরের চেয়ে ১০ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ কমে ৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার হয়েছে। আগের অর্থবছরে নেট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৭৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
একই আলোচিত সময় নিট বিদেশি বিনিয়োগ (বিবিধ) কমেছে ৬০৫ কোটি ডলার। যা আগের বছরে বেড়েছিল ৫১ কোটি ডলার।
একই সঙ্গে আলোচিত সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) নেতিবাচক অবস্থা অব্যাহত আছে। গত অর্থবছরে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নেট) যা এসেছিল তার চেয়ে ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার চলে গেছে। তার আগের অর্থবছরের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ঋণাত্মক ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            