সংগৃহীত
সারাদেশ

নিষেধাজ্ঞায়ও সুন্দরবনে কাঁকড়া নিধন

খুলনা ব্যুরো

প্রজনন মৌসুমের মধ্যেই সুন্দরবনের নদ-নদী থেকে অবাধে কাঁকড়া ধরা হচ্ছে। ফলে জলজ এ প্রাণীর বংশবিস্তার কমে যাওয়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি প্রজনন মৌসুমে সব ধরনের কাঁকড়া ধরা ও সংগ্রহ নিষিদ্ধ হলেও সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন বাজারে প্রতিদিন কাঁকড়া বেচাকেনা হচ্ছে। প্রকাশ্যে বেচাকেনা হলেও এ ব্যাপারে বনবিভাগের কোনো নজরদারি নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।

খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও কয়রা উপজেলার ঘড়িলাল, গোলখালি, আংটিহারা, কাটাকাট, দেউলিয়া, দাকোপ উপজেলার নলিয়ান, কালিনগর, কৈলাশগঞ্জ, রামনগর, বাজুয়া, চালনা ও পাইকগাছা বাজারের ডিপোগুলোতে প্রতিদিন কাঁকড়া বেচাকেনা হচ্ছে।

সুন্দরবন ও সুন্দরবনসংলগ্ন বিভিন্ন নদ-নদী থেকে জেলেরা এসব কাঁকড়া শিকার করছেন। প্রজনন মৌসুমে শিকার নিষিদ্ধ হলেও তা উপেক্ষা করেই কিছু অসাধু বনরক্ষী ও কর্মকর্তার যোগসাজশে একটি চক্র কৌশলে সুন্দরবনে ঢুকে কাঁকড়া ধরছে বলে তাদের অভিযোগ।
‘প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের’ ছত্রচ্ছায়ায় এক শ্রেণির জেলে সুন্দরবনের ভেতরে ঢুকে কাঁকড়া শিকার করছে বলে সুন্দরবন অ্যাকাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদিরও জানিয়েছেন।

এতে কাঁকড়া ধরা বন্ধ রাখার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সুন্দরবনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। তবে সেটি সুন্দরবনের ক্ষতি করে নয়। শিলাসহ ১৪ প্রজাতির কাঁকড়ার প্রজনন হয় সুন্দরবনে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। এ সময়ে সুন্দরবনে জলজ এ প্রাণীটি শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে বাজারে চাহিদা থাকায় নিষেধাজ্ঞা মানছেন না কাঁকড়া শিকারিরা। প্রজনন মৌসুমে মা কাঁকড়া রক্ষা করা না গেলে, এর বংশবিস্তার লোপ পাবে এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে পুরো সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ওপর। পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক এ সম্পদ রপ্তানিতেও প্রভাব পড়বে।

আনোয়ারুল কাদির বলেন, উপকূলের প্রান্তিক মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস সুন্দরবন। এই বনকে ঘিরে কোনো না কোনোভাবে প্রায় দেড় লাখ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। নিয়ম মেনে সুন্দরবন থেকে সম্পদ আহরণ করা না হলে সংকটে পড়বে সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) বন- সুন্দরবন।

বনবিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ এক হাজার ৮৭৪ দশমিক এক বর্গকিলোমিটার; যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। জলভাগে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫০টি নদ-নদী ও খাল আছে। এসব খালে বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়াসহ ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে।

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম হওয়ায় প্রতিবছর ৫৯ দিনের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ রাখে বনবিভাগ।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, প্রতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস কাঁকড়া সুন্দরবনের নদী-খালে ডিম পাড়ে। সেই ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়। এ সময়ে কাঁকড়ার প্রজনন নির্বিঘ্ন রাখতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাভজনক হওয়ায় প্রজনন মৌসুমেও কাঁকড়া ধরা বন্ধ হচ্ছে না। অধিক লাভের আশায় একশ্রেণির জেলে বনবিভাগের কাছ থেকে মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে কৌশলে বনে ঢুকে ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকার করছেন।

খুলনার পাইকগাছার কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি হীরামন মণ্ডল বলেন, এ অঞ্চল থেকে প্রায় ২৫ টন কাঁকড়া প্রতিদিন ঢাকায় পাঠানো হয়। এর মধ্যে খুলনা থেকে সাত টন, সাতক্ষীরা থেকে আট টন ও বাগেরহাট থেকে ছয় টন যায়।
এ ছাড়া খুলনা অঞ্চলের কাঁকড়া চীন, তাইওয়ান, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি হয় বলে জানান তিনি।

হীরামন বলেন, ২০০ গ্রাম ওজনের মাদি কাঁকড়া কেজিপ্রতি বিক্রি হয় দুই হাজার ৫০০ টাকায় এবং ১৮০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রামের কম ওজনের গুলো বিক্রি হয় দুই হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে। আর ৫০০ গ্রামের বেশি ওজনের পুরুষ কাঁকড়া কেজিপ্রতি এক হাজার ৮০০ টাকা ধরে বিক্রি হয়।

কয়রা থেকে মাসে অন্তত ১০ লাখ টাকার কাঁকড়া ঢাকায় পাঠানো হয়। আর বিদেশে রপ্তানি করা কাঁকড়ার বড় অংশই সুন্দরবনের নদী-খাল থেকে ধরা হয় বলে কয়রা উপজেলা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতা আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে জেলেসহ সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পশাপাশি চোরাইপথে কাঁকড়া আহরণের প্রবণতা বন্ধে টহল ও নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নরসিংদীর মনোহরদীতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা

আজ ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। উদয়ের পথে শুনি কার বাণী—

কুষ্টিয়ায় ৮১ কিলোমিটার এলাকায় বিজিবির তৎপরতা

সাম্প্রতিক ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠে...

একই স্থানে সূর্যোদয়–সূর্যাস্ত দেখার অপার সৌন্দর্যের দ্বীপ রাঙ্গাবালী

পটুয়াখালীর সমুদ্রবেষ্টিত দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী যেন লুকিয়ে থাকা এক টুকরো স...

চট্টগ্রামে ছাত্রদল কর্মী হত্যায় আরেক ছাত্রদল কর্মী গ্রেপ্তার

মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাটে ছাত্রদলকর্মী তাহমিদ উল্যাহ (১৮) হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযো...

ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ করার প্রতিবাদে রাঙ্গাবালীতে বিক্ষোভ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে পটুয়াখালীর...

মহেশখালীতে অবৈধভাবে মাটি কাটার অভিযোগে অর্থদণ্ড

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় অবৈধভাবে মাটি কাটার ও পরিবহনের অভিযোগে ভ্রাম্যমা...

শ্রীমঙ্গলে ‘হারমোনি উৎসব’ স্থগিত 

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের শ্রী...

নরসিংদীর মনোহরদীতে জুয়া খেলার অভিযোগে চারজন আটক 

জে,এম, শাহজাহান মোল্লা, মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি: মনোহরদী উপজেলার কাচিকাট...

রাউজানে নির্বাচনী প্রস্তুতি ঘিরে যৌথ মহড়া ও মতবিনিময় সভা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন–২০২৬ সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনের...

বিজয় দিবস উদযাপনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির প্রস্তুতি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি মহান বিজয় দিবস উদযাপনের জন্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা