সংগৃহিত
জাতীয়

দেশে বায়ুদূষণের আওতা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বায়ুদূষণে গত বছর দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আর নগর হিসেবে ২০২৪ সালে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ দূষিত নগর ছিল ঢাকা। এদিকে ২০২৩ সালে বায়ুদূষণে বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল। এই সময়টিতে নগর হিসেবে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। বিদায়ী বছর বায়ুদূষণে শীর্ষ দেশ ছিল আফ্রিকার চাদ; নগর হিসেবে শীর্ষে ছিল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০২৪’-এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

সার্বিকভাবে বায়ুদূষণে আগের বছরের তুলনায় গত বছর বাংলাদেশের অবস্থানের সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। শীর্ষ অবস্থান থেকে বাংলাদেশের স্থান হয়েছে দ্বিতীয়। আর নগরীগুলোর মধ্যে ঢাকা দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় হয়েছে। তবে এই পরিবর্তনকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন না পরিবেশবাদী ও গবেষকেরা। তারা বলছেন, দূষণের আওতা বাড়ছে। এবারের প্রতিবেদন সেই বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে। কারণ, আগে দেখা গেছে যে রাজধানীর তুলনায় দেশের সার্বিক গড় বায়ুমান কিছুটা ভালো থাকত। কিন্তু এবারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ এবং দেশের সবচেয়ে দূষিত নগরী ঢাকার বায়ুর মান প্রায় একই।

গবেষণা পদ্ধতি ও দূষণ উপাদান: বাতাসের মান নিয়ে আইকিউএয়ার তৈরি করে তাৎক্ষণিক সূচক; যা একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর আইকিউএয়ার দূষণের বার্তা হালনাগাদ করে। এসব প্রতিবেদন একত্র করে বার্ষিক বৈশ্বিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এবার ১৩৮টি দেশ ও অঞ্চলের আট হাজার ৯৫৪টি শহরের প্রায় ৪০ হাজার নজরদারি স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আইকিউএয়ারের প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। আগের বছর ১৩৪টি দেশ থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন হয়েছিল। সে তুলনায় এবারের প্রতিবেদন অনেক বিস্তারিত করা হয়েছে।

বরাবরের মতো এবারের প্রতিবেদনেও বায়ুদূষণের অন্যতম উপাদান পিএম ২.৫ বা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপাদান ধরেই এই বায়ুর মান নির্ণয় করা হয়েছে। পিএম ২.৫ মূলত ধূলিকণা। এটি স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক। কণাগুলো ফুসফুস ও রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে থাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, পিএম ২.৫-এর গড় বার্ষিক মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে পাঁচ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়।

বাংলাদেশ ও অন্য দেশগুলোর অবস্থান: প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২.৫) উপস্থিতি ছিল ৭৮ মাইক্রোগ্রাম। আর ২০২৩ সালে তা ছিল ৭৯ দশমিক নয় মাইক্রোগ্রাম। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বেঁধে দেওয়া মানদণ্ডের চেয়ে অন্তত ১৫ গুণ বেশি।

এবারের প্রতিবেদনে বায়ুদূষণে শীর্ষে আছে চাদ। দেশটির বায়ুতে পিএম ২.৫–এর উপস্থিতি ৯১ দশমিক আট মাইক্রোগ্রাম।

এবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অনেক অঞ্চল এবং দেশে দূষণের মাত্রা তীব্র হলেও পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ না থাকায় ওই সব এলাকার দূষণ পরিস্থিতি হিসাবের মধ্যে আনা যায় না। এর মধ্যে আফ্রিকা ও পশ্চিম আফ্রিকার কিছু দেশ আছে। দূষণে শীর্ষ স্থানে থাকা চাদ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য না পাওয়ায় ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে এ দেশের নামই ছিল না। এবারের প্রতিবেদনে ভয়ানক দূষণে আক্রান্ত আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোর নাম নেই। এর কারণ প্রয়োজনীয় তথ্য না পাওয়া। ২০২৩-এর প্রতিবেদনে বুরকিনা ফাসোর অবস্থান ছিল পঞ্চম।

এবার বায়ুদূষণে বাংলাদেশের পরই আছে পাকিস্তান। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে যথাক্রমে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও ভারত। তবে দূষণের তালিকায় থাকা প্রথম তিনটি দেশের তুলনায় পরের দেশগুলোর বায়ুর মান অপেক্ষাকৃত উন্নত। দূষণে প্রথম থেকে তৃতীয় স্থানে থাকা দেশগুলোর বায়ুর মান ৭০ বা এর বেশি। কিন্তু চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানের গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও ভারতের বায়ুর মান যথাক্রমে ৫৮ দশমিক দুই ও ৫০ দশমিক ছয়।

তৃতীয় দূষিত নগর ঢাকা: আইকিউএয়ারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নগর হিসেবে দূষণের দিক থেকে ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। এ নগরের বায়ুতে পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি ছিল ৭৮ মাইক্রোগ্রাম। ২০২৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ৮০ দশমিক দুই মাইক্রোগ্রাম। এ তালিকায় শীর্ষে থাকা নয়াদিল্লির বাতাসে পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি ৯১ দশমিক আট। ২০২৩ সালে তা ছিল ৯২ দশমিক সাত মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ সর্বোচ্চ দূষিত এ নগরীরও বায়ুর মান কিছুটা হলেও উন্নত হয়েছে।

এবার ঢাকা এবং সার্বিকভাবে বাংলাদেশেরও বায়ুর মান ৭৮। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হয় যে দূষণ বিস্তৃত হচ্ছে।

স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব: বায়ুদূষণ মানব স্বাস্থ্যের প্রতি একটি বড় হুমকি। ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ বায়ুদূষণ। আর পাঁচ বছরের নিচের বয়সী শিশুদের মৃত্যুরও দ্বিতীয় কারণ এটি। বাংলাদেশেও দূষণে ক্ষতি কম নয়।

বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে বায়ুদূষণসহ চার ধরনের পরিবেশদূষণে দুই লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে। এ ছাড়া দূষণের কারণে ওই বছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ছয় শতাংশ সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) দেশের বিভিন্ন শহরের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষণিক গবেষণা করে। ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘বায়ুদূষণে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে থাকাটা আমাদের জন্য মোটেও ভালো সংবাদ নয়। আগের বছরের চেয়ে ২০২৪-এ আমরা তেমন উন্নতি করতে পারিনি। কিন্তু আমরা দেখেছি, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি আগের নয় বছরের চেয়ে বেশি দূষিত ছিল। এ বছর বায়ুদূষণ আরো বেড়ে যাচ্ছে।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো. জিয়াউল হক বলেছেন, ‘আমরা দূষণ রোধে চেষ্টা করছি, কিন্তু কিছু উৎস নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যেমন আন্তসীমান্ত বায়ুপ্রবাহ। আবার ইটভাটার দূষণ, শুকনা মৌসুমে পাতা পোড়ানোর মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।’

জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, বায়ুদূষণ যে জনস্বাস্থ্যের একটি বড় বিষয়, সেই উপলব্ধি সরকারের মধ্যে নেই। সেই উপলব্ধি যত দিন পর্যন্ত না আসবে, তত দিন উন্নতি হওয়া সম্ভব নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, বায়ুদূষণ বিনিয়োগ ও পর্যটনের মতো খাতেও প্রভাব ফেলে। দূষণ রোধে সরকারি যেসব তৎপরতা আছে, সেগুলো কার্যকর নয়। পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে সঠিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘মাত্র ছয় মাসে বায়ুমানের অনেক উন্নতি হবে, তা আশা করা ঠিক নয়। কিন্তু আমরা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি, যাতে এমন আশা করতে পারি যে আগামী শুকনা মৌসুমে ঢাকা এবং দেশের অন্যত্র বায়ুমানের উন্নতি হবে।’

তিনি বলেন, ঢাকার রাস্তার পাশের খোলা স্থান ঘাস দিয়ে আচ্ছাদিত করা হবে। তাতে অন্তত ধুলাদূষণ কমবে। ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে সাড়ে ছয় হাজার ইটভাটা পর্যবেক্ষণ করা যায় না। এ ক্ষেত্রেও নজরদারি বাড়ানোর চেষ্টা থাকবে।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আর দেরি নয়, তামাক নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ দরকার

জনস্বার্থে ন্যায্য ও সময়োপযোগী প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে দেশের ত...

বাংলাদেশ সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কার টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণা

পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট...

ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রস্তুত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী  

ইসি যে সময় ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে সে সময়ের জন্য প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী&rs...

খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনায় ট্রাম্পের ভেটো

বর্তমানে খুবই আলোচিত বিষয় হল ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেন...

ড্রয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ শুরু মেসির মায়ামির

নতুন কিছু প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে জমকালো উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আজ...

আজ সোমবার থেকে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস

গত কয়েকদিন ধরে মৃদু তাপপ্রবাহের পর বৃষ্টিপাতের আভাস পাওয়া গেছে। দেশের বেশিরভা...

ঈদযাত্রা ‘স্বস্তিদায়ক’ না হওয়ায় ‘দুর্ঘটনা ও হতাহত বেড়েছে’: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

উৎসব বা আনন্দ করতে গিয়ে অনেক সময় নিরানন্দে পরিণত সড়ক দুর্ঘটনার কারণে। তাই যথা...

বাবাকে নিয়ে মন্দিরার পোস্ট

পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ‘নীলচক্র’ ছবিতে অভিনয় করেছেন নবাগত...

বাংলাদেশ সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কার টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণা

পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট...

ইডেন কলেজের পুকুরের পানিতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের পুকুরের পানিতে সাঁতার শিখতে গিয়ে ডুবে সানজিদা আক্ত...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা