চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সারবাহী একটি জাহাজে খুন হওয়া সাতজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
সোমবার রাতে তাদের মরদেহ হাসপাতালে আনা হলে আজ মঙ্গলবার ভোর থেকে তাদের মরদেহ নিতে হাসপাতালে ভিড় করেছেন স্বজনরা। কিন্তু এখনো ময়নাতদন্ত না হওয়ায় মরদেহ নিতে পারছেন না তারা।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ফরিদ আহমেদ আখন্দ বলেন, রাতে মরদেহগুলো হাসপাতালে আসার পর সুরতহাল শেষে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত ও আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করবে পুলিশ।
জাহাজে নিহত লস্কর শেখ সবুজের (২৭) ছোট ভাই ও জাহাজের নিহত মাস্টার গোলাম কিবরিয়ার (৬৫) ভাগ্নে ফরিদপুরের সাদিকুর রহমান হাসপাতালের সামনে আহাজারি করেন এবং বলেন, আমরা খবর পেয়ে মরদেহগুলো নিতে এসে দেখলাম সবার মৃত্যু একই ধরনের আঘাতে হয়েছে। এটি পরিকল্পিত হত্যার ঘটনা বলে আমরা মনে করছি, । এই বিষয়ে আমরা প্রশাসনের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
জাহাজের ইঞ্জিনচালক নড়াইলের লোহাগড়ার নিহত সালাউদ্দিন মোল্লার (৪০) চাচাতো ভাই ও আরেক জাহাজের মাস্টার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গতকাল সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ফেসবুকের মাধ্যমে খবর পাই, আল–বাখেরা জাহাজে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। খবর পেয়ে আমরা আজকে মরদেহ নিতে এসেছি।
তাদের দাবি এটা কোনো ডাকাতি ছিল না। দুর্বৃত্তরা হত্যার পর কোনো কিছু নেয়নি। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। চাঁদপুরের এই নৌরুটে ব্যাপক চাঁদাবাজি চলে। বিশেষ করে যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে, সেখানে সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হয়। চাঁদা না দিলে মারধর করা হয়। বিষয়টি প্রশাসনও জানে। কিন্তু তারপরও প্রশাসন এব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করে না। এ জন্য নিরুপায় হয়ে সবাই চাঁদা দিয়ে থাকেন। চাঁদাবাজেরাই এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে।
জাহাজটিতে নতুন চাকরি নেওয়া মাগুরার নিহত মাজেদুল ইসলামের বাবা আনিসুর রহমান হাসপাতালে সন্তানের মরদেহ দেখে চিৎকার করে মাটিতে গড়াগড়ি করছিলেন।
এসময় মাজেদুলের চাচা রহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা শুনেছি এই ঘটনার পর সাতজনের মধ্যে তিনজন বিকেল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে দুপুরে গিয়েও তাদের হাসপাতালে আনে বিকেলে। সময়মতো না আনার কারণে দুজন হাসপাতালে মারা যায়। এতে পুলিশের গাফিলতি ছিল।
এ ঘটনায় একই এলাকার নিহত সজিবুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম মুন্সি ও রানার পরিচয় পাওয়া গেছে।
স্বজনরা জানান, এঘটনায় বেঁচে থাকা ফরিদপুরের জুয়েলই শুধু বলতে পারবে এর সঙ্গে কারা জড়িত। তারা চান, প্রশাসন দ্রুত এর সুষ্ঠু তদন্ত শেষে বিচার করবে।
এদিকে, জাহাজে থাকা ৭২০ টন সার ছাড়িয়ে নিতে বিসিআইসির এক কর্মকর্তা ও ঠিকাদার চাঁদপুরে এসে প্রশাসনের কাছে ধর্না দিয়েছেন। তবে আইনগত কারণে তারা তা নিতে পারছেন না।
চাঁদপুরের নৌপুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, আমরা এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা করতে পারিনি। তবে প্রক্রিয়া চলছে। জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও নৌপুলিশ পৃথক তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। দুপুরের মধ্যে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বাসস জানায়, চাঁদপুরে সারবাহী জাহাজে ডাকাতের আক্রমণ এবং ক্রুদের হত্যাকাণ্ড ও আহতের ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
সোমবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক এবং যুগ্ম সচিবকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।
এই কমিটিকে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও দায়দায়িত্ব নিরূপণ, অনুরূপ ঘটনা রোধে ভবিষ্যতে করণীয় নির্ধারণপূর্বক সুস্পষ্ট সুপারিশসহ প্রতিবেদন আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে জমা দিতে হবে।
আমার বাঙলা/ এনআর
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            