রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান মন্তব্য করেছেন সামনে যে জাতীয় নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, সেটিকে কেবল আরেকটি সাধারণ নির্বাচন হিসেবে নয়, বরং গণ-অভ্যুত্থানের পর দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তব প্রয়োগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাঁর মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্মলগ্নে একটি স্পষ্ট নৈতিক ভিত্তি ছিল সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, দলহীন ও স্বার্থহীন একটি প্রশাসন একটি বিশ্বাসযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করবে, তারপর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবে। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড সেই প্রতিশ্রুতির ওপর প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক ভিডিওতে তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এখন আলোচনার কেন্দ্রে। একজন এখনও নিশ্চিত নন তিনি ভোটে অংশ নেবেন কিনা, আর অন্যজন প্রকাশ্যে জানিয়েছেন যে তিনি ঢাকায় ভোট দিতে চান এবং তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগের ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তবে কোন রাজনৈতিক পরিচয়ে তিনি নির্বাচনে নামবেন, তা পরিষ্কার নয়। এই অনিশ্চয়তা সাধারণ দুই ব্যক্তিকে ঘিরে নয় বরং রাষ্ট্রের শীর্ষ নির্বাহী কাঠামোয় থাকা নীতি-নির্ধারকদের আচরণ পুরো ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে নন-পার্টি কেয়ারটেকার বা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার মূল দর্শন ছিল নির্বাচনকালে রাষ্ট্রক্ষমতা যেন কোনো দল বা ব্যক্তির স্বার্থে ব্যবহার না হয়। ১৯৯৬ সালে ১৩তম সংশোধনী সেই ভাবনাকে সাংবিধানিক রূপ দেয়। ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর যে ধারাবাহিকভাবে পক্ষপাতমূলক নির্বাচন হয়েছে, তা দেশবাসী দেখেছে। সাম্প্রতিক সুপ্রিম কোর্ট আবার ভবিষ্যতের জন্য সেই পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার রায় দিয়েছেন যদিও বর্তমানে যে নির্বাচন সামনে, তার ক্ষেত্রে রায়টি কার্যকর নয়।
জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা একটি মৌলিক রাজনৈতিক সত্য যা উপেক্ষা করা যায় না। এই কারণে অন্তর্বর্তী সরকার একধরনের অনানুষ্ঠানিক কেয়ারটেকার সরকারের অবস্থানে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডেও স্পষ্ট করে বলা হয় নির্বাচনী প্রক্রিয়া পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকতে হবে; সরকারি পদে থাকা কেউ যেন ক্ষমতা বা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণ করতে না পারে আর সম্ভাব্য যেকোনো স্বার্থসংঘাত অগ্রিম শনাক্ত ও প্রতিরোধ করতে হবে।
আমারবাঙলা/এসএবি