ট্টগ্রামে গ্যাস দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং মূল্যবান প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে গ্যাস ব্যবহারে জনগণকে সচেতন করতে নগরজুড়ে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে নগরীর শ্যামল ছায়া আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এ অভিযান পরিচালনা করে কেজিডিসিএল। গ্যাস দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে জনগণকে রক্ষা করা এবং অপচয় রোধের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করাই এ ক্রাশ প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্য।
অভিযানকালে বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস লাইনের লিকেজ পরীক্ষা করা হয়। কোথাও লিকেজ শনাক্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট লাইনের গ্যাস সরবরাহ বন্ধসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে অভিযানিক দল।
এ সময় গ্রাহকদের সতর্ক করে বলা হয়, গ্যাস লিকেজের কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে কেজিডিসিএলের সংশ্লিষ্ট টেকনিশিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধান নিতে হবে।
অভিযান চলাকালে কয়েকটি কলোনিতে অনুমোদিত একটি চুলার আওতায় একাধিক পরিবারের রান্না করার চিত্র দেখা যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে গ্যাস লাইনে লিকেজের সমস্যাও শনাক্ত করা হয়। গণবসতিপূর্ণ কলোনিগুলোতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে এবং গ্যাসের অপচয় রোধে তাৎক্ষণিক বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এই ক্রাশ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে নগরীর শ্যামল ছায়া আবাসিক এলাকার ‘আনোয়ারা আয়ুব কলোনি’ ও ‘ফটিকছড়ি কলোনি’সহ মোট তিনটি কলোনির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কেজিডিসিএলের বিশেষ টিম। তবে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের আজকের মধ্যেই কেজিডিসিএলের ষোলশহর অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দ্রুত প্রিপেইড মিটার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন অভিযানে নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তারা।
গ্যাস অপচয় রোধ ও লিকেজজনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গ্রাহক ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতামূলক তথ্যসম্বলিত লিফলেটও বিতরণ করা হয়।
লিফলেটে উল্লেখিত সতর্কতামূলক নির্দেশনাসমূহ—
• আপনার রাইজার থেকে চুলা পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ গ্যাস লাইনের সম্ভাব্য লিকেজ জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষা করুন।
• পরীক্ষায় কোনো লিকেজ শনাক্ত হলে দ্রুত কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)-এর অনুমোদিত গ্যাস লাইন ফিটার বা ঠিকাদারের মাধ্যমে মেরামত করুন।
• কেজিডিসিএল কর্তৃক পরিদর্শনকালে আপনার আঙ্গিনার অভ্যন্তরীণ লাইনে কোনো লিকেজ পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন বা গ্যাস সরবরাহ স্থগিত করা হবে এবং এ বিষয়ে কোনো আপত্তি গ্রহণযোগ্য হবে না।
• রান্না শেষে অবশ্যই চুলা ও চাবি বন্ধ করুন। অপ্রয়োজনে চুলা জ্বালিয়ে রাখবেন না। গ্যাস স্বল্পতা বা অন্য কোনো কারণে চুলা নিভে গেলে দ্রুত চাবি বন্ধ করে নিশ্চিত হোন কোথাও গ্যাস লিক হচ্ছে কি না।
• চুলা জ্বালানোর আগে অন্তত ১৫–২০ মিনিট রান্নাঘরের দরজা ও জানালা খোলা রাখুন, যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে। সবসময় যথাযথ ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখুন এবং প্রয়োজনে এক্সহস্ট ফ্যান ব্যবহার করুন।
• নিয়মিত লিকেজ পরীক্ষা করুন। সাবান বা শ্যাম্পুর ফেনা ব্যবহার করে চুলার নব, পিতলের চাবি ও সংযোগস্থলে বুদবুদ দেখা যায় কি না পরীক্ষা করুন।
অভিযানে নেতৃত্বদানকারী কেজিডিসিএলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিস্ট্রিবিউশন সাউথ) প্রকৌশলী আজাদ রহমান বলেন, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস লাইনের লিকেজ ও অননুমোদিত ব্যবহারের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এসব ঝুঁকি কমাতে এবং গ্যাসের অপচয় রোধ করতেই নগরজুড়ে এই ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অনুমোদিত একটি চুলার আওতায় একাধিক পরিবারের রান্না করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কয়েকটি কলোনির গ্যাস সংযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে বৈধ উপায়ে প্রিপেইড মিটার স্থাপন ও নিরাপদ সংযোগ পেতে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।
লিকেজজনিত গ্যাস দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং মূল্যবান প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় রোধে কেজিডিসিএলের এ সচেতনতামূলক কার্যক্রমে গ্রাহক ও সাধারণ জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আমারবাঙলা/এসএ