জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে অচলাবস্থা দূর হয়নি। সরকারের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের ছাড়পত্র দিতে বলেছে। ঈদের ছুটি শেষে তাঁরা (আহত ব্যক্তিরা) আবার হাসপাতালে ফিরে এলে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত মঙ্গলবার এই হাসপাতালে মাত্র তিনজন রোগী ভর্তি ছিলেন, তাঁরা জুলাই অভ্যুত্থানে আহত। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালের পুরুষ ও নারী ওয়ার্ডে আর কোনো রোগী ছিলেন না। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ খোলা ছিল, বেলা ১টা পর্যন্ত ৬০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি হননি, কোনো অস্ত্রোপচার হয়নি।
দুই সপ্তাহ ধরে দেশের সবচেয়ে বড় এই বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতালে অচলাবস্থা চলছে। গত ২৮ মে জুলাই আহতদের সঙ্গে সাধারণ রোগী এবং হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সংঘর্ষ–মারামারির পর হাসপাতালে সব ধরনের সেবা বন্ধ হয়ে যায়। ভর্তি রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে হাসপাতালের পরিচালক খায়ের আহমেদ চৌধুরী ছুটিতে আছেন।
এদিকে ঈদের ছুটির এক দিন আগে জরুরি বিভাগ চালু করা হয়েছে। আগামী শনিবার হাসপাতাল পুরোদমে চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক মো. জানে আলম মৃধা।
ঈদের ছুটির আগে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ৫৪ জন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে তিন–চারজন ছাড়া বাকি সবাই বাড়ি চলে গেছেন। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কেউ হাসপাতালের ছাড়পত্র নিয়ে যাননি।
কী বলেছে বিশেষজ্ঞ কমিটি
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের চোখের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ৩ জুন চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কমিটির প্রধান ঢাকা মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. মোস্তাক আহাম্মদ। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের তিনজন চক্ষুবিশেষজ্ঞ এই কমিটির সদস্য।
কমিটি ৪ জুন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে আহত ব্যক্তিদের চোখ পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওই দিন ৫৪ জন আহত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৩০ জন বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে চোখ পরীক্ষা করান। বাকি ২৪ জন চোখ দেখাতে বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে যাননি।
বিশেষজ্ঞ কমিটি ওই দিনই একটি প্রতিবেদন ও করণীয় বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটির মতামতে বলা হয়, রোগীদের প্রদত্ত চিকিৎসা ও চলমান চিকিৎসা সন্তোষজনক; আপাতত রোগীদের ছাড়পত্র দিয়ে প্রয়োজনে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগের জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো; বিশেষ ক্ষেত্রে রোগীদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি ইস্পাহানি হাসপাতালে যোগাযোগ করতে উপদেশ দেওয়া হলো এবং তাঁদের দ্রুত পুনর্বাসনের জন্য সুপারিশ করা হলো।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ঈদের ছুটির সময় হাসপাতাল ছাড়ার আগে আহত কোনো ব্যক্তি ছাড়পত্র নিয়ে যাননি। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁদের অনেকেই শিগগির হাসপাতালে ফিরে আসবেন। তাঁরা যদি হাসপাতাল ছেড়ে যেতে না চান, তাহলে পরিস্থিতি আবারো জটিল হতে পারে।
হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও নার্স বলেছেন, গত প্রায় ১০ মাস সাধারণ রোগীদের তুলনায় জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজর ও মনোযোগ বেশি ছিল। সংঘর্ষ–মারামারির ঘটনায় চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মীর সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এ অবস্থায় আহত ব্যক্তিরা দলবদ্ধভাবে আবার হাসপাতালে এলে কী পরিস্থিতির উদ্ভব হবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সংশয় আছে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম মৃধা বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।’
আমারবাঙলা/জিজি