সংগৃহীত
টেকলাইফ

স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশ পিছিয়ে: জিএসএমএর জরিপ

আমার বাঙলা ডেস্ক

বিশ্বের চারটি অঞ্চলের ১২টি নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মধ্যে স্মার্টফোন মালিকানায় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে নয়টি দেশ। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারেও বাংলাদেশ তাদের চেয়ে পিছিয়ে আছে।

মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশ্বিক সংগঠন গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন (জিএসএমএ) চলতি বছরের অক্টোবরে ‘দ্য স্টেট অব মোবাইল ইন্টারনেট কানেকটিভিটি ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার নিম্নমধ্যম আয়ের ১২টি দেশের মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার–সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিক নিয়ে করা জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

জরিপে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মিসর, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, ইথিওপিয়া, উগান্ডা, গুয়াতেমালা ও মেক্সিকোর মানুষের ওপর জরিপ করা হয়েছে। ভারত ও ইথিওপিয়া ছাড়া প্রতিটি দেশের এক হাজার মানুষের ওপর জরিপ করা হয়েছে, যাদের বয়স ১৮ থেকে তদূর্ধ্ব।

জিএসএমএর জরিপ বলছে, বাংলাদেশে শহরের ৪১ শতাংশ এবং গ্রামের ২৬ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। যেখানে বাংলাদেশের চেয়ে মিসর, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, গুয়াতেমালা ও মেক্সিকো এগিয়ে রয়েছে। ইথিওপিয়া ও উগান্ডা শুধু বাংলাদেশের পেছনে আছে।

মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন দেশে সিম ও স্মার্টফোনের প্যাকেজ দেওয়া হয়। যেখানে গ্রাহক কিস্তিতে ফোনের দাম পরিশোধ করতে পারেন। বাংলাদেশে এই সুবিধা নেই। একটি স্মার্টফোন কিনতে গেলে ন্যূনতম সাত–আট হাজার টাকা খরচ করতে হয়। একসঙ্গে এত টাকা দিয়ে সবাই ফোন কিনতে পারবেন না। এ ছাড়া দেশে স্মার্টফোনের বেশির ভাগ ব্যবহারকারী তরুণ। যাদের অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। অপারেটররা যদি প্যাকেজ সুবিধা দিতে চায়, তখন ঋণের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে চলে আসে।

জিএসএমএর জরিপ অনুসারে, ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশ অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে। এখানে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের হার শহরে ৪৩ ও গ্রামে ২৭ শতাংশ। তবে প্রতিদিন শহরের ৪০ শতাংশ ও গ্রামের ২৪ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ইন্টারনেট ব্যবহারেও শুধু ইথিওপিয়া বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে। তবে উগান্ডার গ্রামে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাংলাদেশের চেয়ে কম, আবার শহরে বেশি।

জরিপে দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ মোবাইল ইন্টারনেট সম্পর্কে জানেন; কিন্তু ব্যবহার করেন না।

মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শহর ও গ্রামের মানুষের কাছে বড় বাধা হচ্ছে সাক্ষরতা ও ডিজিটাল দক্ষতার অভাব। এরপর শহরের মানুষের কাছে নিরাপত্তা ও গ্রামের মানুষের কাছে সামর্থের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।

ইন্টারনেট ব্যবহারের বাধা হিসেবে গ্রামের ১১ শতাংশ ও শহরের আট শতাংশ মানুষ স্মার্টফোনের দামের বিষয়টি জানিয়েছেন। অন্যদিকে শহরের ২৮ শতাংশ ও গ্রামের ১৯ শতাংশ বলেছেন, লিখতে ও পড়তে না পারার কারণে তারা মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না। কিন্তু যারা ইতোমধ্যে ব্যবহার করেছেন, তাদের আরো বেশি মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডেটার দাম সবচেয়ে বেশি বাধা বলে উল্লেখ করা হয়। এরপরে আছে যথেষ্ট সময় না থাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে বেশি আগ্রহী।

রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের গুরুত্ব বা প্রাসঙ্গিকতা তৈরির জন্য অন্যান্য দেশ যে গতিতে নীতি গ্রহণ করেছে, তা বাংলাদেশে হয়নি। ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়াতে হলে নীতিগত বিষয়ে দ্রুত পরিবর্তন দরকার। ডেটার খরচও কমানো যাবে, যদি সরকার সংশ্লিষ্ট নীতিগুলোতে পরিবর্তন আনে।
জিএসএমএ বলছে, বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে মোবাইল ইন্টারনেট সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে মাত্র তিন শতাংশ মানুষের। ২০১৯ সালে ৭২ শতাংশ মানুষ মোবাইল ইন্টারনেট সম্পর্কে জানতেন। তা ২০২৩ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৭৫ শতাংশে।

এদিকে ভিডিও কল ও অনলাইন ভিডিও দেখতে মোবাইল ইন্টারেনেটের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে, যা ৯৩ শতাংশ। এরপরে ব্যবহৃত হয় অনলাইনে কথা বলায়, তাৎক্ষণিক বার্তা আদান–প্রদান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার ও বিনোদনের জন্য। সবচেয়ে কম ১২ শতাংশ মানুষ ব্যবহার করেন কৃষিবিষয়ক তথ্যের জন্য। আর চাকরি খুঁজতে ৩১ শতাংশ, অনলাইনে আয়ের জন্য ৪৫ শতাংশ, পড়াশোনা ও শেখা এবং সরকারি সেবার জন্য ৪৮ শতাংশ, খবর পড়তে ৬৮ শতাংশ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন বলেন, যারা বলছেন জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের দরকার নেই, তারা জানেনই না কীভাবে এগুলো ব্যবহার করে জীবনকে এগিয়ে নেওয়া যায়। অর্থাৎ তাদের কাছে সেই চাহিদা তৈরি করা যায়নি। এ ছাড়া প্রতারকদের জন্য ডিজিটাল জগৎ একটি স্বর্গরাজ্য। ডিজিটাল সাক্ষরতা না থাকায় এবং নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এসব মানুষ নিজেরাই স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছেন।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বৈষম্যবিরোধী নেতা রিয়াদের আরেকটি বাসার খোঁজ, মিলল নগদ টাকা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান রিয়াদের আর...

গণভবনই থেকে এসেছিল হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত

জুলাই মাসে ঢাকায় সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হেলিক...

ইউনূস সরকারের নিরাপদ প্রস্থানের সময় ফুরিয়ে আসছে

অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সময় ফুরিয়ে আসছে...

যুক্তরাষ্ট্রে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, পাইলট অক্ষত

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ক্যালিফোর্নিয়ায় নেভাল এয়ার স্টেশন লেমুরের কাছে মার্কিন নৌ...

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে কানাডা

ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো এবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর...

ইউনূস সরকারের নিরাপদ প্রস্থানের সময় ফুরিয়ে আসছে

অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সময় ফুরিয়ে আসছে...

ভৌতিক গল্প নিয়ে কানাডায় নুহাশ

হরর, অতিপ্রাকৃত, ফ্যান্টাসি ঘরানার সিনেমা নিয়েই মূলত কানাডার ফ্যান্টাজিয়া আন্...

এক সিদ্ধান্তেই বদলে গেল জীবনটা

২০১৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘মাসান’। সমালোচকপ্রিয় ও বহুল প্রশংসিত এ...

ফিরেই দলকে নাটকীয় জয় এনে দিলেন মেসি

এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরেই পুরোনো চেহারায় দেখা গেল লিওনেল মেসিকে। বাং...

নাঈম এবার অস্ট্রেলিয়া সফরে

বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট বাদ দিলে বাংলাদেশ শেষবার অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ খেলেছে ২০০৮ স...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা