পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার হোসেন আলী। প্রায় দশ বছর আগে ব্রেন স্ট্রোকের পরে চোখে সমস্যা দেখা দেয় তার। চিকিৎসার অভাবে তার দুটি চোখই নষ্ট হয়ে যায়। অন্ধ হয়ে যান তিনি।
এখন তার বয়স ৫০ বছর। কিন্তু দমে যাননি হোসেন। অন্ধ হয়েও শব্দ শুনেই সমস্যা বুঝে মেরামত করে ফেলেন মোটরসাইকেল। কাজ দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তিহীন। এমনকি টাকা হাতে নিয়েই বুঝে ফেলতে পারেন কোনটা কত টাকার নোট।
নয় বছর বয়সে ভাইয়ের দোকানে মোটরসাইকেল ও জেনারেটর মেরামতের হাতেখড়ি হোসেন আলীর। এরপর ধীরে ধীরে মেকানিকের কাজ রপ্ত করে ফেলেন তিনি। তখন থেকেই যন্ত্র চলার শব্দ শুনেই সমস্যাগুলো ধরে ফেলতেন এবং সেগুলো মেরামতে কাজ করতেন। দৃষ্টিশক্তি হারানোর পরও নিরাশ হননি। মঠবাড়িয়া পৌরশহরের কে এম লতিফ সুপার মার্কেটে ছোট্ট একটি দোকান ভাড়া নিয়ে আবারো মেকানিকের কাজ করা শুরু করেন। কারো অনুদান কিংবা সাহায্যে নেননি। বছরে দুইবার চোখের সমস্যার জন্য ৩৫ হাজার টাকা করে এক একটি ইনজেকশন নিতে হতো তার। তিনটি নেওয়ার পরে আর নিতে পারেননি তিনি।
এদিকে স্ত্রী সালমা বেগমের একটি কিডনি নষ্ট। তার জন্যও করতে হয় ব্যয়বহুল চিকিৎসা। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে হোসেন আলীর পরিবার। সরকার থেকে প্রতি তিন মাস পর পর দুই হাজার ৫০০ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও সেটি দিয়ে সংসার চলে না তার।
হোসেন আলী বলেন, এখন আগের মতো আয় রোজগার নেই। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। দৈনিক ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় করলেও কোনো কোনো দিন মিস যায়। সরকার যদি কোনোপ্রকার সাহায্য করে তবে উপকার হয়।
হোসেন আলীর ছেলে মোহাম্মদ তুহিন বলেন, আমার বাবা ২০১৫ সালের শেষ দিকে ব্রেন স্ট্রোক করেন এরপর থেকে তিনি চোখে দেখেন না। আমার বাবা আমারও ওস্তাদ। কোনো কাজেই তিনি দমে থাকেনি। যেকোনো কাজ তিনি শব্দ শুনে করতে পারেন। আমাদেরকেও বলেন এখানে এখানে সমস্যা, আমরা সেভাবে কাজ করি। সরকারের কাছে আমাদের একটাই আবেদন আমাদের আর্থিক অবস্থা অতটা ভালো না যে আমরা বাবার চিকিৎসা করব। প্রথমে টাকা পয়সা যা ছিল চিকিৎসায় শেষ হয়ে গেছে এখন সরকারের কাছে দাবি সরকার যদি আমাদেরকে কিছু সাহায্য করতো তবে আমরা তার চিকিৎসা করাতে পারতাম।
মঠবাড়িয়া পৌরশহরের কে এম লতিফ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রিপন বলেন, আমি দীর্ঘদিন মোটরসাইকেল পার্টসের ব্যবসা করি। সেহেতু মোটরসাইকেল মেকানিক হোসেন আলীর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। হোসেন আলী ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগে ঢাকা থেকে মঠবাড়িয়ায় আসেন। এখানে যতজন মেকানিক আছে সবাই তার শিষ্য। এখনো তিনি গাড়ির শব্দ শুনে বলে দিতে পারেন গাড়ির কী সমস্যা। একজন ভালো মিস্ত্রি দেখে যেটি না পারেন, সেটি শুনে করে ফেলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা শিবু মজুমদার বলেন, অন্ধ হয়েও হোসেন আলী নির্ভরযোগ্য এক মোটরসাইকেল মেকানিক। ক্লাচ প্লেট, ক্লাচ ডিস্ক, হেডলাইট, ইঞ্জিনের পিস্টন, টাইমিং চেনসহ মোটর সাইকেলের যাবতীয় কাজ নির্ভুলভাবে করে ফেলতে পারেন তিনি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শফিকুল আলম বলেন, হোসেন আলী দীর্ঘদিন ধরে মঠবাড়িয়াতে খুব দক্ষতার সঙ্গে মোটরসাইকেল মেরামত করে যাচ্ছেন। অসুস্থতার কারণে তিনি তার দৃষ্টিশক্তি হারান। আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় নিয়ে এসেছি। তিনি নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। এ ছাড়া ভবিষ্যতে যদি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা তার জন্য আসে আমরা অবশ্যই তাকে পৌঁছে দেব।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            