ছবি: সংগৃহীত
সারাদেশ

ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

খুলনা প্রতিনিধি

খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নে টিআর কাবিখা প্রকল্পের অর্থ লোপাটসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, প্রকল্প সভাপতি ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম কম্পানির যোগসাজশে বিভিন্ন রাস্তা, স্কুল, মন্দির ও মসজিদের নামে সরকারি বরাদ্দের টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়রা উপজেলায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তিতে ১৭৬টি প্রকল্পের মধ্যে উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের রাস্তা, স্কুল, মন্দির ও মসজিদ উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য ১৭টি প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্পে কত টাকা বা চাল বা গম বরাদ্দ করা হয়েছে তা জানে না এলাকাবাসী।

প্রকল্পের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙানোর কথা থাকলেও প্রকল্প এলাকায় কোনো সাইনবোর্ড নেই।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কাটমারচর উত্তর পাড়া পাঞ্জেগানা জামে মসজিদের সংস্কারের জন্য বরাদ্দ এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের হাজতখালী আবু বকর সিদ্দিক জামে মসজিদের বরাদ্দ এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। দুই মসজিদে ৫৫ হাজার টাকা করে দিয়ে, বাকি ৭০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন ওই মসজিদের সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান।

তবে ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, ‘চেয়ারম্যান আমাদের প্রকল্পের কথা জানিয়ে শর্ত দিয়েই ৫৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। আমরা যদি তাতে রাজি না থাকতাম, তবে এই ৫৫ হাজার টাকাও তিনি অন্যখানে দিতেন বলে জানিয়েছেন। তাই আমরা রাজি হয়েছি। আমি কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি।

এদিকে, বেদকাশি নূর আকসা জামে মসজিদের মাঠ ভরাট ও উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ ২ লাখ টাকা। মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সংশ্লিষ্টরা জানেন না বরাদ্দের কথা।

জানতে চাইলে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও ক্যাশিয়ার বলেন, ‘শুনেছি মসজিদটি নির্মাণ করা হচ্ছে দাতা সংস্থা সারজাহ চ্যারিটি ইন্টারন্যাশনালের অনুদানের টাকায় এবং মসজিদের মাঠ ভরাট করা হয়েছে মুসল্লিদের অনুদানে। মসজিদ কমিটির লোকজন চেয়ারম্যানের কাছে অনুদানের জন্য গেলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ১০ হাজার দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন, সেটিও এখনো দেননি।’

২ নম্বর ওয়ার্ডের কেয়ার রাস্তার পাশে ইমাম গাজীর বাড়ি থেকে সাবেক চেয়ারম্যান লুতফর শেখের বাড়ি পর্যন্ত মাটিসহ ইট দ্বারা সংস্কারের জন্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

লুতফরের সঙ্গে প্রতিবেশীর জমিসংক্রান্ত সমস্যার কারণে ২ ফুট পশ্চিম সাইডে রাস্তাটি সরিয়ে দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পুরনো ইটের সঙ্গে কিছু বালু ফেলে নামমাত্র সংস্কার করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন ইউপি সদস্য এবং চেয়ারম্যান মিলে।
বেদকাশি দিঘিরপাড় প্রি-ক্যাডেট স্কুল সংস্কারের জন্য বরাদ্দ এক লাখ ২০ হাজার টাকা। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্কুলটি একটি গ্রাম্য পাঠশালা। এলাকাবাসী নিবারণ মাস্টারের পাঠশালা বলেই জানে। স্কুলটির জন্য অনুদান চাইলে চেয়ারম্যান ব্যক্তিগতভাবে এক হাজার ইট দিয়েছেন।

বেদকাশি সোনালি আশা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। শর্ত সাপেক্ষে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান ও স্কুল কমিটির সভাপতি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুল শিক্ষক বলেন, ‘আমরা তো নিরুপায়, স্কুলের অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। আমাদের বেতনও হয়নি। যে টাকা চেয়ারম্যান দিয়েছেন, তা দিয়ে কোনোমতে যেখানে টুকটাক যা সমস্যা ছিল তা ঠিকঠাক করেছি।’

বেদকাশি স্কুলের পাশে পাকা রাস্তা বরাবর পিলারসহ তারের ঘেরা নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। সরেজমিনে যার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকা পেয়েছি, যা অ্যাকাউন্টে জমা আছে, আমরা এখনো কাজ শুরু করিনি।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠোমো রক্ষণাবেক্ষণ উন্নয়ন প্রকল্পের টিআর কাবিখার টাকা চেয়ারম্যান ও তার সংশ্লিষ্টরা মিলে-মিশে নামমাত্র সংস্কার করেন, আবার কোথাও নিজেই প্রকল্পের সভাপতি পুরা টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কোনো টাকা আত্মসাৎ করা হয়নি। সব প্রমাণ আমার কাছে আছে। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’

অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানান, তার ওপর আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। কয়েকজন সদস্য তার মানহানি করার লক্ষ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব করছেন।

তিনি বলেন, ‘রাস্তা, স্কুল, মন্দির ও মসজিদের টাকা আমি খাই না। আমি সব সময় ভালো কাজ করার চেষ্টা করে থাকি।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মামুনুর রশীদ বলেন, ‘চেয়ারম্যানের টাকা আত্মসাতের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজ না করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ নেই’। প্রকল্পের সভাপতি অফিসের নিয়ম অনুযায়ী টাকা পেয়ে থাকেন। অনিয়ম হলে তা খতিয়ে দেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকী বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি, এ ব্যাপারে আমার জানা নেই। প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎসহ সব অভিযোগের বিষয়ে আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখব। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অর্থ ফেরতসহ তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আমারবাঙলা/এফএইচ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়াল সরকার

দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য...

জাপানে নতুন জোট সরকার, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন তাকাইচি

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এবং ছোট ডানঘেঁষা দল জাপ...

অবশেষে জুলাই জাতীয় সনদে সই করল গণফোরাম

জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছে গণফোরাম। রবিবার (১৯ অক্টোবর) জাতীয় সংসদের এলড...

আইন অনুযায়ী শাপলা প্রতীক দেওয়া সম্ভব নয়: ইসি আনোয়ারুল

সাংবিধানিক আইন ও বিধি অনুযায়ী প্রতীকের তালিকায় শাপলা না থাকায় তা বরাদ্দ দেওয়া...

তিন দিনের নন শিডিউল ফ্লাইটের খরচ মওকুফ

শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুনের ঘটনায় আগামী তিন দিন নন-শিডিউল (আগু...

মা হলেন পরিণীতি চোপড়া

পুত্রসন্তানের মা হলেন বলিউড অভিনেত্রী পরিণীতি চোপড়া। শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাতে...

আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতল মরক্কো

গেল কয়েক বছরে ফুটবল বিশ্বে নিজেদের শক্তি জানান দিচ্ছিল মরক্কো। সর্বশেষ কাতার...

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক ইসির

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণে স...

ভারতকে হুমকি দিল ট্রাম্প

ভারত যদি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ না করে, তবে দেশটির পণ্যের ওপর ব্যাপক...

বিশেষ আদেশ জারি নিয়ে ভাবছে ঐকমত্য কমিশন

জুলাই সনদ নিয়ে ‘বিশেষ আদেশ’ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট এবং আগাম...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা