জলবায়ু সংকটের ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র দেশগুলোকে প্রতিবছর ৩০০ বিলিয়ন (৩০ হাজার কোটি) ডলার দেবে পরিবেশ দূষণকারী ধনী দেশগুলো। ২০৩৫ সাল পর্যন্ত এ অর্থ দেওয়া হবে।
রবিবার (২৪ নভেম্বর) আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে এ অর্থায়নের বিষয়ে একমত হন প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা।
জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন ‘কনফারেন্স অব পার্টিজ-কপ’ নামে পরিচিত। এবার কপের ২৯তম আসর শুরু হয় ১১ নভেম্বর। শেষ হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার (২২ নভেম্বর)। তবে জলবায়ু তহবিলে অর্থায়নের বিষয়ে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় তা এক দিন বাড়ানো হয়। অবশেষে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা ও দর-কষাকষির পর বাংলাদেশ সময় রবিবার ভোরে চুক্তিতে একমত হয় কপের সদস্যদেশগুলো।
জলবায়ু তহবিলে অর্থায়নের চুক্তির বিষয়ে আলোচনা কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে ভেস্তে যেতে বসেছিল। ধনী দেশগুলোর বিরুদ্ধে জলবায়ু তহবিলে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ার অভিযোগ তুলে শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেয় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো। তবে পরে আবার আলোচনায় যোগ দেয় তারা।
চূড়ান্ত চুক্তি অনুযায়ী, ২০৩৫ সাল পর্যন্ত দরিদ্র দেশগুলোকে প্রতিবছর অন্তত ৩০০ বিলিয়ন ডলার দেবে উন্নত দেশগুলো। জলবায়ু তহবিলে জমা দেওয়া এই অর্থ দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনীতিকে আরো পরিবেশবান্ধব করতে এবং দেশগুলোয় জলবায়ু সংকটের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় খরচ করা হবে। বর্তমানে এই তহবিলে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার জমা দিচ্ছে ধনী দেশগুলো।
এর আগে শুক্রবার খসড়া চুক্তিতে বছরে ২৫০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে ওই প্রস্তাব নাকচ করে দেয় দরিদ্র দেশগুলো। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর দাবি ছিল, তাদের জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি পোষাতে বছরে এক দশমিক তিন ট্রিলিয়ন (এক লাখ ৩০ হাজার কোটি) ডলার দিতে হবে। পরে বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয় ধনী দেশগুলো।
এ প্রস্তাবেও অসন্তোষ ছিল দরিদ্র দেশগুলোর। তাদের অভিযোগ, এই বরাদ্দও অপ্রতুল। মূলত এ নিয়ে দর–কষাকষিই রবিবার ভোর পর্যন্ত গড়ায়। কপ-২৯-এর পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, শিল্পোন্নত দেশগুলোতে প্যারিস চুক্তির বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতায় ফিরতে শুরু করেছেন। ফলে এক দশমিক তিন ট্রিলিয়ন ডলার তহবিলের অর্থ অঙ্গীকার করতে রাজি হচ্ছে না উন্নত দেশগুলো।
তবে এই জলবায়ু চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি ওপকে হোয়েকস্ট্রা। তিনি বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের নতুন যুগের সূচনা হিসেবে কপ-২৯ সম্মেলনকে বিশ্ব স্মরণে রাখবে।
অন্যদিকে চুক্তির সমালোচনা করে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার শিফট আফ্রিকার পরিচালক মোহামেদ আদোউ বলেছেন, ‘উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য এই কপ একটি বিপর্যয়। ধনী দেশগুলো— যারা জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি করে, তারাই পৃথিবী ও এর বাসিন্দাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’
ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র জোটের চেয়ার সেড্রিক শুস্টার বলেন, আমি যখন বলি যে আমাদের দ্বীপগুলো ডুবে যাচ্ছে, তখন আমি একটুও বাড়িয়ে বলি না! আপনি কীভাবে আশা করেন যে বাজে একটা চুক্তি নিয়ে আমি আমার দেশের নারী, পুরুষ আর শিশুদের কাছে ফিরে যাব?
এদিকে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের ওই অংককে ‘অতি নগণ্য’ আখ্যায়িত করে ভারতের প্রতিনিধি লীলা নন্দন বলেন, এটি আমরা মেনে নিতে পারি না... যে লক্ষ্য আমরা ঠিক করলাম, তাতে আমরা কোনোভাবেই সমাধানে পৌঁছাতে পারব না। বাঁচতে হলে আমাদের যা করা দরকার, তার ধারেকাছেও এ চুক্তি নয়।
সুইজারল্যান্ড, মালদ্বীপ, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, জীবাশ্ম জ্বালানির বৈশ্বিক ব্যবহার কমানোর বিষয়ে যে ভাষা চুক্তিতে ব্যবহার করা হয়েছে, তা এাকেবারেই দুর্বল।
শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, জীবাশ্ম জ্বালানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে ২০২৫ সালে পরবর্তী জলবায়ু সম্মেলনে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            