আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের হেরাত প্রদেশে আঘাত হানা শক্তিশালী ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ১৪ জন নিহত ও আরও ৭৮ জন আহত হয়েছেন।
ভূমিকম্পে বহু ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
শনিবার (৭ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাতে প্রদেশে ওই ভূমিকম্প আঘাত হানে।
ভূমিকম্পের পর পাঁচটি বড় ধরনের আফটারশক হয়েছে; যার কেন্দ্রস্থল ছিল ওই অঞ্চলের বৃহত্তম শহরের কাছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম প্রদেশ হেরাতের জনস্বাস্থ্য পরিচালক মোহাম্মদ তালেব শহিদ বলেছেন, কেন্দ্রীয় হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ১৪ জনের মরদেহ আনা হয়েছে। তবে এটি চূড়ান্ত পরিসংখ্যান নয়। অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, শনিবার আঘাত হানা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল হেরাত শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে। এই ভূমিকম্পের পর দেশটিতে ৫ দশমিক ৫, ৪ দশমিক ৭, ৬ দশমিক ৩, ৫ দশমিক ৯ ও ৪ দশমিক ৬ মাত্রার পাঁচটি শক্তিশালী আফটারশক অনুভূত হয়েছে।
ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, সকাল ১১টার দিকে ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সাথে সাথে হেরাতের বাসিন্দা ও দোকানদাররা ভবন থেকে রাস্তায় পালিয়ে যান। এ সময় হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছেন।
এএফপিকে হেরাতের বাসিন্দা বশির আহমদ (৪৫) বলেন, আমরা অফিসে ছিলাম। সেই সময় ভবন কেঁপে ওঠে। দেওয়ালের প্লাস্টার খুলে নিচে পড়ে যায় এবং দেওয়ালে ফাঁটল ধরেছে। ভবনের কিছু অংশ ধসে পড়েছে।
তিনি বলেন, মোবাইলের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় আমি পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারি নাই। আমি অত্যন্ত চিন্তিত এবং ভীত। এটা অত্যন্ত ভয়াবহ।
ফরাসি সংবাদ মাধ্যমকে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র মোল্লাহ জান সায়েক বলেছেন, হতাহতের ওই সংখ্যা ‘প্রাথমিক’। গ্রামীণ ও পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এখন পর্যন্ত আমরা ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিস্তারিত তথ্য পাইনি বলেও জানান তালেবানের এই কর্মকর্তা।
এক ঘণ্টারও অধিক সময় ধরে চলতে থাকা প্রথম ভূমিকম্প ও আফটারশকের পর হেরাতের বিস্তীর্ণ রাস্তায় অনেক নারী, শিশু ও পুরুষের ভিড় দেখা গেছে। ইউএসজিএসের প্রাথমিক তথ্য বলছে, আফগানিস্তানে এই ভূমিকম্পে শত শত মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হতাহত ও ব্যাপক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এই বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য আঞ্চলিক বা জাতীয় পর্যায়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
এর আগে, ইউএসজিএস জানায়, আফগানিস্তানে আঘাত হানা প্রথম ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ২। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে হেরাত শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার গভীরে।
হেরাতের পূর্বাঞ্চলে ১২০ কিলোমিটারের সীমান্ত রয়েছে ইরানের সাথে। এই শহরটিকে আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে মনে করা হয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, হেরাত প্রদেশের রাজধানী হেরাত শহরে ১৯ লাখ মানুষের বসবাস রয়েছে।
২০২২ সালের জুন মাসে আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার এক ভূমিকম্পে এক হাজারের অধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। গত কয়েক দশকের মধ্যে আফগানিস্তানে এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প বলে সেই সময় দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
চলতি ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় সাড়ে ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পে দুই দেশে অন্তত ১৩ জন নিহত হন।
হিন্দুকুশ পর্বতমালা ও ইউরেশীয়-ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছে অবস্থান হওয়ায় প্রায়ই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে আফগানিস্তান। সূত্র: এএফপি, রয়টার্স।
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            