অপেক্ষার প্রহর শেষে দেশের মাটিতে পা রাখলেন হামজা চৌধুরী। সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আজ সোমবার (১৭ মার্চ) সকাল থেকেই ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ‘ওয়েলকাম টু মাদারল্যান্ড হামজা’— এমন সব স্লোগানে মুখর ছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। তাদের সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাংলাদেশে পৌঁছেছেন ইংল্যান্ড প্রবাসী ফুটবলার হামজা চৌধুরী।
গত ডিসেম্বরেই ফিফা থেকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার ছাড়পত্র পেয়েছিলেন হামজা। এরপর থেকেই দেশের ফুটবল অঙ্গনে তাকে ঘিরে তৈরি হয় ব্যাপক উন্মাদনা। সেই উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ হয় যখন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ভারত ম্যাচের প্রাথমিক স্কোয়াডে রাখেন তাকে। এখন চূড়ান্ত দলে হামজার থাকা একপ্রকার নিশ্চিত।
ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে খেলে সরাসরি সিলেটের বিমানে ওঠেন হামজা। বাংলাদেশ সময় রাত দু’টায় বাংলাদেশ বিমানের ম্যানচেস্টার থেকে সিলেট ফ্লাইটে রওনা হন হামজা। দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট পৌঁছান তিনি। সেখান থেকে রওনা দেন নিজ গ্রামের উদ্দেশে— হবিগঞ্জের স্নানঘাটে।
হামজা ও তার পরিবারকে বরণ করে নিতে এয়ারপোর্টে বাফুফের সাত জন নির্বাহী সদস্য রয়েছেন। ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার পরপরই হামজাকে বরণ করে নেন বাফুফে কর্তারা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন হামজার বাবা মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী। হামজা আগেও বাংলাদেশে এসেছেন। তবে এবারের আসাটা বিশেষ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল দলের খেলোয়াড় হয়ে দেশে এসেছেন তিনি। স্মরণীয় এ সফরে তার সঙ্গী মা, স্ত্রী ও সন্তানেরা।
জানা যায়, বিমানবন্দরে হামজাকে অভ্যর্থনা জানান সিলেটের ক্রীড়ানুরাগী ও ক্ষুদে ফুটবলাররা। হামজার আগমন সামনে রেখে রবিবার সিলেট বিমানবন্দর সড়কসহ তার গ্রামের বাড়িতে একাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সিলেটে কোনো কর্মসূচি নেই, হবিগঞ্জের বাহুবলে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে হামজাকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তাকে এসকট করে নগরী পার করে দেওয়া হবে। একইভাবে জেলা পুলিশও সড়কে তার নিরাপত্তা দেবে।
হামজার আগমন ঘিরে নিজ গ্রাম স্নানঘাটসহ পুরো জেলায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সাজসাজ রব পড়েছে হামজার নিজ গ্রামেও। তাকে অভিনন্দন বার্তা জানিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। নিজ এলাকার কৃতী সন্তানকে বরণ করতে প্রস্তুত গ্রামবাসী।
শান্ত ও নম্র স্বভাবের হামজা খেলোয়াড়ি জীবনে যেমন ছড়িয়েছেন খ্যাতি, তেমনি গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছেও অত্যন্ত প্রিয়। তাই তো হামজাও দিচ্ছেন তাদের আস্থার প্রতিদান। গ্রামের বাড়ি স্নানঘাটে গড়ে তুলেছেন একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা। যেখানে পড়াশোনা করছে এতিম শিশুরা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রায় ১১ বছর পর দেশে আসছেন হামজা চৌধুরী।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ভাত-গরুর মাংস তার প্রিয় খাবার। দেশি সবজিও তার পছন্দের।
সফর আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের সন্তান দেশের জার্সি গায়ে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন, এটি আমাদের জন্য গৌরবের। তার আগমন ঘিরে আমরা উচ্ছ্বসিত, বিশেষ করে তরুণরা তাকে একনজর দেখার জন্য বিশেষ আগ্রহে বসে আছেন। হামজা যখন ছোট সময়ে বাড়িতে আসতেন, তখন আমিও তার সঙ্গে ফুটবল খেলেছি। ফুটবলের প্রতি ছোটবেলা থেকেই তার টান ছিল।’
শুধু হামজা নন, তার মতো আরও প্রবাসী ফুটবলারের বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেখতে চান হামজার বাবা দেওয়ান মুর্শেদ চৌধুরী।
মঙ্গলবার ঢাকায় আসতে পারেন হামজা। এরপর যোগ দেবেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হবে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা এই মিডফিল্ডারের। ২০ মার্চ বাংলাদেশ দল রওনা দেবে শিলংয়ের পথে, আর এর আগে ১৮ মার্চ কোচ কাবরেরা সংবাদ সম্মেলনে হাজির করবেন অধিনায়ক ও হামজাকে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            