সিঙ্গাপুর ম্যাচ শেষে কি অবসরে যাচ্ছেন জামাল ভূঁইয়া! মুদ্রার উল্টোপিঠ ইদানিং ভীষণভাবে দেখতে শুরু করেছেন জামাল ভূঁইয়া! ৩৫ বছর বয়সের ভারে ধার, গতি কিছুটা কমেছে বটে, কিন্তু ফুরিয়ে যাননি নিশ্চয়। কিন্তু ইদানিং প্রায়ই তাকে শুনতে হচ্ছে, নানা তীর্যক প্রশ্ন। কেউ কেউ তো জামালের শেষও দেখে ফেলেছেন! ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের ফাঁকে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক তাই হতাশা আড়াল করলেন না। বিষন্ন হাসিতে বললেন, বাঁকা প্রশ্নের সাথে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন!
২০১৯ সালের কথা। কলকাতার সল্টলেকে ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের তীর্যক প্রশ্নের উত্তর জামাল দিয়েছিলেন চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তা নিয়ে। বলেছিলেন, ‘‘কাল ভারতীয় সমর্থকদের হৃদয় ভেঙে দিতে চাই।” কথা রেখেছিলেন তিনি। তার দলও। ভারতকে ১-১ ড্রয়ে রুখে দিয়েছিল বাংলাদেশ। জামালের ফ্রি কিকেই সেদিন সাদ উদ্দিন হেডে দলকে নিয়েছিলেন এগিয়ে। জয়ের আশা জাগিয়েও শেষ দিকের গোল হজম করে ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল বাংলাদেশ।
কদিন আগে ভুটানের বিপক্ষে ২-০ গোলে জেতা প্রীতি ম্যাচেও ঝলক দেখালেন জামাল। দারুণ কর্নারে বল ফেললেন বক্সে, হামজা চৌধুরী একটু লাফিয়ে হেডে বল জড়িয়ে দিলেন জালে। এই ম্যাচের আগেও সেরা একাদশে থাকা, না থাকা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন জামাল। বল তিনি ঠেলে দিয়েছিলেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরার কোর্টে।
প্রশ্নগুলো ওঠার কারণও ছিল। গত মার্চে শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র ম্যাচে তাকে খেলাননি কাবরেরা। গত প্রিমিয়ার লিগে লম্বা প্রথম পর্বে চুক্তি সংক্রান্ত জটিলতায় ছিলেন মাঠের বাইরে। হামজার পর বর্তমান দলে শোমিত সোম যোগ হওয়ায় সেরা একাদশ নির্বাচন কঠিন হয়ে উঠেছে কোচের জন্য। খোদ কাবরেরই সিঙ্গাপুর ম্যাচ সামনে রেখে দল নির্বাচন নিয়ে বলেছেন, ‘মধুর যন্ত্রণায়’ থাকার কথা।
ভারত ম্যাচে ‘ব্রাত্য’ থাকা জামালকে কোচ পরীক্ষা করেন ভুটানের বিপক্ষে। প্রথমার্ধের পুরোটা মাঠে সরব উপস্থিতি ছিল তার। ষষ্ঠ মিনিটে হামজার গোলের সুর বেঁধে দিয়ে দলে নিজের প্রয়োজনীয়তার জানান তিনি দিয়েছেন। এ ম্যাচে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে খেলে কিছু সুযোগও পেলেন বটে, কিন্তু পারেননি কাজে লাগাতে। পুরোনো প্রশ্ন তাই নতুন করে উঠতে মাথাচাড়া দিয়েছে-সিঙ্গাপুর ম্যাচে কাবরেরার বিবেচনায় তিনি থাকবেন কিনা।
শনিবার ঈদ-উল-আযহার দিন। ডেনমার্কে বেড়ে ওঠা জামাল বাংলাদেশে থিতু হয়েছেন অনেকদিন। পরিবার-পরিজন ছাড়া ঢাকায় ঈদ করতে তাই আগের মতো বিষন্ন হয় না মন। তবে কিছু প্রশ্নে প্রফুল্লতা ধরে রাখা তার জন্য কঠিন হয়ে উঠছে দিনকে দিন! কেউ কেউ নাকি অবসরের প্রশ্নও করতে শুরু করেছে!
জামাল অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন রুঢ় বাস্তবতার সাথে। আলাপচারিতার এক ফাঁকে-ইদানিং প্রায়ই প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন, দলে জায়গা পাবেন কিনা… কথা শেষ না হতেই অধিনায়ক বিমর্ষ হাসি দিয়ে বললেন এর চেয়েও কঠিন ও বিব্রতকর প্রশ্নের মুখোমুখি ইদানিং হচ্ছেন তিনি।
“দেখেন আমি এখন এসব নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। মানুষ এখন আমাকে এ ধরনের কত প্রশ্ন করে! প্রতিটি দিন আমি এসব প্রশ্ন পাই। গতকালও একজন জিজ্ঞেস করল, ‘জামাল, শুনলাম, তুমি নাকি সিঙ্গাপুর ম্যাচের পর অবসর নিচ্ছ।’আমাকে ঘিরে এ ধরনের গুজবও আছে। ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উঠছে।”
পরের ছোট কথায় বরাবরের মতোই দৃঢ়চেতা জামাল। বুঝিয়ে দিলেন, আগামী মঙ্গলবার এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে নিজেকে আরও একবার উজাড় করে দিতে উন্মুখ হয়েই আছেন তিনি। “যেখানে কোচ আমাকে দেবেন, আমি সেখানে খেলব।”
আমারবাঙলা/ইউকে